রবিবার , ২৭ অক্টোবর ২০১৩ | ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

রূপসৌন্দর্যে অপরূপ লীলাভুমি বিলাইছড়ি

রফিকুল ইসলাম আধার , সম্পাদক
অক্টোবর ২৭, ২০১৩ ৩:৫৫ অপরাহ্ণ

BELAICHARI PIC-C (2)জসীম উদ্দিন তালুকদার, রাঙ্গামাটি : একঘেয়েমি, বিমর্ষতা ও শত কর্মব্যস্ততাকে ঝেড়ে মনকে সজীব ও সতেজ করতে যে কেউ সামান্য অবসরে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে কার না মন চায়। এরই প্রেক্ষাপটে অবকাশ যাপনের জন্য বিদেশের চেয়েও অনেক সুন্দর জায়গা রয়েছে আমাদের দেশে। সিলেটের জাফলং ও শুভলং এর চেয়েও অনেক সুন্দর জায়গা হল রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলা। এই উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দুর্লভ ছোটবড় অসংখ্য প্রাকৃতিক ঝর্ণা। পাহাড়, নদী, হ্রদ, জঙ্গল, পাহাড়ি ঝর্ণার রিনিঝিনি মনোমুগ্ধকর কলতান আর পাহাড়ি সংস্কৃতি মিলে অপূর্ব সুন্দর জায়গা হল বিলাইছড়ি। রূপ বৈচিত্র্যের নয়নাভিরাম ওই নৈসর্গিক বিলাইছড়িতে বেড়াতে আসার জন্য চট্রগ্রাম থেকে সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু অনেক আগে থেকেই ফোনে আমার সাথে যোগাযোগ করছিলেন। ফোনে তিনি আমাকে জানালেন কয়েকজন সাংবাদিক ঈদুল আজহার পর বিলাইছড়িতে বেড়াতে আসবেন। কথা অনুযায়ী মঞ্জু ভাইসহ ৪ জন চট্রগ্রাম থেকে সকালে রওয়ানা হয়ে কাপ্তাই এসে ওখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে দুপুরে বিলাইছড়ি পৌঁছেন। মঞ্জু ভাই, মেজবা ভাই, রুবেল দাশ ও পলাশ ওরা ৪ জন নৌকা থেকে নামার পর আমার সঙ্গে দেখা হলে উনাদেরকে বাসায় নিয়ে যাই। বাসায় গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে তাদের সঙ্গে নিয়ে নকাবাছড়া ঝর্ণা দেখার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। নলছড়ি ঘাট থেকে একটি ইঞ্জিন বোটে করে বাঙ্গালকাটা নামক স্থানে এসে ওখান থেকে পায়ে হেঁটে বিলাইছড়ি ডেবার মাথায় যাই। ওখান থেকে স্থানীয় শিক্ষক তপন চাকমাকে সঙ্গে নিয়ে নকাবাছড়া ঝর্ণার উদ্দেশ্যে হাঁটতে থাকি। পথে আঁকা-বাঁকা সর্পিল পাহাড়ি ছড়া। ছড়ার পানি ও মেঠোপথ অতিক্রম করে ধানক্ষেতের পাশ দিয়ে আমরা হেঁটে যাচ্ছি। অনেকদূর হাঁটার পর নকাবাছড়া ছড়ার মুখ থেকে বিশাল পাথরের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে হল। মনে হল যেন পাথরের গুহার ভিতরে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। সেখানে বিশাল পাথর আর পানির উপর  হাঁটা আরেক রোমাঞ্চকর ও রহস্যময় অনুভূতি। হাঁটার পথে নিচের দিকে খেয়াল রাখতে হয়। উঁচু স্থানে