এসএম আবুল বাশার, মধুখালী (ফরিদপুর) : পড়ন্ত বিকেল। হাজার হাজার মানুষ তিল ধারনের ঠাই নেই মধুখালী রেলষ্ট্রেশনে। পূর্বঘোষণা ছিল বিকেল ৪টায় ট্রেন আসবে মধুখালী রেলষ্ট্রেশনে। দুপুরের পর থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল ক্ষণগননা—কখন আসবে সেই স্বপ্নের রেলগাড়ী। সে কারনেই সন্ধ্যা যত ঘনিয়ে আসছে মানুষের সমাগমও তত বাড়ছিল । দীর্ঘ ১৬ বছর বন্ধ থাকার পর প্রথম ট্রেন আসবে । যে কারনে ঘড়িমাপা সময়ের ব্যাপার ছিলনা । পাংশায় ৭টি প্রকল্পের উদ্বোধন হবে। লক্ষ-হাজার জনতা। সভা মঞ্চের ৮/১০ কিলোমিটার আগে বাসগুলো দাড়িয়ে গেছে ।সামনে যাবার কোন পথ নেই । নতুন এক সুখের আবেগে ভেসে চলেছে সবাই। এমন অবস্থায় ট্রেনের সময় কি আর ঠিক থাকে । মধুখালী রেলষ্ট্রেশনে কয়েক হাজার আবাল-বৃদ্ধবনিতার উৎকণ্ঠা বেড়েই চলেছে । প্রতিক্ষার প্রহর আর কাটতে চায় না । তবুও মানুষের মাঝে শৃংখলবোধ ছিল উল্লেখ করার মত । ২ নভেম্বর শনিবার বিকেল ৪টায় গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী গনতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা রাজবাড়ী জেলার পাংশা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠ থেকে কালুখালীÑভাটিয়াপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেনটির শুভ উদ্বোধন ঘোষনা করেন। ততক্ষনে মোবাইল ফোনে মধুখালী বাসীর কাছে সে সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। টান টান উত্তেজনায় সারিবদ্ধ ভাবে মানুষ দাড়িয়ে যায় প্লাটফরমে। শ্লোগানে,হর্স ধ্বনি আর সকলের গগনবিদারী চিৎকারে ফেটেপড়ে চারিদিক । অবশেষে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে প্রায় ঘন্টা খানেক পরে মধুখালী রেলষ্ট্রেশনে প্রবেশ করে গনমানুষের কাংখিত স্বপ্নের সোনার হরিণ কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেন। জয়বাংলা ,বঙ্গবন্ধু,শেখ হাসিনা আর আব্দুর রহমানের নামে শ্লোগানে শ্লোগানে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয়ে উঠে। রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, ফরিদপুর-১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য, রেলের স্বপ্নদ্রষ্টা মো. আব্দুর রহমান কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া ট্রেনে শুভযাত্রা করে যখন মধুখালী রেলস্ট্রেশনে প্রবেশ করেন তখন সন্ধ্যা ৭টা । এ সময় উৎসব আনন্দে মেতে উঠে ষ্ট্রেশনে জড়হওয়া হাজার হাজার মানুষ। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য । চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না । বিকেলে রেলষ্ট্রেশন চত্ত¡রে উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান মঞ্জ,ুর সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাসির উদ্দীন মাহামুদ,থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরে আলম সিদ্দিকী, মধুখালী প্রেসক্লাবের সাংবাদিক বৃন্দ। এ সময় বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামীলীগ সহসভাপতি মোঃ হামিদুর রহমান,দপ্তর সম্পাদক পিকু আহসান হাসিব,আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড.আলীউজ্জামান খোকন,প্রচার সম্পাদক রেজাউল হক বকু,মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী রাধারানী ভৌমিক,ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম রানা,শওকত ইমরান, প্রমুখ ।

উল্লেখ্য যে ৩ টি জেলা Ñ রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ এর ৬ টি উপজেলা কালুখালী, বালিয়াকান্দি, মধুখালী বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা, কাশিয়ানী জনপদের স্বপ্নের রেলপথ কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া রেলপথ আবার চালূ হল । এ এলাকার জনগনের দীর্ঘ দিনের দাবী পুরন করলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা , ততকালিন রেলওয়ের উর্দ্ধন কর্মকর্তা ভাটিয়াপাড়ার জৈনিক কেবি রায় ১৯৩৫ সালে কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া রেলপথ প্রতিষ্ঠা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় বন্ধ হয়ে যাওয়া রেলপথ পূনঃ প্রতিষ্ঠা করলেন এই জনপদের মাটিও মানুষের প্রান প্রিয় নেতা জননেতা মোঃ আব্দুর রহমান। কালুখালিÑভাটিয়াপাড়া পরিত্যাক্ত রেললাইন পুর্ণবাসন সহ কাশিয়ানী থেকে জাতির জনকের সমাধিস্থল টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত নতুন রেললাইন সম্প্রসারিত হয়েছে । অব্যহত লোকসান ও লাইনটিতে রেল চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়ায় ১৯৯৩ সালে এই লাইনে রেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় । ১৯৯৭ সালে কালুখালী থেকে গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া ষ্ট্রেশন পযর্ন্ত ৭৪ কিলোমিটার রেল লাইনটি স্থায়ীভাবে পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে মধুখালী-কামারখালী রেললাইনের আড়কান্দী ব্রীজ ক্ষতিগ্রস্থ এবং কামারখালী রেল ষ্টেশন ধ্বংস হওযার কারণে ঐ শাখা লাইনটি আগেই বাতিল করা হয়। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে ফরিদপুর-১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য জননেতা মোঃ আব্দুর রহমান কর্তৃক মহান জাতীয় সংসদে লাইনটি পুনরায় চালু করার প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বর্তমান প্রকল্পটি অনুমোদন করেন। ফলে ৩টি জেলার জনগণের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করায় এলাকাবাসীর আনন্দের সীমা নেই । পুনর্বাসন ও নির্মান প্রকল্পে সর্বমোট ১১ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যায়ে ৪ টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ কাজ করছে । বর্তমানে নিয়মিত সপ্তাহে ৬ দিন কালীখালী-ভাটিয়াপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেনটি চলাচল করছে। তিন জেলার মানুষের মাঝে চলছে আনন্দ ট্রেন ভ্রমন পরিবারকে সাথে নিয়ে। এমনি একজন ট্রেন ভ্রমন কারীর সাথে কথা হয় মধুখালী রেলষ্ট্রেশনে – মধুখালী উপজেলার ব্যাসদী গ্রামের আব্দুল কাদের মানু জানান তার শ্বশুর বাড়ী কুষ্টিয়া জেলার মাঝপাড়ায় । কালূখালী -ভাটিয়াপাড়া ট্রেন চ্লুর আগে পরিবার নিয়ে যেতে খরচ হতো আসা-যাওয়ায় প্রায় দু হাজার টাকা এবং ১দিন সময় লাগত কিন্ত এখন এই ট্রেন চালু হওয়ায় টাকা ও সময় দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে । এজন্য আমি বর্তমান প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও যার আপ্রাণ চেষ্টায় চালু হলো ফরিদপুর-১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্যকে আমার হৃদয়ের অন্তস্থাল থেকে ধন্যবাদ জানাই।
