মেহের আমজাদ, মেহেরপুর : মেহেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এক যুগের বেশি সময় প্রধান শিক্ষক ও অর্ধযুগ ধরে সহকারি প্রধান শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয়ের ডবল শিফটে দেড় হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটার পাশাপাশি প্রশাসনিক কার্যাক্রমে চরম বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়েছে। এনিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ। সমস্যা সমাধানে তারা প্রশাসন ও স্থানীয় জন প্রতিনিধিসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
মেহেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি জেলা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত নারী শিক্ষার অন্যতম একটি বিদ্যাপীঠ। বিদ্যালয়টিতে ২০১০ সাল থেকে ডবল শিফট চালু করা হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে এক হাজার ছয়শ’ ছাত্রী অধ্যয়ন করছে। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে সহকারি শিক্ষকের ৫০টি সৃষ্ট পদের বিপরীতে মাত্র ২৮ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। কর্মরতদের মধ্যেও আবার ৪ জন বিএড প্রশিক্ষনে বিভিন্ন শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। বর্তমানে ২টি শিফটে ২২ টি শাখার বিপরীতে মাত্র ২৪ জন শিক্ষক ক্লাসে পাঠদান করতে হিমশিম খাচ্ছেন। এর উপর ২০০০ সালের ৭ জুন থেকে প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য রয়েছে। সর্বশেষ প্রধান শিক্ষক হিসেবে নাজিমউদ্দিন আহমেদ ওই তারিখে বিদ্যালয় ত্যাগ করার পর আর কোন প্রধান শিক্ষক ওই প্রতিষ্ঠানের হাল ধরেননি। সরকারি বিধি অনুযায়ী ডবল শিফট পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে একজন প্রধান শিক্ষক ও আরো ২ জন সহকারি প্রধান শিক্ষক থাকা জরুরী। কিন্তু বিগত সাড়ে ১৩ বছরে প্রধান শিক্ষক ও পাঁচ বছরে কোন সহকারি প্রধান শিক্ষক প্রতিষ্ঠানটিতে পদায়ন করা হয়নি। বিগত ৫ বছর যাবৎ একজন সহকারি শিক্ষকের তত্বাবধানে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ে সৃষ্ট ৪র্থ শ্রেণির ৫টি পদ পূরণ থাকা সত্বেও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজি মোঃ আনিসুজ্জামান ক্ষমতার অপব্যবহার করে সম্পূর্ণ এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত ২জন ৪র্থ শ্রেণির (মাষ্টার রোল) কর্মচারি নিয়োগ দিয়েছেন। তারা বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রীদের সাথে অপমান জনক ও অশোভন আচারন করে। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের নিকট অভিযোগ দিলেও তিনি তা আমলে নেননা। সংগত কারণে শিক্ষকবৃন্দের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বিদ্যালয়ের একজন অভিভাবক নজরুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়টিতে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষক না থাকার পাশাপাশি সহকারি বেশকিছু শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে চরম ব্যাঘাত ঘটছে।
মেহেরপুর জেলার পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার সব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষকের অধিকাংশ পদ পূর্ণ রয়েছে। এমনকি কুষ্টিয়ার মীরপুর উপজেলায় এক শিফটে পরিচালিত মীরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষক কর্মরত আছেন। যে প্রতিষ্ঠানে ছাত্রী সংখ্যা সাড়ে ৩শ’ এর অধিক নয়। কিন্তু মেহেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি জেলা সদরে অবস্থিত ও ২ শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয় হওয়া সত্বেও রহস্য জনক কারণে দীর্ঘ দিন যাবৎ সেখানে কোন প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষক পদায়ন করা হচ্ছেনা।
মেহেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজী আনিসুজ্জামান বলেন, খুলনা বিভাগের মোট ৩৬ টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৭/৮ টিতে প্রধান শিক্ষক আছেন। বাকিগুলোতে নাই। প্রধান শিক্ষক চেয়ে আমি নিজেই মহাপরিচালকের দপ্তরে ধরনা দিয়েছি; স্থানীয়ভাবে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানিয়েছি। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। সবশেষে মেহেরপুর-১ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রফেসর ফরহাদ হোসেন দোদুলকে এব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে অবহিত করেছি।
মেহেরপুর-১ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রফেসর ফরহাদ হোসেন দোদুল জানান, আমি সবেমাত্র নির্বাচিত হয়েছি। মেহেরপুরের উন্নয়নে আমি কাজ করে যাব। আমি সবার আগে মেহেরপুরের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করব। আমি অতিসত্বর মেহেরপুরের ২টি সরকারি মহাবিদ্যালয় ও ২টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যবস্থা নেব।
এদিকে মেহেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষকদ্বয়ের শূণ্যপদ পূরণ করে বিদ্যালয়টিকে অভিভাবক শূন্যতা থেকে মুক্ত করার পাশাপাশি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে মেহেরপুরের সুধীমহল শিক্ষা বিভাগের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
মেহেরপুরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
সারা দেশের সাথে মেহেরপুরেও সকাল দশটায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এস.এস.সি. ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়ে বেলা একটার সময় শেষ হয়েছে।। মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেন মেহেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মেহেরপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় সহ কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। মেহেরপুর সদর উপজেলায় চারটি, গাংনী উপজেলায় তিনটি এবং মুজিবনগর উপজেলায় একটি মিলে মোট ১১ টি কেন্দ্রে ৬ হাজার ২’শ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে।