ads

শুক্রবার , ৫ এপ্রিল ২০১৩ | ২৫শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

পবিত্র কোরআনের আয়াত বিকৃত করে আনিসুল হকের গদ্যকার্টুন

শ্যামলবাংলা ডেস্ক
এপ্রিল ৫, ২০১৩ ৯:১৭ অপরাহ্ণ

anisul_hoque.thumbnailপ্রথম আলো পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক আনিসুল হকের বিরুদ্ধে কোরআন অবমাননার অভিযোগ উঠেছে। ‘ছহি রাজাকারনামা’ নামে তার একটি ব্যঙ্গাত্মক রচনায় পবিত্র কোরআনের কয়েকটি আয়াতকে সম্পূর্ণ বিদ্রূপাত্মক ভাষায় লেখা হয়। লেখাটি নিয়ে ফেসবুক, ব্লগসহ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন সাইট এবং সচেতন মহলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। উল্লেখ্য, কথাশিল্পী আনিসুল হক ইসলামবিদ্বেষী শাহবাগিদের আন্দোলনের সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট। শাহবাগ আন্দোলনের মঞ্চে এবং আন্দোলনকারীদের পারস্পরিক বিরোধ মীমাংসায়ও তাকে ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। সম্প্রতি ইসলামবিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত সচলায়তন ব্লগে আনিসুল হকের ‘ছহি রাজাকারনামা’ লেখাটি প্রকাশ পায়। সচেতন ব্লগার ও ফেসবুক ব্যবহারকারীরা সঙ্গে সঙ্গে লেখাটি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এই ক্ষোভ ধীরে ধীরে বিভিন্ন মহলে ছড়িয়ে পড়ছে। অবশ্য আনিসুল হকের এ লেখাটি প্রথম প্রকাশ পায় ১৯৯১ সালের ১২ এপ্রিল পূর্বাভাস পত্রিকায়। ১৯৯৩ সালে লেখাটি আনিসুল হকের ‘গদ্যকার্টুন’ বইতে স্থান পায়। ২০১০ সালে এই বইটি পুনরায় মুদ্রণ করে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সন্দেশ। বইটিতে পর্দানসিন নারী ও দাড়ি-টুপিধারী আলেমদের নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র এঁকেছেন শিশির ভট্টাচার্য। বইটি উত্সর্গ করা হয়েছে আওয়ামীপন্থী সাংবাদিক, একাত্তর টিভির ব্যস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু ও সাবেক ছাত্রনেতা জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকুকে। সচলায়তন ব্লগে শাহবাগি আন্দোলনের পক্ষে লেখাটি প্রকাশ করা হয়।

