ইয়ানুর রহমান : ফুলের সাম্রাজ্য হিসেবে পরিচিত যশোরের গদখালি এখন ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে। বসন্ত বরণ, ভালবাসা দিবস আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে এই অঞ্চলের ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীদের ব্যবসা এখন জমজমাট। গত দু’দিনে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা প্রায় ৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেছেন।
বৃহস্পতিবার বসন্ত বরণ ও শুক্রবার ভালবাসা দিবস উপলক্ষে ফুলের এ বেচাকেনা হয়। পহেলা ফাগুন ও ভালবাসা দিবস উপলক্ষে গদখালিতে সব ফুলের দাম এখনই দ্বিগুণ আকার ধারণ করেছে।
যশোরের সদর, ঝিকরগাছা, শার্শা, মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার ৬০টি গ্রামে বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ করছেন কৃষকরা। এসব এলাকায় রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, জিপসি, ডালিয়া, চন্দ্রমলিকা, ক্যালেন্ডোলা, লিলিয়ামসহ নানা জাতের ফুলের চাষ হচ্ছে। তবে ফুল চাষের বিপ্লব ঘটেছে ঝিকরগাছা এলাকার গদখালীতে। গদখালী এলাকায় এখন প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হচ্ছে। আর এ ফুল চাষের সঙ্গে সরাসরি জড়িত প্রায় ৫ হাজার কৃষক।
ফুল চাষিরা জানান, প্রতিদিন এ অঞ্চলের শত শত কৃষক তাদের উৎপাদিত ফুল বিক্রির জন্য গদখালি পাইকারি বাজারে নিয়ে আসেন। ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা এ ফুল ক্রয় করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহীসহ সড়ক পথে দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করছেন। কৃষকদের উৎপাদিত ফুল এ অঞ্চলের প্রায় ৫শ’ ফুল ব্যবসায়ী খুচরা ও পাইকারিভাবে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ বিভিন্নস্থানে ফুল সরবরাহ করেন।
বসন্ত উৎসব ও ভালবাসা দিবসকে সামনে রেখে আরও দু’দিন আগে থেকে গদখালী এলাকায় ফুল বেচাকেনা জমে উঠে। সারাদেশের ব্যবসায়ীরা ছোটেন গদখালী ফুল বাজারে। বাড়তি চাহিদার কারণে দামও বেড়ে গেছে ফুলের। প্রায় সব রকমের ফুলই এখন দ্বিগুণ দামে বিকোচ্ছেন ব্যবসায়ী ও ফুল চাষিরা।
বুধবার গদখালি বাজার সূত্রে জানা গেছে, রজনীগন্ধা স্টিক ৫ টাকা, গোলাপ ৯/১০ টাকা, গ্লাডিওলাস কালারভেদে ৫ থেকে ১৫ টাকা, জারবেরা ১৫ থেকে ২৫ টাকা এবং দেড়শ’ থেকে ২শ’ টাকা এক হাজার গাঁদাফুল বিক্রি হচ্ছে। অথচ দু’দিন আগেও এসব ফুলের দাম অর্ধেকে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া প্রতি একশ’ পিস ক্যালেন্ডোলা দেড়শ’ টাকা ও রকস্টিক ২শ’ টাক করে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে বাড়তি দরের হাওয়া লাগলেও তা গায়ে মাখছেন না ব্যবসায়ীরা। ফুল কেনাবেচায় এর প্রভাব পড়েনি। বরং সারাদেশের ব্যবসায়ীরাই ফুল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন নিজ গন্তব্যে।
গদখালি এলাকার হাড়িয়া গ্রামের ফুল চাষি শাহজাহান আলী জানান, বাজারে ফুলের বেচাকেনা বেশ ভালো। গত দু’দিনে তিনি দু’লাখ টাকার জারবেরা ও গ্লাডিওলাস বিক্রি করেছেন।
কাগমারি গ্রামের ফুল চাষি রকিবুর রহমান জানান, তিনি গ্লাডিওলাস বিক্রি করেছেন দেড় লাখ টাকার। সৈয়দপাড়ার রমজান আলী ৪০ হাজার টাকার গোলাপ ফুল বিক্রি করেছেন। তার মতে, এবার বাজার ভালো। বেচাকেনাতেও তারা খুশি। শুধু শাহজাহান কিম্বা রমজান আলী নন, গদখালি এলাকার প্রায় ৫শ’ ফুল চাষির সকলেই কমবেশি ফুল বিক্রি করেছেন গত দু’দিনের বাজারে। আর সবমিলিয়ে এ দু’দিন ফুল বেচাকেনা হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকার।
গদখালি ফুল চাষী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম জানান, বসন্ত বরণ ও ভালবাসা দিবসকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে বাজার জমে উঠেছে। যশোরে গদখালি থেকে দেশের ৫৪টি জেলায় ফুল সরবরাহ করা হচ্ছে। এবার দাম এবং বেচাকেনা দুটোই ভাল হওয়ায় ফুল চাষিরা খুশি।
যশোর শহরের গাড়িখানা রোডের সেন্ট্রাল ফুল ঘরের সত্ত¡াধিকারী রফিকুল ইসলাম জানান, ফুলের দাম বাড়লেও এর কোনো প্রভাব পড়ছেনা বিক্রির ক্ষেত্রে। আজ ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে আমাদের প্রায় ২ লাখ টাকার ফুল বিক্রি হবে।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উপপরিচালক শেখ হেমায়েত হোসেন জানান, এ বছর গতখালিতে ১৫শ’ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুলের ফলন ভাল হয়েছে। এছাড়া এই অঞ্চলের অনেক কৃষক বাইরে থেকে ফুল চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন। সবমিলিয়ে সচেতন হওয়ায় ফুলের আবাদের কৃষকরা অধিক লাভবান হচ্ছেন।