ঝিনাইগাতী (শেরপুর) প্রতিনিধি : ব্রিকফিল্ড অধ্যূষিত অঞ্চল শেরপুরে ইট পোড়ানোর মৌসুমকে সামনে রেখে গারো পাহাড়ের ঝিনাইগাতী এলাকায় শুরু হয়েছে বৃক্ষ লুটপাটের মহোৎসব। গারো পাহাড় এলাকায় কর্তৃপক্ষের যোগসাজসে স্থানীয় কাঠচোর সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রতিদিন সামাজিক ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে নির্বিচারে বৃক্ষ লুটপাট করছে। এ বিষয়ে অনেকটাই নীরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে বনবিভাগ।
জানা যায়, কাঠচোর সিন্ডিকেটের সদস্যরা গারো পাহাড় থেকে কাঠ কাটার পর ঠেলা, ভ্যান ও ঘোড়ার গাড়ীযোগে ওইসব কাঠ লোকালয়ে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে স্তুপ করে রাখছে। পরে সুযোগ বুঝে ট্রাক ও ট্রলিসহ বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবাধে সেগুলো পাচার করা হচ্ছে। এভাবে রাংটিয়া রেঞ্জের গজনী, তাওয়াকুচা ও রাংটিয়া বনাঞ্চল থেকে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন হয়ে আসছে। বর্তমানে প্রায় প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা মূল্যের শাল গজারীসহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ লুটপাট হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, কাঠচোর সিন্ডিকেটের সদস্যরা বন-বিভাগের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজসে গারো পাহাড় থেকে বৃক্ষ লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানায়, গারো পাহাড়ে ৩ শ্রেণীর কাঠ পাচারকারী চক্র রয়েছে। প্রথম শ্রেণীর কাঠচোর সিন্ডিকেটের সদস্যরা রাতে কাঠ কেটে নিয়ে যাবার পর দ্বিতীয় শ্রেণীর কাঠচোর চক্র গাছের ডালপালাগুলো নিয়ে যাচ্ছে এবং তৃতীয় শ্রেণীর কাঠচোর সিন্ডিকেটের সদস্যরা দিনের বেলায় ওইসব গাছের গুড়িগুলো উপড়ে ফেলে নিয়ে যাচ্ছে। যাতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বনে তদন্তে এসে গাছ কাটার কোন আলামত খুজে না পান। সরেজমিনে বনাঞ্চল ঘুরে ওইসব দৃশ্য প্রত্যক্ষ করা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, কাঠচোর সিন্ডিকেটের সদস্যরা ওইসব চোরাই কাঠ পাচারের ক্ষেত্রে নিলামের কাঠ দেখিয়ে বন কর্মকর্তার কাছ থেকে অবৈধভাবে ছাড়পত্র নিয়ে তা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে আসছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও জেলা সদরের কেবল পৌর শহরেই থাকা প্রায় ২৫ টি ইটভাটাতে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার শুরু হয়েছে। ওইসব জ্বালানি কাঠের সিংহভাগ সংগ্রহ করা হচ্ছে গারো পাহাড়ের বনাঞ্চল থেকে। গারো পাহাড়ের বাকাকুড়া, গান্ধিগাও, হালচাটি, ডেফলাই, পানবর ও ঝিনাইগাতী সদরসহ বিভিন্ন স্থানে পাল্লা ঝুলিয়ে ওইসব চোরাই কাঠ অবাধে কেনাবেচা হচ্ছে। গারো পাহাড়ের ওইসব বৃক্ষ লুটপাটের ব্যাপারে বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় লেখালেখিও হয়েছে। বিভিন্ন সময় তা বিভাগীয়ভাবে তা তদন্তও হয়েছে। কিন্তু সুষ্ঠু তদন্তের অভাবে সঠিকতা যাচাই সম্ভব হয়নি। ফলে গারো পাহাড়ে দিন দিন বৃক্ষ নিধন বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশের ভারসাম্য মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ছে অন্য দিকে, গারো পাহাড় থেকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণের রাজস্ব আয় থেকে।
এ ব্যাপারে রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা জামিল মোহাম্মেদ খানের সাথে কথা হলে তিনি কাঠ চুরির সাথে বর বিভাগের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে কাঠ চুরি বন্ধে শীঘ্রই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।