এবার নামমাত্র শ্রমে, অল্প ব্যয়ে ও স্বল্প সময়ে গাজর আবাদ করে অন্যান্য ফসলের তুলনায় অধিক লাভবান হচ্ছেন কৃষিসমৃদ্ধ অঞ্চল শেরপুরের কৃষকরা। কৃষকদের দাবি, গাজর আবাদে উৎপাদন খরচের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ লাভ পাওয়া যায়। উচ্চ মূল্যের এ সবজির উৎপাদন বেশি ও ভালো দাম পাওয়ায় শেরপুর সদরসহ সমগ্র জেলাতেই গাজর চাষে ক্রমেই আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় কৃষকদের।
জানা যায়, এবার জেলার প্রায় সব উপজেলাতেই গাজর চাষ হওয়ায় আশাতীতভাবে আবাদ হয়েছে ১৬৫ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে নকলা উপজেলায় ৫ হেক্টর জমিতে গাজর চাষ হওয়ায় চাষ করা সকল কৃষকই লাভবান হয়েছেন। স্থানীয় জালালপুর এলাকার কৃষক আব্দুল মোতালেব ৩৫ শতাংশ জমিতে বাণিজ্যিকভাবে গাজর চাষ করেছেন। এতে সবমিলিয়ে তার প্রায় ২২ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। কৃষি কর্মকর্তারা ক্ষেত পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, প্রায় ৭০ মণের মতো গাজর তুলতে পারবেন তিনি। প্রতিমণ গাজর বর্তমানে ৬/৭শ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে তার প্রায় ৩০ হাজার টাকা লাভ থাকবে বলে আশা করছেন তিনি। গাজর চাষে মোতালেবের লাভ দেখে এলাকার অনেক কৃষক এ সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
কৃষক মোতালেবের মতে, কয়েক বছর আগেও এলাকার অনেকেই গাজর সম্পর্কে তেমন জানতেন না। কিন্তু এখন গাজর সবার কাছে একটি অতি পরিচিত সবজি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। চন্দ্রকোনার শামীম জানান, ২০১৬ সালে প্রথমে ৫ শতাংশ জমিতে গাজরের আবাদ করে ভালো ফলন এবং দাম পেয়েছেন। পরের বছর থেকে তার দেখাদেখি অন্যান্য কৃষকরা গাজর চাষ শুরু করেন। নামমাত্র শ্রমে উৎপাদন বেশি ও ভালো দাম পাওয়ায় উপজেলার কয়েকশ কৃষক এরইমধ্যে গাজর চাষ করা শুরু করেছেন। মোতালেব আরও জানান, গাজর গাছের পাতা গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ তথা গুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। তাই গবাদি পশুর খাবারের জন্য পশুর মালিকরা গাজর গাছ তুলে পাতা নিয়ে যান; এতে শ্রমিক খরচ কম লাগছে। বাছুর আলগা গ্রামের কৃষক মোকছেদ আলী মাস্টারসহ অনেকেই জানান, তারা কয়েক বছর ধরেই নিজেদের চাহিদা মিটাতে সামান্য পরিমাণে গাজরের আবাদ করছেন। চন্দ্রকোনার কৃষক আজিম উদ্দিন, ধুকুড়িয়ার তাঁরা মিয়া, হাসেম আলী, নজরুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, আগামীতে তারা সকলেই কম করে হলেও গাজর চাষ করবেন। আবার অনেকেই জানান, আগামীতে তারা বাণিজ্যিকভাবে গাজর চাষ করার পরিকল্পনা করছেন। উৎপাদন ভালো হওয়ায় আগামীতে গাজর চাষের পরিমাণ ও চাষীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলেও জানান তারা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ ফজলুল হক মনি জানান, সাধারণত ভাদ্র মাসের শুরু থেকে মধ্য আশ্বিন পর্যন্ত গাজরের বীজ বপন করা হয়। ৮০-৯০ দিনের জীবনীকাল সম্পন্ন এ সবজি জাতীয় ফসল চাষ করে কৃষকরা যতটা লাভবান হন, তা অন্যকোন আবাদে কল্পনাও করা যায় না। তাই দিন দিন গাজর চাষের পরিমাণ ও চাষির সংখ্যা বাড়ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, গাজর একটি বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন সবজি। উপজেলায় এ বছর গত বছরের তুলনায় গাজরের আবাদ বেশি হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। গাজরের আবাদ বাড়াতে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কৃষকরা গাজর উত্তোলন শুরু করেছেন। অন্যান্য ফসলের তুলনায় গাজর চাষে লাভ বেশি পাওয়া যায়। নকলার মাটি গাজর চাষের উপযোগী হওয়ায় আগামীতে এ সবজির আবাদ কয়েকগুণ বাড়বে। এতে করে এখানকার উৎপাদিত গাজরে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য ফসলের মতো রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা সম্ভব হবে।