শ্যামলবাংলা ডেস্ক : আজ ২৬ মার্চ; মহান স্বাধীনতা দিবস। আজ বাঙালি জাতির গৌরবের দিন, আনন্দের দিন। পরাধীনতার শৃংখল ভেঙে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর দিন। জাতীয় জীবনের সবচেয়ে আলোচিত, সবচেয়ে গৌরবের স্মৃতি নিয়ে আবারও ফিরে এসেছে চির অম্লান, আনন্দ-বেদনায় মিশ্রিত সেই দিন।
এই স্বাধীনতা সংগ্রামের রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস ও পটভূমি। একদিনের ঘোষণায় বা কারও বাঁশির শব্দ শুনে গোটা জাতি জীবন বাজি রেখে মরণপণ লড়াই-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েনি। স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের জন্য গোটা বাঙালি জাতি ধাপে ধাপে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে প্রস্তুত হয়েছিল। অদ্ভুত দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির মাধ্যমে সৃষ্ট পাকিস্তানের শাসকদের অনাচার-অত্যাচার-শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির রক্ত সংগ্রামের চেতনার উšে§ষ ঘটতে থাকে। মাতৃভাষার দাবিতে সেই ’৪৮ সাল থেকে শুরু করে বায়ান্নর একুশে ফেব্র“য়ারির রক্তদান সংগ্রাম-আন্দোলন, ’৫৪-এর প্রাদেশিক নির্বাচনে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে জাতির রায়, ’৫৬-তে এসে সংবিধানে রাষ্ট্রভাষা বাংলার স্বীকৃতি আদায়, ’৬২-এর শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬ দফার মধ্য দিয়ে বাঙালির মুক্তিসনদ ঘোষণা, ’৬৯-এর ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের পতন এবং ১৯৭০-এ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরংকুশ বিজয়ের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এসেছে স্বাধীনতা। ’৭০-এর নির্বাচনে অভূতপূর্ব বিজয়ের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা নির্বাচিত হলেন। এতে করে অর্জন করলেন সাংবিধানিকভাবে দেশ পরিচালনার ক্ষমতা এবং স্বাধীনতা ঘোষণা করার অধিকার। ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’- উচ্চারণের ভেতরেই মূলত বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধের সবুজ সংকেত পেয়ে যায়। খুঁজে পায় গেরিলাযুদ্ধের গোপন কৌশল ও করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা। তার পরও ২৫ মার্চ মধ্যরাতে গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু বিডিআর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেন। এরপর জাতিকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সমগ্র জাতি দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ‘জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান বুকে ধারণ করে মরণপণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিপাগল বাঙালির রক্তের বন্যায় ভেসে যায় পাকিস্তানের দক্ষ, প্রশিক্ষিত ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত হানাদার বাহিনীর দু’লক্ষাধিক সদস্যের নির্যাতন, হত্যাযজ্ঞ, জ্বালাও-পোড়াও অভিযান ‘অপারেশন সার্চলাইট’। প্রায় এক কোটি মানুষের ভারতে আশ্রয় গ্রহণ এবং মুক্তিবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দান, রাশিয়ার অস্ত্র সরবরাহ ও কূটনৈতিক সমর্থন, সমগ্র মুক্তিকামী বিশ্ব ও জনতার আকুণ্ঠ সমর্থন এবং ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সহযোগিতায় মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধেই পৃথিবীর মানচিত্রে আরও একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের অভ্যূদয় ঘটল যার নাম বাংলাদেশ।
স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি : স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান দিনটি পালনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
আওয়ামী লীগ : ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। দলটির ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ২৬ মার্চ, ২০১৪ বুধবার সূর্যোদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৬টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ এবং বেলা ১১টায় জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে ‘লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত’ গাওয়া।
এছাড়াও ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সাজানো হবে। দেশের সব শিশু পার্ক, চিড়িয়াখানা, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর উন্মুক্ত থাকবে। সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে এবং মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্র, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশুসদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
