ads

শুক্রবার , ২২ নভেম্বর ২০১৩ | ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আজ

রফিকুল ইসলাম আধার , সম্পাদক
নভেম্বর ২২, ২০১৩ ৭:৫৮ অপরাহ্ণ

aaaaaaaaaaaএস.এম জামাল, কুষ্টিয়া : দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দের রক্তঝরা আন্দোলনের ফসল আজকের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, মওলানা আকরাম খাঁসহ বহু মনীষীর স্বপ্নের এ বিশ্ববিদ্যালয় হাঁটি-হাঁটি-পা-পা করে আজ ৩৪ বছরে পর্দাপণ করেছে আজ ২২ নভেম্বর। তবে ২২ নভেম্বর সরকারী ছুটি থাকায় ২৩শে নভেম্বর শনিবার ৩৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
দিনটি পালন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল সাড়ে ৮টায় প্রশাসন ভবন চত্বরে পতাকা উত্তোলন। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করবেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. শাহিনুর রহমান। এ সময় হলসমূহের প্রভোস্টগণ স্ব-স্ব হলে জাতীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করবেন। পতাকা উত্তোলন শেষে সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে প্রশাসন ভবন চত্বর হতে ভাইস চ্যান্সেলরের নেতৃত্বে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দের সমন্বয়ে ক্যাম্পাসে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে। র‌্যালি শেষে প্রশাসন ভবন চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

