আজহারুল হক, গফরগাঁও : ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে ২৪ নভেম্বর রবিবার বিকেলে আ’লীগ-বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনায় পৌর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় ময়মনসিংহ ও ঢাকাগামী দুটি ট্রেন আটকা পড়ে। সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষ অন্তত দেড় শতাধিক রাউন্ড গুলি ছোড়ে এবং রেললাইনের পাথর নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৭০ জন নেতা-কর্মী গুলিতে ও পাথরের আঘাতে আহত হয়। এ সময় অর্ধশতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
জানা যায়, বিকেলে পৌর এলাকার শিবগঞ্জরোডস্থ বিএনপি কার্যালয় প্রাঙ্গনে শান্তিপূর্ন সমাবেশ উপজেলা বিএনপি সভাপতি এবি সিদ্দিকুর রহমানের সমাবেশ চলাকালে মিছিলসহ বিএনপির অপর একটি অংশ সমাবেশে যোগদানকালে রেলওয়ে স্টেশনে আ’লীগের হামলার শিকার হয়। পড়ে উভয় গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় রেলস্টেশন এলাকার রণক্ষেত্রে পরিনত হয়। উভয় দলের এ সংঘর্ষ মুহুর্তেই পৌর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। জানা যায়, এ সময় উভয় গ্রুপ অন্তত দেড় শতাধিক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। পুলিশ উভয় গ্রুপকে ছত্রভঙ্গ করতে প্রায় ৫০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও বেশ কিছু টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এতে উভয় পক্ষ ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। ভাংচুরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গফরগাঁও রেলওয়ে ষ্টেশানের বুকিং ক্লার্ক অফিস। অগ্নিকান্ডের শিকার তুলার গোডাউনে অগ্নিনির্ভাপক আগুন নেভায়। অগ্নিকান্ডে তুলার গোডাউন ও বাসভবন আক্রান্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, অন্তত ৩০ লাখ টাকার মালামাল আগুনে ভস্মিভুত হয়। ঘন্টাব্যাপী এই সংঘর্ষে গুলি ও রেল লাইনের পাথরের আঘাতে উভয় গ্রুপের অন্তত ৭০ জন নেতা-কর্মী, পুলিশ আহত হয়। সন্ধা পৌনে ৭টা এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছিল।
এদিকে সংঘর্ষের সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী মহুয়া ট্রেনটি গফরগাঁও রেলষ্টেশনের হোম সিগন্যাল থেকে নিরাপত্তার স্বার্থে কতৃপক্ষ পূর্ববর্তী মশাখালী ষ্টেশনে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। অপর আরেকটি ট্রেন ঢাকাগামী কমিউটার ট্রেনটি আউলিয়া নগর স্টেশনে আটকা পড়ে। গফরগাঁও রেলওয়ে ষ্টেশনের সহকারী ষ্টেশন মাষ্টার রফিকুল ইসলাম জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী ক্ষতিগ্রস্ত রেলষ্টেশন পরিদর্শন করে আটকে পড়া ট্রেন দুটি নিবিগ্নে রেলষ্টেশন পার করতে গফরগাঁও সার্কেলের সিনিয়র এএসপি মোস্তাফিজুর রহমানের সহযোগিতা নেন। রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সদস্য ও অতিরিক্ত পুলিশ আটকে পড়া দুটি ট্রেন যাতায়াতের ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবি সিদ্দিকুর রহমান জানান, অসাংবিধানিকভাবে সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রতিবাদে এবং নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবীতে শান্তিপূর্ন বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে আ’লীগ হামলা চালায়।
উপজেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক আঃ আজিজ সাদেক ও পৌর যুবদল সভাপতি সাইফুল ইসলাম রিপন জানান, গুলিতে ছাত্রদল নেতা এস এম নাঈম, রাজিব, যুবদলের কিরন, লিটন, সুজন, জুবায়ের, চঞ্চলসহ বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী গুলি বিদ্ধ হয়। অপরদিকে আ’লীগের মোলা শহিদ, সানিল, মিলটন, রফিকুল, নেওয়াজসহ ২০ নেতা-কর্মী আহত হয়। আহতদের মধ্যে গফরগাঁও থানা পুলিশের সদস্য রুবেল সংঘর্ষে আহত হয়ে গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছে। এ ঘটনায় ফজলে রাব্বি, রানা, কায়েশ, মিজানুল হক, হাদিউলসহ বিএনপি ১০ নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ।