ads

শনিবার , ৪ মার্চ ২০২৩ | ১২ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

শবে বরাত উদযাপন প্রাসঙ্গিকতা

ড. আবদুল আলীম তালুকদার
মার্চ ৪, ২০২৩ ১:১১ অপরাহ্ণ

‘শব’ ফারসি শব্দ। অর্থ রাত বা রজনী। ‘বরাত’ শব্দটিও প্রকৃত অর্থে ফারসি ভাষা থেকে উৎকলিত; যার অর্থ ভাগ্য। এই দু’শব্দের একত্রে অর্থ হচ্ছে ভাগ্য রজনী। শবে বরাত এর আরবি প্রতিবর্ণী ‘লাইলাতুল বারাআত’ হচ্ছে শা’বান মাসের ১৫ তারিখে তথা মধ্য শা’বানে পালিত একটি পূণ্যময় রাত। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের মুসলিমগণ বিভিন্ন কারণে এ রাতটি ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে পালন করে থাকেন। মুসলিম ধর্মবেত্তাদের মতে, এ রাতে মহান আল্লাহ্ তা‘আলা তার রহমতের দ্বার খুলে দেন, পাপী বান্দাদের উদারচিত্তে ক্ষমা করেন, জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন বলে এ রাতকে শবে বরাত বলা হয়। ফারসি ভাষায় ‘শব’ অর্থ রাত আর ‘বরাত’ নামক আরবি শব্দটির অর্থ মুক্তি বা নিষ্কৃতি। সুতরাং ‘শবে বরাত’ এর অর্থ হলো মুক্তির রাত বা নিষ্কৃতির রাত।

Shamol Bangla Ads

‘শবে বরাত’ শব্দ দুটি ফারসি ভাষা থেকে উৎকলিত হওয়ায় আরবিভাষী নবি হযরত মুহাম্মদ (স.) এর মুখ নিঃসৃত বাণীসমষ্টি হাদিসে এ শব্দটি সরাসরি উল্লেখ নেই তবে হাদিসে যে পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়েছে, তা হলো ‘লাইলাতুন নিস্ফি মিন শা’বান’ তথা শা’বান মাসের মধ্য রজনী। তবে এই রাত নিয়ে প্রচুর গবেষণা, মুসলিম মনীষীদের বিভিন্ন উক্তি ও এর পক্ষে বিপক্ষে নানা মত রয়েছে।

এই বিশেষ রাতের ব্যাপারে কুরআনের কোথাও সরাসরি কোনো কিছু উল্লেখ পাওয়া যায় না। তবে, সিহাহ্ সিত্তাহ বা বিশুদ্ধ ছয়খানা হাদিস গ্রন্থের কোনো কোনো হাদিসে এই রাতের বিশেষত্ব নির্দেশক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য হাদিস গ্রন্থেও এই রাতের বিশেষত্ব উল্লেখ পাওয়া যায়।

Shamol Bangla Ads

পবিত্র কুরআনের সূরা দুখানে আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন, ‘হা-মীম। শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমিতো এটা অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাতে। আমি তো সতর্ককারী। এই রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়।’ উল্লেখিত আয়াতগুলোতে বর্ণিত একটি বিশেষ রাতের ব্যাখ্যায় তাফসীরকারদের কেউ কেউ বলেছেন, ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ বা বরকতময় সে রাতটি হচ্ছে মধ্য শা’বানের পূর্ণিমা রাত তথা শবে বরাত। (তাফসিরে মাযহারি, রুহুল মায়ানী ও রুহুল বায়ান)

প্রখ্যাত তাফসীরকার হযরত ইক্রামা (র.) ‘এক বরকতময় রাত’ এর ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এ রাতটি হলো মধ্য শা’বানের রাত। ইক্রামা (র.) এর উপরোক্ত ব্যাখ্যার সাথে অন্যান্য তাফসীরকারদের অধিকাংশই সহমত পোষণ করেননি। তাদের সবাই কুরআনের উপর্যুক্ত আয়াতে বর্ণিত ‘এক বরকতময় রাত’ বলতে শবে কদরকে বুঝানো হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন। এ মতের সপক্ষে রায় প্রদান করেছেন হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রা.), ইবনে কাসীর (র.), ইমাম কুরতুবী (র.) প্রমুখ তাফসীরকারগণ। তবে ইমাম কুরতুবি (র.) তাঁর তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘কোনো কোনো তাফসীরকারগণ বলেছেন, ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ দ্বারা বোঝানো হয়েছে মধ্য শা’বানের রাতকে (শবে বরাত)।

এই রাত সম্পর্কে একটি সহিহ হাদিস যা সুনানে ইবনে মাজাহ্ এর ইকামাতুস্ সালাত অধ্যায়ে হযরত আবু মূসা আশয়ারী (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা’আলা মধ্য শা’বানের রাতে সমস্ত সৃষ্টির দিকে বিশেষ নযর দেন ও মুশরিক এবং হিংসুক ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন।

হযরত আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি করিম (স.) এ রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে এসে মৃতদের জন্য দু’আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। তিনি আরো বলেন, নবি (স.) তাকে বলেছেন, এ রাতে বনি কালবের ভেড়া বকরীর পশমের পরিমাণের চেয়েও বেশী সংখ্যক গুণাহ্গারকে আল্লাহ্ তা’আলা ক্ষমা করে দেন। (সুনানে তিরমিযি: ৭৩৯)