Shamol Bangla Ads

বহু চড়াই উৎরাই হাজারও বাধা মাড়িয়ে ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহের মধ্যবর্তী স্থান শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, অন্য কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এত আন্দোলন সংগ্রাম রক্তভেজা পথ পাড়ি দিতে হয়নি। যত না সংগ্রাম করতে হয়েছে শুধু স্বপ্নের এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য। কারণ এটি হবে একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়। আধুনিক জ্ঞানের সকল শাখার সঙ্গে ইসলামী শিক্ষার সংযোগ ও সমন্বয় সাধন করা হবে। ১৯৮০ সালের ২৭ নভেম্বর জাতীয় সংসদ কর্তৃক গৃহীত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের ৫ এর ক ধারায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে। জাতির জন্য বড়ই দুর্ভাগ্যের বিষয় প্রতিষ্ঠার ৩৩ বছরেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় তার মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্যে পৌঁছাতে পারেনি। উপরন্তু বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে ক্ষতবিক্ষত হয়ে মূল উদ্দেশ্য থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে। ইসলামী নাম সর্বস্ব একটি আঞ্চলিক বিদ্যাপীঠে পরিণত হতে চলেছে। বিগত জোট সরকারের আমলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংশোধিত অধ্যাদেশের ফাযিল ও কামিলকে ৪ এর ক ধারা বলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যকেই ব্যাহত করেছে বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করেন। কারণ অতীতের আতাউর রহমান খান শিক্ষা IU-Main-Gatকমিশন, সৈয়দ মুয়াজ্জেম হুসাইন কমিশন এবং মওলানা আকরাম খাঁ শিক্ষা কমিশন এ্যাফেলিয়োটং ক্ষমতাসম্পন্ন একটি আরবি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হবে শুধুমাত্র মাদরাসার ফাযিল ও কামিল স্তরকে নিয়ন্ত্রণ করা। সিলেবাস অনুমোদন সংশোধনসহ যাবতীয় একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যাবলী সম্পন্ন করা। প্রতিষ্ঠার পর পরই ইসলাম বিদ্বেষী ধর্মনিরপেক্ষ মহল এ বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। কুষ্টিয়ার শান্তিডাঙ্গায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর ঢাকার গাজীপুরস্থ বোর্ডবাজারে ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। ইতোমধ্যে ষড়যন্ত্রের ডালপালা বিস্তার হতে থাকে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে ঢাকার গাজীপুর থেকে স্থানাস্তর করতে হবে। ১৯৮১ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে প্রকল্প পরিচালক প্রফেসর ড. আ ন ম মমতাজুদ্দীন চৌধুরী ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ইসলামী চিন্তা চেতনায় অপরিসীম জ্ঞানে অধিকারী ড. মমতাজ উদ্দীন চৌধুরী ষড়যন্ত্রের অক্টোপাসে আবদ্ধ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে মুল লক্ষ্য উদ্দেশ্যের দিকে নিতে পারেননি। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে তার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরাতে এরশাদ ১৯৮৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর ড. সিরাজুল ইসলামকে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দান করেন।
মূলত: ভিসি সিরাজুল ইসলাম নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক চরিত্র ধ্বংস করেন। তার কর্মকান্ডের মৌলিক দিক ছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী চরিত্র ধ্বংস করে সেক্যুলার করা। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এক্ষেত্রে তিনি সফলও হয়েছেন। নাস্তিক্যবাদী ইসলামবিদ্বেষী মহলের প্রত্যক্ষ যোগসাজসে গাজীপুরের বোর্ড বাজার থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে আবারও কুষ্টিয়ায় স্থানান্তর করা হয়। হাজারও ছাত্রজনতার প্রতিবাদ, শিক্ষকবৃন্দের অনুনয় বিনয়, সচেতন বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ ও দেশের তৌহিদী জনতার আন্দোলন উপেক্ষা করে রাতের আঁধারে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থানান্তর করা হলো। এরশাদে সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালের ৬ জুন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল হামিদকে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দান করেন। তার আন্তরিক প্রচেষ্টা ছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংস হওয়া মৌলিক চরিত্র পুনরুদ্ধার করা এবং আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়রূপে গড়ে তোলা। বিশ্ববিদ্যালয়কে মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য পৌঁছাতে তিনি সকল বিভাগের সঙ্গে ২শ নাম্বারের ইসলামিক স্টাডিজ কোর্স বাধ্যতামূলক করেন। বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে ওআইসি এর আমন্ত্রণে তিনি মুসলিম বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ সফর করেন এবং আইডিবি-এর সঙ্গে বেশ কয়েকটি সহযোগিতামূলক চুক্তি করেন। কিন্তু সাবেক ভিসির নিয়োগ পাওয়া কিছু বামপন্থী শিক্ষকের প্রত্যক্ষ যোগসাজসে পরিকল্পিতভাবে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের সহযোগিতায় বাম সংগঠনসমূহ ক্যাম্পাসে ধ্বংসযজ্ঞ চালায় এবং প্রায় ৩ কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট করে। দু:খজনক হলেও সত্য তৎকালীন ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনও প্রস্তাবিত ২শ নাম্বারের ইসলামিক স্টাডিজ কোর্সের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে। অথচ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ পড়ানো হবে না তো কোথায় পড়ানো হবে?’ তৎকালীন চ্যান্সেলর ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনসত্ত্বেও ভিসি মরহুম প্রফেসর আব্দুল হামিদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে তার মূল লক্ষ্যের দিকে নিতে পারেননি। ১৯৯৫ সালের ৯ মে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর ড. ইনাম-উল-হক ভিসি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। তিনিই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বাণিজ্য শুরু করেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালকে তার মূল চরিত্রে ফিরিয়ে নেয়ার কোনও চেষ্টাই করেননি। বরঞ্চ কোটি কোটি টাকার নিয়োগবাণিজ্যকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়। ক্ষমতার পালাবদলে প্রফেসর ড. ইনাম-উল-হক রাতারাতি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করে একটি সংগঠনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর লেলিয়ে দেন। ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ বহিরাগত সন্ত্রাসীদের সহযোগিতায় একটি ছাত্রসংগঠন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। হাজারো রাউন্ড গুলিবর্ষণ করা হয়। মেধাবী ছাত্র আমিনুর রহমান শাহাদাতবরণ করেন। মামুনুর রশিদ, শফিকুল ইসলাম, আব্দুল হান্নানসহ প্রায় পনের জন পঙ্গুত্ববরণ করেন। দু’শতাধিক ছাত্র গুলিবিদ্ধ হন। অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে নিয়োগ বাণিজ্য চালাতে থাকেন ভিসি ড. ইনাম-উল-হক। এত কিছুর পরও তৎকালীন সরকার তাকে বিশ্বাস করেনি। সরকার ১৯৯৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. কায়েস উদ্দীনকে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দান করেন। তিনিও ভিসি সিরাজুল ইসলামের পদাংক অনুসরণ করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল চরিত্র ধ্বংসের জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ফলে ওআইসি এবং আইডিবি কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়কে আর্থিক সহযোগিতা বন্ধের চিঠি দেয়া হয়। ওআইসি এবং আইডিবি কর্তৃক অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত দুটি হলকে নামকরণ করা হয় বঙ্গবন্ধু মুজিব হল ও ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল। নিয়োগ বাণিজ্য চালাতে থাকেন তিনিও। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের তালিকা থেকে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদেরকেরও নিয়োগ দেন তিনি। দলীয় বিবেচনায় ৩য় শ্রেণীপ্রাপ্ত একজনকে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ক্যাম্পাসে চরম বিতর্কিত হন প্রফেসর কায়েস উদ্দীন। ১৯৯৭ সালের ৩১ অক্টোবর নিয়োগ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে ছাত্রদের প্রতিবাদ মিছিলের ওপর ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ও পুলিশ যৌথভাবে নিরীহ ছাত্রদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। আলমামুন ও মহসীন কবির নামে দুজন ছাত্র শাহাদাৎবরণ করেন এবং অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন। মূলত নিয়োগ বাণিজ্য চালানোর সুবিধার্থে ক্যাম্পাস বন্ধের জন্য এ হামলা চালানো হয় বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকারের শেষ পর্যায়ে ২০০০ সালের ১০ অক্টোবর ভিসি হিসেবে নিয়োগ পান উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাওয়া প্রফেসর ড. লুৎফর রহমান। দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পেলেও তার কিছুটা সুনাম ও ইমেজ ক্যাম্পাসে রয়েছে। যদিও তার মেয়াদকাল ছিল স্বল্প সময়ের জন্য। ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর ২০০১ সালের ১০ ডিসেম্বর ভিসি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান। একজন খ্যাতনামা ইসলামী চিন্তাবিদ হিসেবে তার দেশবিদেশে সুনাম ও পরিচিতি রয়েছে। সঙ্গত: কারণেই সবাই আশা করেছিল তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে তার মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্যে পৌঁছানোর জন্য সচেষ্ট হবেন। ধ্বংস হয়ে যাওয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল চরিত্র ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। পরিতাপের বিষয় তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক কাজটি করতে পারলেন না বা করলেন না। ইসলামিক স্টাডিজ ফোরামের পক্ষ থেকে তাকে একাধিকবার  ফোন করেও পরামর্শ দেয়া হয়েছে এবং তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে যে, প্রত্যেক বিভাগের সঙ্গে ইসলামিক স্টাডিজ কোর্স বাধ্যতামূলক করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে তার মূল লক্ষ্যের দিকে নেয়াই হবে প্রথম এবং প্রধান কাজ। কিন্তু তিনি সুধীজনদের পরামর্শ ও মতামত উপেক্ষা করলেন। তার আমলে নির্দিষ্ট সংখ্যক কিছু বিশেষ ভোটার যোগদান করেছেন বটে কিন্তু অভিযোগ রয়েছে তিনি একটি বিশেষ অঞ্চল ও বিশেষ সাবজেক্টের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেননি। উপরন্তু তার জেদী ও অন্যকে অবজ্ঞা করার মানসিকতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিভিন্ন