পিচ্ছিল পাথরে হাঁটা বিপদের সম্ভাবনা থাকে। সতর্কতার সাথে হাঁটা সত্ত্বেও দু’বার হোঁচট খেয়ে ছড়ায় পড়ে যান মেজবা ভাই। ওখানে ঝর্ণার রিনিঝিনি ও কলতানে অনিন্দ্য সুন্দর এক আবেশে আমাদের হৃদয় মন ছেয়ে গিয়েছিল। সামনের দিকে এগুতে দেখলাম বড় বড় মাকড়সার জাল। ওইসব অতিক্রম করে আমরা নকাবাছড়া ঝর্ণায় এসে পৌঁছি। পাহাড়ের ছড়া থেকে গড়িয়ে এসে প্রবল তোড়ে পানি ভেসে যাবার দৃশ্য সত্যিই অনুপম, যা ছুতে মন চায় বারবার। মেজবা ভাই ও মঞ্জু ভাই বলছিলেন সিলেটের জাফলং ও শুভলং এর চেয়েও এ ঝর্ণা অনেক সুন্দর। আমরা সুন্দর নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে ছবি তুলতে থাকি। ঝর্ণায় কিছুক্ষণ থাকার পর কিভাবে ফিরব এ নিয়ে প্রত্যেকেরই দুশ্চিন্তা। কিন্তু তপনদা সঙ্গে থাকায় আমি কোন চিন্তা করিনি। পরে তপনদা বিকল্প রাস্তায় জঙ্গল পরিষ্কার করে আমাদেরকে ঝর্ণা থেকে নিয়ে যান। উনি ডেবার মাথায় আমাদেরকে আপ্যায়ন করানোর পর আমরা বাঙ্গালকাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিছু সময় অবস্থান করে নৌকায় বিলাইছড়ি ফিরে আসি। এরপর সবাই বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নিই। সন্ধ্যায় চাঁদের আলোয় বেড়ানোর জন্য সকলে ইচ্ছা প্রকাশ করলে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা রাস্তা অতিক্রম করে ধুপ্যাচর ও দীঘলছড়ি ব্রীজে যাই। সেখানে চাঁদের আলোয় আমরা পাহাড় ও হ্রদের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য উপভোগ করি। এরপর সবাই মিলে দীঘলছড়ি বৌদ্ধ বিহারে গিয়ে বিহার ও অনাথ আশ্রমের অধ্যক্ষ আর্য্যরতœ মহাথের এর সাথে দেখা করি। ওখানে বিলাইছড়ি মডেল হাই স্কুলের শিক্ষক কিরণ বিকাশ চাকমা আমাদের সঙ্গে এসে যোগ দেন এবং অনাথ আশ্রমের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। অনেকক্ষণ ওখানে থাকার পর অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে বাসায় ফিরি। পরদিন পাংখোপাড়ায় বেড়ানোর সিদ্ধান্ত নিই। স্থানীয় সাংবাদিক সুব্রত দেওয়ান ফোনে আমাকে অতিথিদের নিয়ে গাছকাটাছড়া চাদেরীছড়া ঝর্ণায় বেড়ানোর আমন্ত্রণ জানান। স্পটটি একটি চমৎকার দর্শনীয় স্থান বলে সুব্রত জানায়। আমি তাকে পরদিন সকালে পাংখোপাড়া থেকে ফিরে দুপুরে চাদেরীছড়া ঝর্ণায় যাব বলে জানিয়ে দিই। পরদিন সকালের নাস্তা খাবার পর ৪জন অতিথি, সুব্রত ও কুতুবদিয়া মৌজার হেডম্যান সাধন চাকমা আর মন্টু চাকমাকে সঙ্গে নিযে ইঞ্জিন বোটে করে পাংখোপাড়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিই্। আঁকা-বাঁকা নদী, কাশবন, পাহাড় ও