অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ, সেখানে বাড়িঘরে হামলা ও অপহরণের চেষ্টার অভিযোগে ভারতীয় জনতার গণপিটুনিতে আকরাম হোসেন (৩০) নামে এক বাংলাদেশী যুবক নিহত হয়েছে। গত ১১ আগস্ট সোমবার বিকেলে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিম খাসি হিলস জেলার খনজয় কৈথাকোণা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আকরাম হোসেন শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের বাঁকাকুড়া গ্রামের মৃত জহির উদ্দিনের ছেলে। তিনিসহ ৮ জন বাংলাদেশী নাগরিক সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে অনুপ্রবেশ করেছিলেন।

ঝিনাইগাতীর বাকাকুড়া এলাকার বাসিন্দা, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মুসা মিয়া বুধবার দুপুরে জানান, আকরাম হোসেন দীর্ঘদিন এলাকায় নিয়মিত বসবাস করে না। সে কিভাবে কাদের সাথে ভারতে গিয়েছে, সেটি জানেন না তার স্বজনরাও। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে আত্মীয়-স্বজন লাশ দেশে ফেরানোর জন্য স্থানীয় বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
নিহতের বড় ভাই ও পান ব্যবসায়ী শেখ ফরিদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা আকরামের মৃত্যুর খবর পাই। তবে কীভাবে সে ভারতে গেল, সে বিষয়ে কিছুই জানি না। তার লাশ ফেরত আনার জন্য আমরা বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন ৩৯ বিজিবির আওতাধীন নকশী বিওপির সুবেদার আব্দুল লতিফ জানান, ঘটনার বিষয়ে ভারতের বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।
বার্তা সংস্থা পিটিআইসহ ভারতীয় গণমাধ্যম ও স্থানীয় সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৯ আগস্ট মধ্যরাতে আকরামসহ ৮ জন বাংলাদেশী সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসি হিলস জেলার রোংদাংগাই গ্রামে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেন। পরে ওই গ্রামের এক বাসিন্দাকে অপহরণের চেষ্টা এবং বাড়িঘরে হামলার অভিযোগে ৫ বাংলাদেশী আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন স্থানীয়রা। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশি পুলিশ কনস্টেবল পরিচয়দানকারী জামালপুরের মারুফুর রহমান (৩২), জামালপুর সদর উপজেলার জাহাঙ্গীর আলম (২৫), নারায়ণগঞ্জের সায়েম হোসেন (৩০), কুমিল্লার মেহফুজ রহমান (৩৫) ও সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের মোবারক হোসেন (৩২)।

এদিকে সোমবার বিকেলে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার মহেশখোলা সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খনজয় কৈঠাকোনা গ্রামের একটি বন থেকে আকরামকে আটক গণপিটুনি দেয় স্থানীয়রা। পরে আহত অবস্থায় তাকে ভারতীয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হলে পুলিশ তাকে স্থানীয় মহেশখোলা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আকরাম।
পুলিশ জানিয়েছে, আকরামসহ বাকীদের অনুপ্রবেশ এবং অপহরণের চেষ্টার সন্দেহে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় এখনো স্থানীয় কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়নি। ভারতের খাসি হিলস জেলার পুলিশ সুপার বানরাপলাং জিরওয়া স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, আটককৃতদের কাছ থেকে একটি রিভলভার, পরিচয়পত্র, তিনটি ওয়্যারলেস সেট এবং একটি ম্যাগজিন জব্দ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশি নাগরিক আটককৃতদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আকরাম হোসেনের মৃত্যু হয়েছে। ৩ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। দু’জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ।
এ ব্যাপারে শেরপুরের ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আল-আমীন বলেন, ভারতে নিহত আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণ মামলার একটি গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।

