‘রাজার নীতিই রাজনীতি’- এমন কথাটি আমরা কাল থেকে কালান্তরে শুনে আসলেও রাজনীতির গূঢ় অর্থ একেবারেই তা নয়। রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ভাষায়, রাজনীতি হচ্ছে একটি বহুমুখী শব্দ এবং তা দলীয় বা নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিষয়ক কর্মকান্ডের সমষ্টি। রাজনীতিতে বিভিন্ন ধরণের পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়- যা কেবল ইতিবাচকই নয়, ক্ষেত্রমতে নেতিবাচকও হয়ে থাকে। আধুনিক জাতি-রাষ্ট্রগুলোতে নিজস্ব মতামত তুলে ধরতে রাজনৈতিক সচেতন মানুষগুলোর হাতেই রাজনৈতিক দল গঠিত হয়ে আসছে। আবার কোন কোন দেশ-রাষ্ট্র বা জাতির গোড়াপত্তনে প্রাচীন-ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলগুলোই মূল ভূমিকা রেখেছে ও রেখে আসছে। সুতরাং নেতিবাচক অর্থে নয়, ইতিবাচক অর্থে রাজনীতির মৌলিক উদ্দেশ্যই হচ্ছে দেশ ও মানুষের কল্যাণ। অর্থাৎ দেশ ও মানুষের কল্যাণই রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য। আর তার ব্যত্যয় ঘটলে অর্থাৎ সেই উদ্দেশ্যকে জলাঞ্জলি দিয়ে রাজনীতিকরা দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতিতে জড়িয়ে নিজেদের ‘আখের গোছানোতে’ ব্যস্ত হয়ে পড়লে তা পরিণত হয় লুটপাটের রাজনীতি বা অপরাজনীতিতে।
আমাদের দেশে চলমান অবস্থায় রাজনীতির চেয়ে অপরাজনীতির চর্চাই বেশি লক্ষ্যণীয়। তাই রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন নির্ভর করে দলের মূল নিয়ন্ত্রক বা নীতি নির্ধারকের সদিচ্ছার উপর। যে কারণে কোন দলের মূল নিয়ন্ত্রকের সঠিক ভূমিকায় যেমন ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায়’ দেশ এগিয়ে যায়, আবার কোন দলের বিপরীত ভূমিকায় দেশ দফায় দফায় দুর্নীতিতে শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছে। তদুপরি আশার কথা, এখনও দেশে রাজনীতি রয়েছে বা সুষ্ঠু রাজনীতির চর্চা রয়েছে। সেই সাথে বিদ্যমান রাজনীতিতে রয়েছে সঠিক চর্চার রাজনীতিকও। প্রায় রাজনীতিকহীন রাজনীতির ময়দানে আমাদের শেরপুর অঞ্চলে এমনই এক মানুষ ছিলেন মোঃ খোরশেদুজ্জামান।
হ্যা, সদ্য প্রয়াত রাজনীতিক, জনপ্রতিনিধি মোঃ খোরশেদুজ্জামানের কথা বলছি। গত ৬ জুন হঠাৎ করেই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে আমাদের মাঝ থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন তিনি। জীবনের ৭৬ বছর অতিক্রম করলেও তার এ চলে যাওয়াটা বুড়িয়ে যাওয়া ছিল না। বরং তা ছিল অনেকটাই অসময়ে চলে যাওয়া। কারণ আপাদমস্তক এ রাজনীতিক যেমন ছিলেন সাহসী, তেমনই ছিলেন সত্যবাদী ও স্পষ্টভাষী। উপমহাদেশের সর্বাধিক প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী সংগঠন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে তিনি জীবন-যৌবনের দুই তৃতীয়াংশ সময় পার করেছেন একেবারেই সক্রিয়ভাবে। খোরশেদুজ্জামান তৃণমূল থেকেই তিলেতিলে উঠে এসেছিলেন এবং তখন থেকেই অত্যন্ত দক্ষতা, সাহসিকতা ও বিশ্বস্ততার সাথেই নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন অনেকটাই মহীরূহ হিসেবে। তিনি প্রথমে নিজ এলাকা শেরপুর সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ওইসময় তিনি নিজ ইউনিয়নের তৎকালীন রিলিফ চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। পরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং পরবর্তীতে সদর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সর্বশেষ সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তৎপর থেকে প্রয়াত এডভোকেট আব্দুস ছামাদ সভাপতি থাকাকালীন টানা ৩ মেয়াদে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। শেষ দফায় অর্থাৎ ১৯৯৬ সালে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রথম সরকার গঠন হলে ওই সময়কালে এডভোকেট আব্দুস ছামাদ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় মোঃ খোরশেদুজ্জামান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৫ বছর। আর হুইপ আতিউর রহমান আতিক (সভাপতি) ও এডভোকেট চন্দন কুমার পাল পিপি (সাধারণ সম্পাদক) এর নেতৃত্বাধীন দু’দফায় জেলা আওয়ামী লীগে সিনিয়র নির্বাহী সদস্য থাকার পাশাপাশি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে দু’দফায় জাতীয় পরিষদ সদস্য ছিলেন।
কিন্তু দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতিতে অভ্যস্ত অনেক হোমড়া-চোমড়াদের ক্ষেত্রে অকল্পনীয় উত্থান ও ক্ষমতার চেয়ার দখল হলেও রাজনৈতিক অবস্থান আর অভিজ্ঞতার আলোকে উপযুক্ত জনপ্রতিনিধির আসন খোরশেদুজ্জামানের ভাগ্যে জুটেনি। তদুপরি তিনি দলের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিজ ইউনিয়ন থেকে প্রথমবার বিপুল ভোটাধিক্যে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং পরে নানা ষড়যন্ত্রে স্বল্প ভোটে হারলেও পরের বার অর্থাৎ দ্বিতীয় দফায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ওই দায়িত্ব পালন করছিলেন।
বিশিষ্ট রাজনীতিক খোরশেদুজ্জামান মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিলেও এ অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাবেক গর্ভনর ও এমএনএ এডভোকেট আনিছুর রহমান, সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন আহম্মদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, সাবেক পৌরপতি এডভোকেট আব্দুস ছামাদ ও শিক্ষাবিদ মুহসিন আলী মাস্টারসহ অন্যদের সহযোগী ছিলেন। এছাড়া তিনি যুদ্ধোত্তর বাংলায় দলের অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের সময়কালে এবং প্রগতিশীল নানা আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন ওইসব সংগঠকদের সাথেই তথা প্রথম সারিতেই। বলাবাহুল্য, খোরশেদুজ্জামান ছিলেন আমাদের শেরপুর অঞ্চলে পরিচ্ছন্ন রাজনীতির দীক্ষক এডভোকেট আব্দুস ছামাদের অনুসারী ও তার আস্থাভাজন নেতা। তবে এডভোকেট আব্দুস ছামাদের সারির অন্যান্য সিনিয়র নেতাদের সাথেও তার মন্দ সম্পর্ক ছিল না। তিনি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের ৩ দফার সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত মোজাম্মেল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি এডভোকেট মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান, সদর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আমজাদ আলী মাস্টার, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক বিএসসি, জেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত মাজাহারুল হক হেলালদের সমসাময়িক কালের নেতা। তবে বর্তমানে আতিউর রহমান আতিক এমপি ও এডভোকেট চন্দন কুমার পালের নেতৃত্বে দলের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় নেতাদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সিনিয়র বা বয়োজ্যেষ্ঠ।
পরিচ্ছন্নতা ও চটপটে স্বভাব ছিল তার জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট। পোশাক-পরিচ্ছদসহ শারীরিক পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি তার চাল-চলন ও কথা-বার্তাতেও ছিল ভিন্নতা। কোন আসনে বসে থাকার ক্ষেত্রে ও সিগারেট ফুকার পাশাপাশি তার ছাই ফেলার ক্ষেত্রেও ছিল তার ব্যতিক্রম- যা স্থান পেত অনেক আলোচনাতেই। ঘরোয়া আলোচনার টেবিলে যেমন পাওয়া যেত তার অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ নেতৃত্ব গুণের প্রসারতা এবং সংক্ষিপ্ত হলেও গঠনমূলক কথাবার্তা ও সিদ্ধান্ত সহায়ক পরামর্শ, ঠিক তেমনই তার রাজনৈতিক বক্তব্যে পাওয়া যেত ইতিহাস-ঐতিহ্য, দর্শন এবং দলীয় নেতাদের পাশাপাশি সাধারণ জনতার করণীয়-পালনীয় সম্পর্কিত দিক-নির্দেশনা।
