আজম রেহমান, ঠাকুরগাও : দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উত্তরের সীমান্ত জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের ৩টি সংসদীয় আসনে ১৪ দলীয় মহাজোট ও ১৮ দলীয় জোটের সম্ভাব্য প্রার্থীরা গনসংযোগে ব্যস্ত সময় অতিক্রম করছেন। তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন তৃণমুল পর্যায়ে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার ৩টি আসনেই মহাজোট প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। তবে এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ন আলাদা। এদিকে আলমগীর স্যার হিসেবে পরিচিত বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রতি দূর্বলতা, ভালবাসা ও সহানুভূতি রয়েছে সমগ্র জেলার জনসাধারনের। প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে বা এ যাবতকালে জেলায় তার বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকান্ডের উদাহরন নেই। কাজের ক্ষেত্রে তার কাছে নেই দলমতের পার্থক্য। সকল মানুষকে তিনি নিজের বলে ভাবেন এবং বিশ্বাস করেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব প্রফেসর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার দলীয় অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে তৃণমুল পর্যায়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে বিএনপি তাদের হারানো আসন পূনরুদ্ধারসহ জেলার ৩ টি আসনেই এবার জয়লাভ করতে চায়। যার ধারাবাহিকতায় দলীয় কর্মকান্ড জোরালোভাবে পরিচালনাসহ প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। অপর দিকে ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগ ৩টি আসন নিজেদের দখলে রাখতে দলীয় কার্মকান্ডসহ এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে। প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রার্থী চূড়ান্ত না হলেও বিএনপি সুসংগঠিত ও তাদের প্রার্থীও প্রায় চূড়ান্ত।
ঠাকুরগাও-১ (সদর) : সদর উপজেলার ১৯ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ আসনে এবার সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে বিএনপির ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অধ্যাপক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আওয়ামী লীগ থেকে পানি সম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদ প্রশাসক মুহম্মদ সাদেক কুরাইশি, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অরুনাংশু দত্ত টিটু, জাতীয় পার্টি থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান সুলতানুল ফেরদৌস নম্র, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি থেকে অধ্যক্ষ সৈয়দ মেরাজুল হোসেন এলাকায় তৎপর রয়েছেন। নির্বাচনে মূলত: প্রতিদ্বন্দিতা হবে বড় দুই দলের প্রার্থীর মধ্যে। তবে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে শেষ পর্যন্ত কোন সমঝোতা না হলে আ’লীগ প্রার্থীর সাথে লড়াই হবে জাপা প্রার্থীর।
ঠাকুরগাঁও-২ : বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর ও রানীশংকৈলের ২ টিসহ মোট ১৬ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঠাকুরগাও-২ আসনে এবার সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এলাকায় তৎপর থেকে গনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রধান ২দলসহ বিভিন্ন দলের বেশ কিছু প্রার্থী। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ঢাকা কলেজের সাবেক ভিপি জেড মর্তুজা চৌধুরী তুলা, জেলা জামায়াতের আমীর ২০০১ ও ২০০৮ সালে বিএনপি জোটের প্রার্থী মাও: আব্দুল হাকিম, আওয়ামী লীগ থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব দবিরুল ইসলাম এমপি, প্রজন্ম লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক, হরিপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম ফেরদৌস টগর, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান প্রবীর কুমার রায়, জাতীয় পার্টি থেকে কেন্দ্রীয় নেতা নূর নাহার বেগম ও অন্যান্যের মধ্যে সমাজ কল্যান মন্ত্রনালয়ের সাবেক সচিব মো: আব্দুল জব্বার ও মরহুম ইঞ্জিনিয়ার ইজাব উদ্দিনের নাতী ইশতিয়াখ আহম্মেদ।
এ আসনে ভোটের যাদুকর খ্যাত বর্তমান এমপি দবিরুল ইসলাম পরপর ৫ বারের নির্বাচিত এমপি। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ বরাবর থাকলেও তিনি অদৃশ্যভাবে নির্বাচনে বিজয় লাভ করেন। ভোটের ফলাফল তার দিকেই গেছে এতদিন। তাই তিনি এলাকায় ভোটের যাদুকর হিসেবে পরিচিত। তদুপরি এবারের প্রেক্ষাপট অনেকটাই ভিন্ন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০০৮ এর নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন এই নেতা। এবারে হরিপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ এই নেতার সাথে নেই। বরং তারা এই নেতার প্রকাশ্যে বিরোধিতা করে চলছেন। এ অবস্থার নিরসন না হলে এবার তাকে মাশুল গুণতে হতে পারে। তবে বিএনপি নির্বাচনে না এলে জাপা প্রার্থীর সাথে লড়াই হবে আ’লীগ প্রার্থীর।
ঠাকুরগাও-৩ : পীরগঞ্জ-রানীশংকৈলের ১৬ টি ইউনিয়ন ও ২ টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে বিএনপির পীরগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি মো. জাহিদুর রহমান জাহিদের মনোনয়ন প্রায় চুড়ান্ত। তিনি গত ৫ বছর ধরে তৃনমূল পর্যায়ে গনসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। পৌছেছেন তৃণমূল পর্যায়ে। অংশ নিচ্ছেন সভা, সমাবেশসহ নানামূখী কর্মসূচিতে। অনেকটা একলা চলো নীতিতে তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর থেকেই নতুন করে শুরু করেন, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ আসনে নিজ দলে তার সমকক্ষ বা বিকল্প কোন প্রার্থী নেই। তবে এলাকায় কোন কার্যক্রম নেই এমন বহিরাগত বসন্তের কোকিল অনেকেই এ আসনে মনোনয়ন নেয়ার দৌড় চালিয়ে যাচ্ছেন।
এখানে আওয়ামীলীগ থেকে সাবেক সংসদ সদস্য উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মো: ইমদাদুল হক, উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা ও স্থানীয় পাবলিক ক্লাবের সভাপতি রেজওয়ানুল হক বিপ্লব, ডিএন ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল চন্দ্র রায়, উপজেলা আ’লীগ সাধারন সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মো: আখতারুল ইসলাম, আওয়ামী আইনজীবি ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা এডভোকেট মোজাম্মেল হোসেন , রানীশংকৈল উপজেলা আ’লীগ সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো: শহিদুল হক, ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রয়াত এমপি আলী আকবরের কন্যা, রানীশংকৈল উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী অধ্যাপক সেলিনা জাহান লিটা ও উপজেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল কাদের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এখানে জাতীয় পার্টি থেকে একমাত্র প্রার্থী জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ এমপি।
তবে জোটের প্রার্থী হিসেবে তিনি এমপি নির্বাচিত হলেও নির্বাচন পরবর্তী ৫ বছরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সাথে সম্পর্ক একেবারে ভাল যায়নি।জোটগত নির্বাচন হলে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে মহাজোট যদি আবারো জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্যকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে সাবেক সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো: ইমদাদুল হক এককভাবে নির্বাচন করবেন বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
এ আসনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি থেকে নির্বাচন করতে পারেন সিপিবি’র জেলা সম্পাদক, ঠাকুরগাও প্রেসক্লাবের সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক আখতার হোসেন রাজা ও পীরগঞ্জ উপজেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি কমরেড মনসুরুল আলম। তারাও এলাকায় ভিন্ন আঙ্গিকে হালকা গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।