সবুজের øিগ্ধতা অতিক্রম করে আমাদের বোটটি সোয়া এক ঘন্টা সময়ে পাংখোপাড়ায় গিয়ে পৌঁছে। বোট থেকে নদীর তীরে উঠতেই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লাল এ্যাংলিয়ানা সাহেবের ছেলে  রবীন পাংখোয়া আমাদের অভ্যর্থনা জানিয়ে রেস্ট হাউজে নিয়ে গিয়ে আমাদের আপ্যায়ন করেন। এরপর সাবেক রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ সদস্য ত্লোয়াং বাবু ও ইউপি সদস্য নিলাই পাংখোয়া আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে এনজিও কার্যক্রমসহ গির্জা ও পাড়া ঘুরিয়ে দেখান। পাংখোপাড়া বেড়িয়ে আমরা বোটে করে চলে আসি বহলতলী এলাকার বিপরীতে কুতুবদিয়া মৌজার একটি পাহাড়ে। ওখানে নিচু পাহাড়ি পথ হেঁটে আমরা ক্রমে পাহাড়  চূড়ায় উঠতে থাকি। তখন দুপুরের প্রখর রোদ। খাড়া পাহাড় উঠতে গিয়ে ঘামে শার্ট ভিজে প্রত্যেকেই ক্লান্ত। মঞ্জু ভাই, মেজবা ভাই, রুবেল ও পলাশ আর যেন হাঁটতে পারছিল না। আমি এই পাহাড়ে আগে কখনো আসিনি। যখন পাহাড়ের চূড়ায় আসলাম, তখন দূরের পাহাড়গুলোকে দেখে মনে হল ওসব যেন পাহাড়ের দালান আর নিচে লেককে দেখাচ্ছিল নান্দনিক। সেই সময়ে উপরে আকাশকে মনে হল যেন একটি রঙ্গিন ছাতা। যদিও অনেক কষ্ট করে BELAICHARI PIC-C(3)পাহাড় চূড়ায় উঠেছি তবুও এসব নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে পাওয়ায় আসার কষ্ট অনুভব করিনি কেউ। পাহাড় চূড়া থেকে আমরা আবার বিপরীত দিকে পাহাড়ের উপত্যকায় নেমে এলাম। ওখানে ছড়া পার হয়ে চলে এলাম জয়সিন্ধু চাকমার বাড়িতে। সেখানে বাতাসের একটু হিমেল পরশে মন জুড়িয়ে নিলাম। সবাই মিলে জয়সিন্ধুর বাড়িতে দুপরের খাবার খাই। ওদের আতিথেয়তায় আমরা সকলে মুগ্ধ। ভাত খাবার পরই আমরা চাদেরী ছড়া ঝর্ণা দেখার জন্য আঁকা-বাকা ছড়া ও ধানক্ষেতের পাশ দিয়ে হেঁটে চললাম। স্থানীয় তরুণ-তরুণীর একটি দলও আমাদের সাথে হেঁটে ঝর্ণার দিকে রওয়ানা হয়। অনেকক্ষণ হাঁটার পর আমরা চাদেরীছড়া ঝর্ণায় পৌঁছলাম। সেখানে দেখতে পাই বি¯তৃত আকারে পাথর চাদরের ন্যায় খাড়া স্থান ঢেকে রয়েছে আর ওপর থেকে ওই পাথরের উপর দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। তখন পাথরের ঢালু অংশসহ ওই স্থানকে চমৎকার দেখাচ্ছিল। পাহাড়ি তরুণ তরুণী ও ছোট ছেলে মেয়েরা অনায়াসে ঢালু পাথর অতিক্রম করে হাঁটতে লাগল। তারা প্রকৃতির øিগ্ধতায আমাদের পেয়ে আনন্দিত হয়ে ছবি তুলতে লাগল। জয়সিন্ধু বলল এটির চেয়ে আরও দু’টি ঝর্ণা রয়েছে ভিতরে। ওই ঝর্ণা দেখতে পাহাড়ের উপর দিয়ে হেঁটে ভিতরের দিকে যেতে হবে। সঙ্গে থাকা স্থানীয় লোকজন ও তরুণ-তরুণীরা আমাদের নিয়ে ঝর্ণায় যাবার পথে হাঁটতে লাগল। কিছুদূর হাঁটার পর মঞ্জু ভাই, রুবেল ও পলাশ আর হাঁটতে না পারায় উনাদের পথে বসিয়ে রেখে আমি ও মেজবা ভাই অন্যান্যদের সঙ্গে নিয়ে চাদেরীছড়ার ভিতরের ঝর্ণায় যাই। সেখানে দেখতে পেলাম কয়েকশত ফুট উঁচু থেকে দু’দিকে বেঁকে দু’টি ঝর্ণা ঊষর বুকে বৃষ্টিধারা হয়ে ঝরছে। যেন যৌবনের প্রাণবন্যায় উচ্ছ্বসিত হয়ে প্রকৃতির নিসর্গে শ্যামল বরণ সাজে ঝর্ণা নিজেকে মেলে ধরতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। এসময় ঝর্ণার ছন্দ মুখরিত কলতানে øিগ্ধরূপে কুহু-কেকার আনন্দ ধ্বনি ও নাম না জানা ফুলের সুবাসে বনভূমি মাতাল হয়ে উঠেছিল। তখন প্রকৃতি অনির্বচনীয় শোভায় মনের মাধুরী মিশিয়ে সযতেœ নিজেকে মায়াবিনী সাজিয়ে তোলেছিল। আমাদের দেশের এত রূপ, এত ঐশ্বর্য আর কোথাও আছে কী ? যারা অবকাশ যাপনের জন্য দেশের বাইরে যায় তাদের কী এত সৌন্দর্য্য উপভোগ করা কখনো সম্ভব হয়েছে ? এসব ভাবতেই মনে পড়ল ‘সার্থক জন্ম আমার-জন্মেছি এদেশে। সার্থক জনম মাগো তোমায় ভালবেসে।’ অতিথিগণ চট্রগ্রাম চলে যাবেন। তাই এমন সুন্দর জায়গা ছেড়ে আমরা জয়সিন্ধুর বাড়িতে চলে আসি। ওদের সাথে কুশল বিনিময়, ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও ছবি তোলে পায়ে হেঁটে গাছকাটাছড়ায় বোটে উঠি। তখন গোধূলিলগ্ন। সূর্য রক্তিম আভা ছড়িয়ে দিগন্ত থেকে দিগন্তে বি¯তৃত হয়ে পড়েছে। লেকের জলে আমাদের বোট চলছিল। লেকের ঊর্মিমুখর জলরাশিতে সেই রক্তরাগ অপূর্ব দৃশ্যপট রচনা করেছিল। মনে হল কে যেন নদীর বুকে রাশি রাশি সোনা ছড়িয়ে দিয়েছে। বোটটি গাছকাটাছড়া ফরেস্ট অফিসে এসে পৌঁছুলে আমি,সুব্রত,সাধন হেডম্যান ও মন্টু বোট থেকে নেমে অপর একটি বোটে উঠি এবং আমতলী এলাকায় ওদেরকে বোট থেকে নামিয়ে দিয়ে আমি বিলাইছড়ি চলে আসি। অপরদিকে ওই বোটটিতে করে মঞ্জু ভাইসহ অতিথি ৪জন কাপ্তাই যায় আর ওখান থেকে তাঁরা গাড়ি নিয়ে রাত ১০টায় চট্রগ্রাম গিয়ে পৌঁছে। গাছকাটাছড়া ফরেস্ট অফিস থেকে খোলা একটি বোটে যখন আমি বিলাইছড়ির দিকে আসছিলাম তখন ভরা পূর্ণিমায় চাঁদের রূপালি আলো মিলিয়ে গিয়েছিল দিগন্তের দিকে। পূর্ণিমার আলোয় প্রকৃতি হয়েছিল রূপসী,পূর্ণ যৌবনবতী। বৌদ্ধ বিহার থেকে সেই সময় সারি সারি ফানুস উড়ছিল আকাশের দিকে। আকাশ জুড়ে ছিল আলোর বন্যা। সারা আকাশ ছেয়ে গিয়েছিল উড়ন্ত ফানুস বাতিতে। ফানুসের দীপ্ত আলোয় আকাশ হয়ে উঠেছিল রঙিন ও বর্ণিল।

Shamol Bangla Ads

লেখক : সাংবাদিক, বিলাইছড়ি, রাঙ্গামাটি।

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

error: কপি হবে না!