বলাবাহুল্য যে, তিনি ২০০৩ সালের সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে আতিউর রহমান আতিক এমপির একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। ওইসময় কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে তিনি হারলেও বিজয়ী আতিউর রহমান আতিক এমপির পাশাপাশি সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট চন্দন কুমার পালের সাথে তার প্রকাশ্য কোন রাজনৈতিক বিরোধ ছিল না। তবে নিজের স্বাধীনচেতা আর স্বভাব-সুলভ সাহসী অবস্থানের কারণে তাদের সাথে তার ততটা নিবিড় সম্পর্কও ছিল না। অর্থাৎ উভয় নেতার সাথে সম্পর্কটা ছিল নাতিশীতোষ্ণ। দলের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দেখা গেছে, প্রবীণ নেতা খোরশেদুজ্জামান প্রায় সময়ই দলের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে গঠনমূলক এবং ক্ষেত্র বিশেষে কঠিনভাবেও সমালোচনা করে বক্তব্য রাখতেন বা কথা বলতেন। কোন কোন সময় সভাপতি-সম্পাদকের সরাসরি সমালোচনাতেও কুণ্ঠাবোধ করতেন না। কিন্তু ওইসময়কালে সভাপতি বা সম্পাদক কোনভাবেই তার প্রতি রাগ-অনুরাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতেন না। বরং তার গঠনমূলক সমালোচনায় তার প্রতি শ্রদ্ধা ও সমীহ প্রকাশ করেই কথা বলতেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তার পরামর্শও গ্রহণ করতেন।
রাজনীতিক খোরশেদুজ্জামানের সাহসী অবস্থানের একটি উদাহরণ উল্লেখ না করে পারছি না। দিন, তারিখ মনে না থাকলেও সময়কালটা ছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন প্রথম দফা (১৯৯৬) সরকারের প্রায় এক/দেড় বছরের মাথায় শহরের মোবারকপুর আখের মামুদের বাজারে তৎকালে শহরের ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নিবন্ধকারের আহ্বানে আয়োজিত এক দলীয় সমাবেশে শেরপুর-১ (সদর) আসনের প্রথম দফায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য আতিউর রহমান আতিককে প্রধান অতিথি এবং শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে বিশেষ অতিথি করা হলেও শহরে নেতাদের কাছে ওই দাওয়াত পৌঁছাতে গিয়ে কিছুটা সমস্যা হয়। পরে ওই সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ খোরশেদুজ্জামানসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতারও আগমন ঘটে। তাদের নির্দেশনা ছিল, অতিথিদের মধ্যে দলীয় প্রধান হিসেবে সর্বশেষ বক্তব্য রাখবেন মোঃ খোরশেদুজ্জামান। সমাবেশের এক পর্যায়ে সাংসদ আতিকের বক্তব্যের সময় ঘনিয়ে এলে তিনি মঞ্চে উপস্থিত মোঃ খোরশেদুজ্জামানকে কিছুটা বিনয়ের সাথেই প্রথমে বক্তব্য রাখতে অনুরোধ করেন এবং এ কথাও বলেন যে, ‘এলাকার উন্নয়ন ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনতার উদ্দেশ্যে শেষ দিকেই বক্তব্য রাখতে চাই’। তার ওই কথায় খোরশেদুজ্জামান মঞ্চে প্রকাশ্যে চটে না গেলেও তাৎক্ষনিক যেন রাগে-ক্ষোভে কিছুটা ঘর্মাক্ত হয়ে উঠেন। ওইসময় তিনি এ কথা জানিয়ে দেন যে, ‘এটা হলেতো সাংগঠনিক প্রটোকল আর থাকল না। কোন দলীয় সভা সমাবেশে স্থানীয় এমপি না হয়ে দলের প্রধান (সভাপতি) ও সাধারণ সম্পাদকই গুরুত্ব পাবেন এবং এমপির পরই দলীয় প্রধান বক্তব্য রাখবে- এটাই সাংগঠনিক রীতিনীতি। আমাদেরকে এটা রক্ষা করতে হবে’। এরপর সাংসদ আতিক পরবর্তীতে বিষয়টি অনুসরণ করা হবে বলে জানালে তার মুখের দিকে তাকিয়ে সরাসরি বক্তৃতার ডায়াসে চলে যান খোরশেদুজ্জামান। সেদিন তার যে অবস্থান দেখা গেছে তা আমাদের পরিবর্তিত অবস্থার রাজনীতিতে কজনেরই বা আছে ?
