স্টাফ রিপোর্টার : আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি; বিশ্ব ভালোবাসা দিবস- যা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে’। দিনটি শুধুই ভালোবাসার। ‘সখী ভালোবাসা কারে কয়’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বহু বছর আগে এভাবেই ভালোবাসার অর্থ খুঁজেছিলেন। কারণ, ভালোবাসার অর্থ যে গভীর দ্যোতনাময়। দিনটি প্রিয় মানুষটিকে আরো বেশি কাছে পাওয়ার, আরো বেশি ভালোবাসার জানার ও বোঝার দিন। প্রেমিক-প্রেমিকারা মন খুলে বলবে তাদের হৃদয়ের কথা। প্রেমপিয়াসী হূদয়ের কাছে বিশেষ গুরুত্ব আছে এ দিনটির। বছরের এ দিনকে সারা বিশ্বের তরুণ-তরুণীরা বেছে নিয়েছে হূদয়ের ব্যাকুল কথার কলি ফোটাতে।
শুধু তরুণ-তরুণী নয়, নানা বয়সের মানুষের ভালোবাসার বহুমাত্রিক রূপ প্রকাশ করার আনুষ্ঠানিক দিন আজ। এ ভালোবাসা যেমন মা-বাবার প্রতি সন্তানের, তেমনি মানুষে-মানুষে ভালোবাসাবাসির দিনও এটি। শুধুমাত্র একটি দিন ভালোবাসার জন্য কেন এ প্রশ্নের জবাবে কবি মোহাম্মদ রফিকের ছোট জবাব ভালোবাসা একটি বিশেষ দিনের জন্য নয়। সারা বছর, সারা দিন ভালোবাসার। তবে আজকের এ দিনটি মানুষ বেছে নিয়েছে ভালোবাসা দিবস হিসেবে।
বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবস পালনের রীতি খুব বেশি দিনের নয়। মূলত: তরুণ-তরুণীদের মধ্যে দিবসটি ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। বসন্তের প্রথম দিন গেল গতকাল, আজ ভালোবাসার দিন। দুটি দিনই তাদের মধ্যে আনন্দ-উৎসবের। শুধু তারুণ্যই নয়, প্রৌঢ় থেকে শুরু করে শিশু, কিশোর, মধ্যবয়সীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এর আবহ।
ভালোবাসার দিবসের ইতিবৃত্ত : সেই ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের কথা, যখন ভালোবাসার গল্পটি শুরু হয়েছিল। রোমের চিকিৎসক তরুণ যাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের চিকিৎসায় দৃষ্টি ফিরে পেয়েছিল নগর জেলারের দুহিতা। পরে দু’জনের মধ্যে মন দেয়া-নেয়া হয়। সেই থেকে জন্ম নিয়েছিল তাদের ভালবাসার অমরগাথা। ভালবাসার অপরাধে ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’কে ফাঁসিতে ঝুলতে হয় ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখে। তারপর এই ভালোবাসার স্বীকৃতি পেতে দুই শতাব্দী নীরবে-নিভৃতে পালন করতে হয়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে।
৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে রোমের রাজা পপ জেলুসিয়াস এই দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। গ্রিক ও রোমান উপকথার মতই ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তি নিয়ে আরো গল্প-কাহিনী ছড়িয়ে আছে ভূবনজুড়ে। কে এই ভ্যালেন্টাইন- আজও তা রহস্যাবৃত। ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়া অনুসারে আমরা ৩ জন ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’ বা ভ্যালেন্টিনাসের সন্ধান পাই। তারা সবাই ১৪ ফেব্রুয়ারিতে আত্মদান করেন।
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন ডে পালনের রীতিটা মূলত ইউরোপীয় ঘরানার। আমাদের দেশে বিগত প্রায় দেড় দশক আগে এ দিবস পালনের সূচনা হয়। তবে বাঙালি সংস্কৃতিতে বসন্ত উৎসব সেই অনাদিকাল থেকেই যাপিত হচ্ছে। সনাতন ধর্মাচারীরা দোলযাত্রা, বাসন্তী পূজা, হোলি উৎসবে প্রণয়কে মুখ্য করে রেখেছিল, তরুণ-তরুণীর ভালোবাসাকে আপন করেছিল। আর এখন ভ্যালেন্টাইন ডে এ দেশের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে রূপ পায় এক বিরাট উৎসবে।
ইউরোপের সব দেশেই মহাসমারোহে তরুণ-তরুণীরা এ দিবস পালন করে। মার্কিনিদের মধ্যে ভ্যালেন্টাইন ডে পালনের হার বেশি। জরিপে দেখা গেছে, ৩ মার্কিনির মধ্যে ৩ জনই দিবসটি পালন করে। আমেরিকায় এ দিনে ১৬ কোটি কার্ড, ১৩ কোটি গোলাপ বিনিময় হয়। ভারতেও ভালোবাসা দিবস পালিত হয় উৎসবের আমেজে। তবে আমাদের দেশের মতো ভারতেও তরুণ-তরুণীরা এ দিবস পালন করে বেশি।