মাহফুজার রহমান মনু : কুড়িগ্রামের রাজারহাটে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গ্রামীন বধূদের পছন্দের উরুন-গাইনের ঢুং-ঢাং শব্দ আর শোনা যায় না। কালের বিবর্তনে এখন এটি বিলুপ্তি প্রায়।
আজ থেকে ১৫-২০ বছর পূর্বেকার কথা গ্রামীণ জনপদে গৃহবধূরা উরুন-গাইন-এর মাধ্যমে ধান ভাংতো, চালের আঠা বানিয়ে নানান ধরনের পিঠা-পুলি বানাতো। এখন ওইসব গ্রামীণ জনপদে আর দেখা মিলছে না উরুন-গাইনের। এখনকার প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা আর কিছুদিন পর উরুন-গাইন কি জিনিস এবং এটা দিয়ে কি কাজ হতো তা জানবে না বলে একাধিক প্রবীন মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। আগে গ্রামের মানুষেরা বড় বড় গাছ-পালা কাটার পর চিন্তা করতো ওই গাছের মুড়াটা তুলে একটা ভালো মানের উরুন বানাতো এবং ভালো শক্ত সোজা ডাল থেকে একটা গাইন তৈরী করতো। আজ আর এসব চোখে পড়ে না।
সদর ইউপি’র বোতলার পাড় গ্রামের গৃহবধূ মালেকা বেগম (৪৮) ও বৃদ্ধা মরিয়ম বেগম (৫৫) এর কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, হামার গুলার যখন বিয়ে-সাদী হয় তখন বাপের বাড়ী থেকে স্বামীর বাড়িতে উরুন-গাইন দেয়া হতো এবং ওইগুলো দিয়ে হামরা ধান ভাঙ্গিয়ে চাউল এবং চাউলের আঠা বানিয়ে পিঠা-পুলি তৈয়ার করেছি। আর এখনকার গ্রামীণ বউ-ঝিঁরা ধান ভাংগাতো দূরের কথা চাউলের আঠা তৈয়ার করার জন্য কারেন-এর মেশিনে নিয়া যায়। পুনকর গ্রামের গৃহবধূ পারুল পারভীন (২৪) বলেন, উরুন-গাইনের আর এখন প্রয়োজন হয় না। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন সবকিছু বিদ্যুতের সাহায্যে চালিত মেশিনে পাওয়া যায়। তাই উরুন-গাইনের প্রয়োজন নেই। শীত মওসুম এবং পার্বনগুলোতে দিন-রাতে গ্রামীণ বধূদের উরুন-গাইন-এর ঢুং-ঢাং শব্দ এখন আর নেই বললেই চলে। সবমিলিয়ে গ্রাম বাংলার সেই ঐতিহ্যবাহী উরুন-গাইন এখন বিলুপ্তির পথে।