রাজনীতিকের পাশাপাশি একজন সমাজসেবক ও জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজের এলাকা নানা সমস্যা বিশেষ করে আইনী সমস্যা বা মামলা-মোকদ্দমার বিষয়ে এ নিবন্ধকারের কাছেই ফোন দিতেন, কথা বলতেন। লোকজনকে পাঠাতেন। কোন কোন সময় ফোন দিয়ে সরাসরি চলে আসতেন চেম্বারে। আর সেই সুবাদে তার সাথে রাজনীতির বাইরেও অনেকটা ঘনিষ্ঠতাও গড়ে ওঠে। ওই অবস্থায় ব্যক্তিগত সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়েও কথা বলতেন, শেয়ার করতেন। বিশেষ করে মৃত্যুর কিছুদিন আগে স্থানীয় একটি মহলের চরম রোষানলে ও নানা কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ ছিলেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দুর্নীতির বেফাস অভিযোগ তুলে তাকে বিতর্কিত করতে একটি মহল তৎপর হয়ে ওঠে। ইত্যকার সমস্যা নিয়ে মৃত্যুর ৬/৭ দিন আগে দুপুরের দিকে নিজ পুত্র ইমরানুজ্জামান সজীবকে সাথে নিয়ে চেম্বারে চলে আসেন। এরপর চায়ের পাশাপাশি ইশারায় সহকারীকে দিয়ে সিগারেট আনিয়ে তাকে দিতেই তিনি তা ফেরত দিয়ে বলেন, ‘সিগারেটতো বাদ দিয়েছি, হার্টের সমস্যা দেখা দিয়াছে’। ফলে সেদিন আর তার ব্যতিক্রমী সিগারেট ফুকা দেখা হয়নি এবং এটাও বুঝে নিয়েছি যে, রাজনীতি ও জনপ্রতিনিধির ব্যস্ততম দায়িত্বের পাশাপাশি স্থানীয় মহল বিশেষের রোষানলে নিজের সম্মান-ইজ্জত রক্ষায় দুঃশ্চিন্তা তাকে পেয়ে বসেছে। অবশেষে তার এক সপ্তাহের মাথাতেই পাওয়া গেল তার বিয়োগাত্মক খবর। আর জানা গেল, মৃত্যুর আগের দিন বিকেল থেকে রাত অবধি এলাকায় দলীয় একটি সভায় তাকে সময় দিতে হয়েছে এবং সেখানেও ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে নানা কথা উঠানো হয়েছিল। ফলে প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে রাতেই শহরের চকপাঠকস্থ বাসায় ফিরলেও বেড়ে যায় বুকের ব্যথা এবং শেষ রাতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলেও ভোরের সূর্যালোক ছড়িয়ে পড়ার আগেই ওই হাসপাতালের বেডে ফুরিয়ে যায় তার নিঃশ্বাসসমেত এ জগতের সকল ব্যথা। রাজনীতির খাঁ-খাঁ ময়দান থেকে হারিয়ে যান তার মতো একজন যোগ্য নেতৃত্ব। হাজার-হাজার রাজনৈতিক সহকর্মী-যোদ্ধা আর ভক্ত-অনুরাগীসহ সচেতন মহলকে কাঁদিয়ে তাদের শ্রদ্ধা-ভালবাসায় সিক্ত হয়ে বিদায় নেন মায়াময় পৃথিবী থেকে। এলাকার যে মাটিতে জন্ম নিয়ে তার ধূলিকণার সাথে অস্তিত্বকে জুড়ে রেখেছিলেন- সেই মাটিতেই হলেন চিরনিদ্রায় শায়িত। তার এ চলে যাওয়া শেখ হাসিনার ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায়’ দেশ এগিয়ে যাওয়ার সুসময়ে হলেও বলা যায়, তা রাজনীতির অনেকটা দুঃসময়েই হয়েছে। সুতরাং তার মর্মত্তুদ বিয়োগের কষ্ট বুকে চেপে রেখে প্রকৃতির অমোঘনীতি মেনে নেয়া ছাড়া কি-ই আর বলার আছে ? স্যালুট লিডার খোরশেদুজ্জামান। ভালো থাকুন ওপারে।
(রাজনীতিক খোরশেদুজ্জামানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে লেখাটি পুন:প্রকাশিত)
লেখক : সাংবাদিক, আইনজীবী ও রাজনীতিক, শেরপুর।