Shamol Bangla Ads

পবিত্র কোরআনের প্রথম সুরার প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে-‘সমস্ত প্রশংসা জগতের প্রতিপালক আল্লাহর’। আনিসুল হক তার ‘সহি রাজাকারনামা’য় লিখেছেন, ‘সমস্ত প্রশংসা রাজাকারগণের’। সুরা ফাতেহার আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য চাই।’ আনিসুল হক ব্যঙ্গ ও বিকৃত করে লিখেছেন, ‘আর তোমরা রাজাকারের প্রশংসা করো, আর রাজাকারদের সাহায্য প্রার্থনা করো।’
পবিত্র কোরআনের সুরা দোহার ৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়-‘নিঃসন্দেহে তোমাদের জন্য পরবর্তী যুগ পূর্ববর্তী যুগের চেয়ে ভালো।’ আনিসুল হক বিদ্রূপ করে লিখেছেন, ‘নিশ্চয়ই রাজাকারগণের জন্য অতীতের চাইতে ভবিষ্যেক উত্তম করিয়া সৃজন করা হইয়াছে।’
পবিত্র কোরআনের সুরা নিসার ৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়, ‘আর তোমরা ভয় কর যে, ইয়াতিম মেয়েদের হক যথাযথভাবে পূর্ণ করতে পারবে না; তবে সেসব মেয়েদের মধ্য থেকে যাদের ভালো লাগে বিয়ে করে নাও দুই, তিন বা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে একজনকেই (বিবাহ কর), অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদের (বিবাহ কর)।’ আনিসুল হক এ আয়াতের বিপরীতে ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, ‘সেই ব্যক্তিই উত্তম রাজাকার, যে বিবাহ করিবে, একটি, দুইটি, তিনটি, চারটি, যেরূপ সে ইচ্ছে করে আর তাহার জন্য বৈধ করা হইয়াছে ডান হাতের অধিকারভুক্ত দাসীদের, আর তাহারা ভোগ করিতে পারিবে বাঙালিরমণীগণকে, অপিচ তাহাদের সহিত আদল করিবার দরকার হইবে না। স্মরণ রাখিও, মালেগণিমতগণের সহিত মিলিত হইবার পথে কোনোরূপ বাধা থাকিলো না।’
পবিত্র কোরআনের সুরা মুরসালাতের ১৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়, ‘আমি কি আগের লোকদের (অবিশ্বাসী জালেম) ধ্বংস করিনি?’ আনিসুল হক এ আয়াতের ব্যঙ্গ করে লিখলেন, ‘গ্যালিলিও নামের এক পাপিষ্ঠ অতীতে সত্য অস্বীকার করিয়াছিল এবং সে কি প্রাপ্ত হয় নাই চরম শাস্তি।’
পবিত্র কোরআনের সুরা নাবার ৩১-৩৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘অপরদিকে পরহেজগার লোকদের জন্য রয়েছে চরম সাফল্য। (তা হচ্ছে) বাগবাগিচা, আঙ্গুর (ফলের সমারোহ), (আরো আছে) পূর্ণ যৌবনা সমবয়সী সুন্দরী তরুণী।’ আনিসুল হক এ আয়াতের বিকৃত করে লিখেছেন, ‘আর তাহাদের জন্য সুসংবাদ। তাহাদের জন্য অপেক্ষা করিতেছে রাষ্ট্রের শীর্ষপদ আর অনন্ত যৌবনা নারী আর অনন্ত যৌবন তরুণ। কে আছে, যে উত্তম সন্দেশ, মসৃণ তলদেশ ও তৈলাক্ত গুহ্যদেশ পছন্দ করে না।’
এভাবেই কোরআনের আয়াতকে বিকৃত করে আনিসুল হক লিখেছেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রভু পাকিস্তানের প্রশংসা কর। নিশ্চয় তোমাদের প্রভু পাকিস্তানীরা ক্ষমতাশীল।’
আনিসুল হকের ‘ছহি রাজাকারনামা’ লেখাটির প্রতিটি বাক্যেই পবিত্র কোরআনের বাকভঙ্গি ও কোরআনের বাংলা অনুবাদের ক্লাসিক ভাষা ব্যবহার করে কোরআনের আয়াতকে ব্যঙ্গ ও বিকৃত করা হয়েছে।
২০১০ সালে ‘সন্দেশ’ থেকে প্রকাশিত আনিসুল হকের বইটিতে ‘ছহি রাজাকারনামা’ ছাড়াও ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত’, ‘নমিনেশন ইন্টারভিউ গাইড’সহ কয়েকটি লেখায় ইসলামি সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক নিয়ে বিদ্রূপ করা হয়েছে।
পবিত্র কোরআনের আয়াত নিয়ে এ ধরনের ব্যঙ্গ-বিদ্রূপাত্মক রচনা বাংলা ভাষায় নজিরবিহীন। বাংলা সাহিত্যের সেরা কবি-সাহিত্যিকরা শত শত বছর ধরে পবিত্র কোরআনের প্রশংসা করে বহু কবিতা-গান রচনা করেছেন ও করছেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কবি নবীন চন্দ্র সেনকে নিয়ে লেখা ‘নবীনচন্দ্র’ কবিতায় নিজেকে ‘কোরআনের কবি’ বলে পরিচয় দিয়েছেন। নজরুল কোরআনের আমপারা অংশের কাব্যানুবাদ করেছেন। গানে ও কবিতায় পবিত্র কোরআনের সুরা ফাতেহার অনুবাদ করেছেন গোলাম মোস্তফা, সুফিয়া কামাল, ফররুখ আহমদ, মতিউর রহমান মল্লিকসহ বাংলাদেশের প্রথম সারির অনেক কবি-সাহিত্যিক। বাংলা সাহিত্যের এক সময়ের জনপ্রিয় কবি ও চিন্তাবিদ শেখ ফজলল করিম পবিত্র কোরআন নিয়ে রচনা করেছেন সুদীর্ঘ অনবদ্য কবিতা ‘কোর-আন’। এ কবিতায় তিনি লিখেছেন-‘বিশ্ব-মানব মঙ্গল-সেতু আমাদের ফোরকান’ এবং ‘বিশ্ব মানব মুক্তির হেতু আমাদের কোরআন’।
হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাই গিরিশ চন্দ্র সেন কোরআনের গদ্য অনুবাদ করেছেন। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত কোরআনের কয়েকটি সুরার অনুবাদ করেছেন কবিতায়। অন্য ধর্মাবলম্বী হলেও এদের বিরুদ্ধে কখনও কোরআন বিকৃতির অভিযোগ ওঠেনি। সচেতন মহল বিস্ময় প্রকাশ করেছে, বাংলাদেশের একজন মুসলমান লেখক ও সাংবাদিক হয়ে আনিসুল হক কীভাবে এ ধরনের ভয়াবহ বিকৃত রচনা লেখা লিখতে পারলেন?
নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করলেন আনিসুল হক : লেখক আনিসুল হক তার লেখাটির জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। প্রকারান্তরে তার লেখাটিতে ইসলাম অবমাননা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, ‘তারপরও যদি কেউ এ লেখাটি পড়ে আহত বোধ করেন তাহলে আমি নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থী এবং আমার ক্ষমাপ্রার্থনা হচ্ছে মহান আল্লাহর কাছে।’
গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে আনিসুল হকের মোবাইল ফোনে এ বিষয়ে কথা হয় প্রতিবেদকের। কোরআন অবমাননার বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলেন, ‘এটা নিয়ে না লিখলে কি হয় না?’ কিন্তু লেখাটি নিয়ে ফেসবুক, ব্লগ ও সচেতন মহলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, আমাদের কাছে প্রচুর অভিযোগ আসছে-জানানো হলে আনিসুল হক বলেন, ‘জিনিসটা ২৩ বছর আগে লেখা। আমার মনেও পড়ে না।’ আনিসুল হক দাবি করে বলেন, ‘আমার এখনকার বইতে লেখাটি নেই।’ ২০১০ সালে ‘সন্দেশ’ কর্তৃক প্রকাশিত বইতে লেখাটি আছে জানালে তিনি বলেন, ‘আছে নাকি, বলেন কি, লেখাটি তো এখানে থাকার কথা না।’ কিন্তু লেখাটি তো বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ছে এবং তোলপাড় হচ্ছে জানালে তিনি আবারও বলেন, ‘আমার কথা হচ্ছে, এটা নিয়ে না লিখলে কি হয় না?’ এরপর তিনি এ ব্যাপারে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে কথা বলবেন বলে ফোন ছেড়ে দেন।
এর ঘণ্টাখানেক পর আবারও কথা হয় আনিসুল হকের মোবাইল ফোনে। ‘ছহি রাজাকারনামা’ শিরোনামের লেখাটিতে কোরআন অবমাননা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পবিত্র কোরআন শরিফ, পবিত্র ধর্ম ইসলামের ওপর আমার পূর্ণ ঈমান আছে। আমি ইসলামের আদেশ-নিষেধ মেনে চলি। আমার যে লেখাটি নিয়ে কথা হচ্ছে, এটি আসলে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রবর্তিত বাংলাভাষার নমুনা। প্রধানত মিশনারিরা ইংরেজি থেকে বাংলার ক্ষেত্রে এ ভাষা ব্যবহার করতেন।’ আনিসুল হক বলেন, ‘মহান আল্লাহতায়ালা কোরআনে বলেছেন, তিনি নিজে কোরআন শরিফের পবিত্রতার রক্ষক। ইসলামের আদি যুগে কেউ কেউ বলেছিল কোরআন শরিফের মতো অনুরূপ আয়াত তারাও রচনা করতে পারে। তখন তাদেরকে চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছিল। তারা কেউ পারেনি কোরআনের মতো পঙিক্ত রচনা করতে।’
আনিসুল হক আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, ‘আমার নিজের পক্ষ থেকে পবিত্র কোরআন শরিফকে ব্যঙ্গ করার বা প্যারোডি করার প্রশ্নই আসে না। কোরআন শরিফ ছন্দ ও অন্তমিল দিয়ে লিখিত। আমার এ লেখাটির কোথাও ছন্দ ও অন্তমিল নেই।’ তিনি বলেন, ‘তারপরও যদি কেউ এ লেখাটি পড়ে আহত বোধ করেন, তাহলে আমি নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থী এবং আমার ক্ষমা প্রার্থনা হচ্ছে মহান আল্লাহর কাছে।’
-‘দৈনিক আমার দেশ’ পত্রিকার প্রতিবেদন

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

Shamol Bangla Ads
error: কপি হবে না!