মো.মহসিন মাতুব্বর, আমতলী (বরগুনা) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি যে কোন অবস্থা মোকাবেলা করতে জানেন। বিএনপি’র ৪৮ ঘন্টার দেশ ছাড়ার আলটিমেটাম প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতেই বিএনপি হরতালের নামে মানুষ হত্যা করছে। জামাত শিবির হেফাজতকে সাথে নিয়ে তারা কোরআন শরীফ পুড়িয়েছে, মসজিদে আগুন দিয়েছে। মানুষের ভাগ্য নিয়ে ওদের ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবেনা। তিনি ১৯ নভেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে বরগুনা জেলার নবগঠিত তালতলী উপজেলার তালতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় আওয়ামীলীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় ওই কথা বলেন।
তিনি বলেন, ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ অবহেলিত দক্ষিনাঞ্চলের উন্নয়ন করে প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেছে। দক্ষিনাঞ্চলের কৃষি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আবার ক্ষমতায় গেলে দক্ষিনাঞ্চলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র, জাহাজ নির্মান ও জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প গড়ে তোলা হবে।
দেশে চলমান জেএসসি ও পিএসসি পরীক্ষার মধ্যে হরতাল দেয়ায় বিরোধী দলের সমালোচনায় তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ম্যাট্রিক পরীক্ষায় শুধু অংকে এবং উর্দু বিষয়ে পাশ করে বাকী বিষয়ে ফেল করেছিলেন। তাই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা পাশ তার পছন্দের নয়। বিএনপি নেত্রীর জন্মস্থান বাংলাদেশে নয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন খালেদা জিয়ার দেশের প্রতি মমতা নেই। তিনি দূনীর্তিবাজ, অর্থপাচারকারী তৈরী করছেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করাসহ শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়নে তার সরকার ভূমিকা রাখছে।
শেখ হাসিনা বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে আলোচনা করার জন্য বিরোধী দলীয় নেত্রীকে গণভবনে আমন্ত্রন জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি আলোচনায় না এসে রাজপথে গাড়ি ভাংচুর করে আর আগুনে পুড়িয়ে মানুষ খুন করে চলছেন রিরোধী দলীয় নেত্রী। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আর কত মানুষের রক্ত হলে বিএনপি নেত্রীর পিপাসা মিটবে?
তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ফজলুল হক জোমাদ্দারের সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শমভু, সাংসদ অধ্যাপক এথিন রাখাইন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক অ্যাড. আফজাল হোসেন, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক ইসহাক আলী খান পাননা, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সভা পরিচালনা করে জেলা আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু।
প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টার যোগে মঙ্গলবার বেলা পৌনে ৪ টায় বরগুনার তালতলীতে যান। সেখানে তিনি বরগুনা জেলা সার্ভার স্টেশন নির্মান, বরগুনা সরকারি মহিলা কলেজের ৪ তলা একাডেমিক ভবন নির্মান, বরগুনার তালতলী উপজেলার দক্ষিণ ঝাড়াখালী ৩ তলা এস.ই.এস.ডিপি নতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্মান, ট্যাংরাগিড়ি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ইকো-টুরিজম সুযোগ বৃদ্ধিকরণ কাজের উদ্বোধন করবেন। পাশাপাশি নবসৃষ্ট তালতলী উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন, বরগুনা সদর হাসপাতালকে ৫০ শয্যা হতে ২শ ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, বরগুনা জেলা কারিগরী প্রশিক্ষন কেন্দ্র, বরগুনার আমতলী থানা ভবন, গোলবুনিয়া প্রতিরক্ষামুলক কাজ, ইসিআরআরপি এর আওতায় দক্ষিন সওদাগর পাড়া রেজি. প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম বহুমূখী সাইক্লোন সেল্টার, আমতলী উপজেলার লোচা রেজি. প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম বহুমূখী সাইক্লোন সেল্টার, আমতলী চৌরাস্তা বক্স কালভার্ট নির্মান, বরগুনা-তালতলী-সোনাকাটা সড়কের নির্মান এবং আমতলী-তালতলী-সোনাকাটা সড়কের ৮ হাজার ২শ মিটার চেইনেজে ৬৬ মিটার গর্ডার ব্রীজ নির্মান কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্যে তালতলীর রাখাইন শিল্পিরা রাখাইন রথ নৃত্য পরিবেশন করেন। জনসভা শেষে বিকেল বিকেল সাড়ে পৌনে ৫ টায় প্রধানমন্ত্রী ঢাকার উদ্দেশ্যে তালতলী ত্যাগ করেন ।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনে তৎকালিন বরগুনা-৩ আসনে (আমতলী উপজেলা ও তালতলী থানা) নির্বাচন করে জয়ী হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে নবম জাতীয় নির্বাচনে তার দল ক্ষমতায় আসার পর তালতলীকে উপজেলায় উন্নীত করেন তিনি।