পাবনা প্রতিনিধি ঃ চার বছর আগে ডিমান্ডনোটের টাকা জমা দিলেও পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্যাস কোম্পানী (পিজিসিএল) এর সিদ্ধান্তহীনতায় আটকে আছে প্রধানমন্ত্রীর নতুন গ্যাস লাইন সংযোগের ঘোষণা। এতে গ্যাস সংযোগ পাচ্ছেনা পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড’র (পিজিসিএল) অধীনে পাবনাসহ এ অঞ্চলের প্রায় ১০ হাজার গ্রাহক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিমাঞ্চলের গ্যাস কোম্পানীর অধীন সিরাজগঞ্জ, ঈশ্বরদী, পাবনা, বেড়া, সাথিঁয়া, শাহজাদপুর, বগুড়া ও রাজশাহীতে গ্যাস সংযোগ রয়েছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদকালের শুরুতে গ্যাস সংকটের কারণে উল্লেখিত এলাকাগুলিতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ ছিল। গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়ার আগে প্রায় ১০ হাজার গ্রাহকের ডিমান্ডনোটের টাকা ব্যাংকে জমা দেয়া ছিল। দীর্ঘ প্রায় ৪ বছর বছর গ্যাস সংযোগ বন্ধের পর গত মে’ মাসের প্রথম সপ্তাহে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে পেট্রোবাংলার অধিনস্ত সকল গ্যাস কোম্পানীকে নতুন সংযোগ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
নির্দেশের পর গ্রাহকদের মধ্যে যাদের বাসাবাড়ী ও শিল্প-কলকারখানায় রাইজার স্থাপিত ছিল, শুধুমাত্র তারাই ইচ্ছা করলে গ্যাসের চুলার সংযোগ বৃদ্ধি করতে পারছেন। কিন্তু রাইজারসহ সংযোগের জন্য গত ৪ বছর আগে যাদের ডিমান্ডনোটের টাকা জমা প্রদান করেছেন তারা এখনও সংযোগ পাচ্ছেন না। এদিকে নির্দেশ মোতাবেক বাখরাবাদ, তিতাস, কর্ণফুলি, জালালাবাদ কোম্পানী রাইজার স্থাপনের জন্য টেন্ডার আহবান করে ঠিকাদার নির্বাচন করে এবং তাদের এলাকায় এলাকায় গ্যাস সংযোগ প্রদান শুরু করেছে বলে জানা গেছে। পশ্চিমাঞ্চলের গ্যাস কোম্পানী সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বিশেষ নির্দেশে রাজশাহী শহরে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগ মূহুর্তে কিছু সংখ্যক ভিআইপি ব্যক্তির বাসায় গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। এরপর পিজিসিএল ৫টি গ্র“পে রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও ঈশ্বরদী এলাকায় গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে প্রায় ১০ হাজার রাইজার স্থাপনের কাজের টেন্ডার গত জুলাই মাসে আহবান করে। মোট ১০ হাজার রাইজারের মধ্যে রয়েছে বগুড়ায় ২ হাজার ৫ ‘শ, রাজশাহীতে ৩ হাজার, পাবনা ও সিরাজগঞ্জে ১ হাজার ৫ ‘শ করে এবং ঈশ্বরদী শহরে ৭’শ। আগ্রহী ঠিকাদাররা গত ২৪ জুলাই সিডিউল জমা দেন। ওই দিনই দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি বাক্স খুলে দেখতে পান সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও ঈশ্বরদীর জন্য একটি করে এবং রাজশাহী ও বগুড়া শহরের কাজের জন্য একাধিক সিডিউল জমা পড়েছে। ফলে পিজিসিএল ঐ টেন্ডার বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহবান করে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে ৫টি গ্র“পে ১৪ জন ঠিকাদার সিডিউল জমা দিয়েছে এবং এ ব্যাপারে প্রতি গ্র“পে সর্বনি¤œ একজন করে দরদাতা ঠিকাদার নিয়োগের কাজ চলছে। কিন্তু এ নিয়োগ প্রক্রিয়াসহ অন্যান্য কাজ শেষ করে নতুন সংযোগ দিতে কম পক্ষে ডিসেম্বর মাস লেগে যাবে। ফলে পুরাতন ঐ সকল গ্যাস সংযোগ প্রত্যাশিত ব্যাক্তিগণ আদৌ সংযোগ পাবে কি না তা নিয়ে জনমনে সংশয় দেখা দিয়েছে। কারন তখন এ সরকার ক্ষমতায় থাকবেনা। এ ছাড়া বর্তমানে পুনরায় দেশে যে ভাবে গ্যাস সংকটের কারনে বিদ্যুত কেন্দ্র গুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাতে জনমনে আরো বেশী সংশয় ঘনিভূত হয়েছে।
বিভিন্ন গ্রাহকদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে বেড়া-সাঁথিয়া-শাহজাদপুর অঞ্চলে ২০০৯-১০ অর্থবছরে (এক বছরের জন্য) নিয়োগকৃত ঠিকাদার মেসার্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনিক্যালকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে পরপর ৪ বছর চুক্তি নবায়নের মাধ্যমে অতিগুরুত্ব দিয়ে রাজশাহী ও বেড়া-সাঁথিয়া-শাহজাদপুর অঞ্জলে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা, ঈশ্বরদী অঞ্চলের ঠিকাদার নিয়োগ নিয়ে চলছে কালক্ষেপন ও উদাসীনতা। পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানীর অফিসসূত্র থেকে বলা হয়েছে, “ইতিপূর্বে রাইজার সরবরাহ ও স্থাপনের জন্য যে সব ঠিকাদার নিয়োগকৃত ছিল, কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে তারা আর নতুন রাইজার সরবরাহ করেননি। দীর্ঘ সময় সংযোগ বন্ধের কারণেই গ্যাস কোম্পানী নতুন করে কোন ঠিকাদারও নিয়োগ করেনি।” প্রধানমন্ত্রী গ্যাস সংযোগ ঘোষনা দেয়ার পরই সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা, ঈশ্বরদীও রাজশাহী ৫টি এলাকায় রাইজার সরবাহের ও সংযোগের জন্য ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্র আহবান করা হয়েছে। এদিকে অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, পাবনা সদর আসনের এমপি গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স জরুরী ভিত্তিতে গ্যাস সংযোগের জন্য পশ্চিমাঞ্চলের গ্যাস কোম্পানীর এমডি বরাবর একটি ‘ডিও লেটার’ প্রদান করেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও বিষয়টি আমলে নেয়নি পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানী।
এ ব্যাপারে পিজিসিএল’র জিএম মার্কেটিং ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল ইসলাম খান জানান, রিটেন্ডারের দরপত্রে মূল্যায়ন চলছে। শিগিরই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে এবং আগামী ১ মাসের মধ্যেই গ্যাস সংযোগ প্রত্যাশী প্রায় ৪ বছর আগে ডিমান্ডনোট জমাদানকারী গ্রাহকদের আবেদিত সংযোগ দেওয়ার কাজ শুরু করা হবে।
উল্লেখ্য,পশ্চিমাঞ্চলের গ্যাস কোম্পানীর অধীন বিভিন্ন শ্রেনীর প্রায় ৬০ হাজার গ্যাস সংযোগকারী গ্রাহক রয়েছে এবং ৪ বছর আগে ডিমান্ডনোটের টাকা জমাদানকারী সংযোগ প্রত্যাশিত গ্রাহক প্রায় ১০ হাজারের বেশী। এ ছাড়া গত মে মাস থেকে এ পর্যন্ত আরো প্রায় ২৫ হাজার নতুন আবেদন জমা পড়েছে