নিয়োগকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার হতে থাকে। অবশেষে সরকার ২০০৪ সালের ৩রা এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর রফিকুল ইসলামকে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দান করেন। তিনিও নিয়োগ বাণিজ্যে মেতে ওঠেন প্রবলভাবে। ইসলামী ভাবাপন্ন হওয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা ও মৌলিকতা রক্ষায় কোনও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেননি। তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের নিয়োগদান করে প্রশাসন ভারি করেছেন বলেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তুমুল ছাত্র/শিক্ষক আন্দোলনের মুখে তাকেও ক্যাম্পাস ছেড়ে যেতে হয় এবং ২০০৬ সালের ১০ আগস্ট জোট সরকার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে প্রফেসর ফয়েজ মুহাম্মদ সিরাজুল হককে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দান করে। এই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য থেকে কাউকে ভিসি নিয়োগ দেয়া হলো। স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের অধিকারী  প্রফেসর ফয়েজ মুহাম্মদ সিরাজ দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে নিয়োগ সংক্রান্ত কর্মকান্ড থেকে নিজেকে কৌশলে বিরত রাখেন। বর্তমান মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টডিজ বিভাগের স্বনামধন্য প্রফেসর পন্ডিত ব্যক্তিত্ব প্রফেসর ড. আ ন ম রইছ উদ্দীনকে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দান করে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদ সপ্তাহব্যাপী নানাবিধ তদবির ও অপপ্রচার চালিয়ে নন্দিত শিক্ষাবিদ ড. রইছ উদ্দীনের নিয়োগ স্থগিত করে এবং ২০০৯ সালের ৯ মার্চ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন বিভাগেহর প্রফেসর ড. এম. আলাউদ্দীনকে ভিসি হিসেবে নিয়োগদান করেন। অবশ্য প্রফেসর ড. আ ন ম রইছ উদ্দীনের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে যোগদানের অনাগ্রহই নতুন ভিসি হিসেবে প্রফেসর ড. এম. আলাউদ্দীনের নিয়োগকে ত্বরান্বিত করে। ব্যক্তি হিসেবে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ভিসি ক্যাম্পাসে একজন ভদ্রলোক ও জ্ঞানী হিসেবে পরিচিত। তাঁর ব্যক্তিগত ও আতিথেয়তা অন্য মতাদর্শের সবাইকে মুগ্ধ করে। কিন্তু প্রো-ভিসি হিসেবে প্রফেসর এম. কামালউদ্দীন ও ট্রেজারার প্রফেসর ড. শাহজাহান আলীর নিয়োগ সবাইকে হতবাক করে। প্রো-ভিসি ও ট্রেজারারের নানাবিধ অনিয়ম, দুর্নীতি দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি ও কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য স্বচ্ছ ইমেজের ভিসি প্রফেসর এম. আলাউদ্দীনকে দারুণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ২৭ডিসেম্বর ২০১২ সালে  ভিসি এম আলাউদ্দিনকে অব্যাহতি দিয়ে সর্বশেষ ইবি’র ভিসি হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার।
বর্তমানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসের এক চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের বিভিন্ন উপদলের নিয়োগ বাণিজ্য বিশ্ববিদ্যালয়কে চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। কয়েক শতাধিক বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া সত্ত্বেও ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের চাহিদা মেটেনি। যানবাহন পোড়ানোসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধ্বংসের তান্ডবলীলা চালায়। অভিযোগ রয়েছে প্রতিদ্বনদ্বী পক্ষগুলো নিয়োগের জন্য জনপ্রতি ৪/৫ লাখ করে টাকা নিচ্ছে এবং এর ভাগবাটোয়ারার অর্থ প্রভাবশালী বিভিন্নজনের পকেটে যাচ্ছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় যেন নিয়োগ বাণিজ্যের মহামিলন কেন্দ্র। একেক দলীয় সরকারের সময় একেক ভিসি আসেন আর তাদের ছাত্র সংগঠন নিয়োগ বাণিজ্যে মেতে ওঠেন।
দেশের একমাত্র সরকারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে সংশ্লিষ্ট মহল শঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে। আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত দূরে থাক, দিন দিন এটি আঞ্চলিকতার বেড়াজালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে জিওলজি এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ ফ্যাকাল্টি ছাড়া অন্য সব বিভাগে শতকরা প্রায় ৮৯% ছাত্র/ছাত্রী বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চলের। নিয়োগ বাণিজ্য টেন্ডারবাজিসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার অবৈধ প্রভাবের ফলে আজ এটি একটি বিশেষ অঞ্চলের বিদ্যাপীঠে পরিণত হয়েছে। ওআইসি এবং আইডিবি এর শিক্ষাবৃত্তি আজ স্বপ্নের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়া ও পাকিস্তান এর বহু পরে প্রতিষ্ঠিত হয়েও আজ বিশ্ব মুসলিম উম্মার জ্ঞানবিজ্ঞানের অন্যতম আকর্ষণীয় কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জাতির বড়ই দুর্ভাগ্য যে, এটি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ না হয়ে লোকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় তার স্বকীয়তা নিয়ে মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্যের দিকে এগিয়ে যাবে এবং আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হবে এই প্রত্যাশা করেন সচেতন মহল।

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

error: কপি হবে না!