ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি : নদনদী ভাঙন কবলিত ইসলামপুরে হাজার হাজার পুষ্টিহীন শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ছে। ঢাকঢোল পিটিয়ে বিমানে উড়ে এসে মাত্র ছয় হাজার শিশুর জন্য স্কুল মিল নামে ফিডিং কর্মসুচির উদ্বোধন করলেন দুই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। ২০০২ সালে চালু হওয়া জোট সরকারের খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা কর্মসূচি (ফিডিং প্রোগ্রাম) ২৬ জুলাই/০৯ বন্ধ হওয়ার পর মহাজোট সরকারের মেয়াদের মাত্র এক দিন বাকী থাকতে এ নতুন নামের কর্মসুচির উদ্বোধন করা হলো। ২৩ অক্টোবর বুধবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফসারুল আমীন, প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন দক্ষিন চিনাডুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের মাঝে দুপুরের খাবার {খিছুরি} বিতরণ করে প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হায়দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অস্টেলিয়ান হাইকমিশনার গ্রিক উইল ক্লর্ক, বিশ্ব খাদ্য সংস্থার কান্ট্রি ডাইরেক্টর ক্রিষ্টিয়া, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিব কাজী আকতার হোসেন, মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ উপস্থিত ছিলেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, অস্টেলিয়ান সরকারের অর্থায়নে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার সহায়তায় উপজেলার পলবান্দা ও চিনাডুলী ইউনিয়নের ২৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এবতেদায়ী মাদরাসার ছয় হাজার শিশুকে ডিসেম্বর ২২০১৪ সাল পর্যন্ত এক বছর দুপুরে খিছুরী খাওয়ানো হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য রাখার সময় জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হায়দার বলেন- সরকারের শেষ সময়ে প্রকল্প শুরু করায় প্রকল্পটি যেন বন্ধ না হয় সে জন্য আবারো নৌকায় ভোট দিন। জেলা প্রশাসকের এ বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেস বুকে প্রকাশ হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
জানা যায়, নদী ভাঙন কবলিত ইসলামপুর উপজেলার শিশুদের পুষ্টহীনতা দুর করতে ও শত ভাগ শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে ৭৯টি সরকারি, ৬৩টি রেজিষ্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩৩টি এবতেদায়ী মাদরাসা, সাড়ে ৩০০ আনন্দ স্কুলের ৮০ হাজার শিশুর জন্য এক যোগে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালু করেন। ওই কর্মসূচির আওতায় অ্যামেরিকান দাতা সংস্থা ল্যান্ড ল্যাক্সের সহায়তায় প্রতিদিন এক প্যাকে পুষ্টিকর বিস্কুট ও ২০০ মিলি লিটার দুধ দেওয়া হয়। এতে শত ভাগ শিশু স্কুল মুখি হয় এবং পুষ্টিহীনতা হ্রাস পায়। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিশুর হার ও শূন্যের কোটায় চলে আসে। সাত বছর পর ২৬ জুলাই/০৯ দেশের দরিদ্রতম এ জনপদের শিশুদের দুপুরের এক বেলা পুষ্টিকর খাবারের কর্মসূচীটি বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকে আবারো প্রতি বছর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অর্ধেকেরও বেশী শিশু ঝরে পরেছে বলে জানান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ। এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা শেখ হাসিনার প্রসংশা করেন। সূত্র জানায়, ২০১২ শিক্ষাবর্ষে ইসলামপুর উপজেলায় ৬৫ হাজার শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও সমাপনি পরীক্ষা দিয়েছে অর্ধেকেরও কম শিশু। যাদের মধ্যে সাত হাজার শিশু প্রাথমিক শিক্ষা থেকে চির দিনের জন্য ঝরে পড়েছে।