এম লুৎফর রহমান নরসিংদী প্রতিনিধি : নরসিংদীর ঘোড়াশালে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল সংঘর্ষে নিহত ছাত্রলীগ কর্মী আনোয়ার হোসেন আনুর লাশ শুক্রবার নামাজে জানাজা শেষে তার নিজ গ্রাম টেঙ্গরপাড়ায় দাফন করা হয়েছে। নিহত শহিদুল ইসলামের লাশ দাফন করা হয়েছে তার নিজ গ্রাম পাচঁদোনার চরপাড়া গ্রামে। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮ টায় ঘোড়াশালের বালুর মাঠে কথিত ছাত্রদল সন্ত্রাসীদের উপর্যুপরী ছুরিকাঘাতে এরা নিহত হয়।
জানা গেছে, ৩০ অক্টোবর হরতালের সময় বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা এলাকায় মিছিল বের করলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা মিছিলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে ১০ জন মিছিলকারী আহত হয়। এ ঘটনার পর মিছিলকারীরা স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিসে পাল্টা হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ অফিসের একটি জানালা ভাংচুর করে। পরদিন আওয়ামী লীগের এক অফিস পিয়ন ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে হামলাকারী ছাত্রদল নেতাদের নাম প্রকাশ করে দিলে ছাত্রলীগ নেতারা মারাত্মক ক্ষিপ্ত হয়। এরপরদিন পলাশ উপজেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেনের নেতৃত্বে একদল ছাত্রলীগ কর্মী উত্তেজিত হয়ে ৪০/৫০ জনের এক দল সন্ত্রাসী নিয়ে একই এলাকার বিএনপি কর্মী রবিন মিয়া, সিদ্দিকুর রহমান, ফোরকান মিয়া, মুনসুর আলী, আব্দুর রশিদ, লাল মিয়া, গোলাপ মিয়া, হাবিবুল্লা ও আব্দুল হেকিমের বাড়ী-ঘরে হামলা চালায় এবং ভাংচুর করে। এতে প্রায় ১০ ব্যক্তি আহত ও প্রায় ৫ লাখ টাকার সম্পদ লুণ্ঠিত হয়। পরদিন এ ঘটনা জানতে পেরে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে অফিস পিয়ন মাসুদ রানাকে মারাত্মকভাবে কুপিয়ে আহত করে। এতে মাসুদ রানার ভাই মামুন মিয়া বাদী হয়ে পলাশ থানায় ১৩ জন ছাত্রদল নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নং-৯,৫(১১)২০১৩ ইং। পাশাপাশি ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ মনজু মিয়ার স্ত্রী সুমী বেগম বাদী হয়ে নরসিংদীর আদালতে ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করে। মামুনের দায়েরকৃত মামলায় পলাতক আসামী ছিল ছাত্রদল কর্মী রিপন ও রুবেল। বৃহস্পতিবার বিকেলে তারা ঘোড়াশাল সোহাগ সিনেমা হল এলাকায় গেলে ছাত্রলীগ নেতা মনির হোসেনের নেতৃত্বে আনোয়ার হোসেন, ইয়ামিন, শহিদুলসহ ১৫/২০ জন ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী তাদের দুজনকে ধরে আওয়ামী লীগ অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের উপর শারীরিক নির্যাতন চালায়। খবর পেয়ে তাদের আত্মীয়-স্বজন আওয়ামী লীগ অফিসে গিয়ে তাদেরকে ছাড়িয়ে আনতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে তারা রিপন ও রুবেলকে পুলিশে সোপর্দ করে। এ ঘটনা জানাজানি হবার পর ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। রাত সাড়ে ৮ টায় ছাত্রলীগ নেতা মনির হোসেন, আনোয়ার হোসেন, শহিদুল ইসলাম ও ইয়ামিনসহ বালুর মাঠে আড্ডা মারার সময় ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা সেখানে গিয়ে তাদের উপর হামলা চালায়। এসময় ছাত্রলীগ কর্মী আনোয়ার হোসেন আনু ও শহিদুল ইসলামসহ অন্ততঃ ৫ জন আহত হয়। মারাত্মক আহত অবস্থায় আনোয়ার হোসেন আনু ও শহিদুল ইসলামকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিয়ে এলে আনোয়ার হোসেন এখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। মারাত্মক সংকটাপন্ন অবস্থায় শহিদুল ইসলামকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পরে রাত সাড়ে ১১ টায় ঢামেক হাসপাতালে শহিদুল ইসলামের মৃত্যু ঘটে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় মামলা দায়ের করা হয়নি।