হযরত আবু সালাবা (রা.) থেকে বর্ণিত, যখন শা’বানের মধ্যরাত আসে, তখন আল্লাহ্ পাক মাখলুকাতের প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকান; ম’ুমিনদিগকে ক্ষমা করে দেন, কাফিরদের ফিরে আসার সুযোগ দেন এবং হিংসুকদের হিংসা পরিত্যাগ ছাড়া ক্ষমা করেন না। (কিতাবুস সুন্নাহ্, খণ্ড: ৩, পৃ.- ৩৮২)

হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (স.) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা এ রাতে বিদ্বেষ পোষণকারী ও নিরপরাধ মানুষকে হত্যাকারী ছাড়া বাকি সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। (মুসনাদে আহমদ, খণ্ড: ৪, পৃ.-১৭৬)

হযরত উসমান ইবনুল আ’স (রা.) থেকে বর্ণিত, এ রাতে আল্লাহ্ তা’আলা মুশরিক ও ব্যভিচারিণী ছাড়া সবার ইচ্ছা পূরণ করে থাকেন। (শুআবুল ঈমান, খণ্ড: ৩, পৃ.-৩৮৩)

হযরত মু‘আয ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি করিম (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ্ তা’আলা অর্ধ-শা’বানের রাতে সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (ইবনে মাজাহ্, আস-সুনান ১/৪৪৫)

হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি করিম (সা.) বলেছেন: ১৪ শা’বান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোযা পালন করো; কেননা এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ্ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন: কোনো ক্ষমা প্রার্থী আছো কি? আমি ক্ষমা করবো; কোনো রিযিক প্রার্থী আছো কি? আমি রিযিক দেবো; আছো কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি তাকে উদ্ধার করবো। এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ্ তা’আলা বান্দার বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ্: ১৩৮৪)

জলীলে কদর সাহাবি হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) বর্ণিত বুখারি ও মুসলিমে শরিফের হাদিসের বক্তব্য হল, আল্লাহ্ তা’আলা প্রতি রাতের শেষের দিকে নিকটতম আকাশে অবতরণ করে দু’আ কবুলের ঘোষণা দিতে থাকেন। আর প্রতি রাতের মধ্যে শা’বান মাসের ১৫ তারিখের রাতও অন্তর্ভূক্ত। অতএব এ হাদীস মতে অন্যান্য রাতের মত শা’বান মাসের ১৫ তারিখের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ্ তা’আলা দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন।

শবে বরাতের রজনীটি ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ (স.) বা তাঁর সাহাবিদের স্ব-স্ব জীবদ্দশায় কখনো পালন করেছেন বলে সহীহ সনদে বর্ণিত কোনো তথ্যমালায় পাওয়া যায় না। তবে বেশ কিছুকাল আগে থেকেই মুসলিম বিশ্বে সাড়ম্বরে রজনীটি উদ্যাপিত হয়ে আসছে। তবে আহ্লে হাদিস মতাদর্শীরা এ রাতটিকে উদ্যাপন করেন না। তাঁদের কেউ কেউ এ রাতটির তাৎপর্যের কথা স্বীকার করলেও এ রাত উদ্যাপন করাকে সমর্থন করেন না। এ রাত উদ্যাপনকে ‘বিদ্আহ্’ বা নব উদ্ভাবন হিসেবে পরিত্যাজ্য বলে তারা বিশ্বাস করেন।

এ রাতে যেমনভাবে আমরা ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য বিশেষভাবে উদগ্রিব হই আমাদের উচিত বছরের প্রতি রাতের শেষাংশের বরকতময় সময়ে ইবাদত করার জন্য উদগ্রিব হওয়া। কেননা প্রতিটি রাতেই একটি বিশেষ সময় আছে যখন আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের ডেকে ডেকে বলতে থাকেন যে, কার কী দরকার সে যেন আমার কাছে চায়, আমি দেবো। কে আছো ক্ষমা চাইবার আমি ক্ষমা করে দেবো। কে আছে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেবো। আর তা হলো প্রতি রাতের এক-তৃতীয়াংশ এর শেষ অংশে যা ফযর পর্যন্ত চলতে থাকে। সেই অর্থে প্রতিটি রাতই কিন্তু ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সুযোগ নিয়ে আসে একথা আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি।

অতএব বছরের অন্যান্য দিবসের ন্যায় মধ্য শা’বান তথা শবে বরাত উপলক্ষ্যেও সাওম পালন করা, নফল নামায আদায়, কুলআন তিলাওয়াত করা, বেশি বেশি দু’আ-দরূদ, তাসবিহ্-তাহ্লিল, যিকির-আযকার, ইস্তিগফার পড়া, কবর যিয়ারত করা এবং সর্বোপরি নিজের জন্য, পিতামাতা-আত্মীয়-স্বজন তথা সকল মু’মীন-মুসলমান, দেশ-জাতির কল্যাণ কামনা করে দু’আ করা দোষের কিছু নয়; বরং এগুলো অবশ্যই পুণ্যের কাজ।
লেখক : কবি, প্রবন্ধিক ও সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজ, শেরপুর।

Need Ads

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

Shamol Bangla Ads
error: কপি হবে না!