ads

রবিবার , ১৭ নভেম্বর ২০২৪ | ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

বরগুনার মিন্নিকাণ্ডও হার শেরপুরের আন্নিকাণ্ডে

রফিকুল ইসলাম আধার , সম্পাদক
নভেম্বর ১৭, ২০২৪ ৫:৫৬ অপরাহ্ণ

ত্রিভুজ প্রেমের বলি কলেজ ছাত্র সুমন

বরগুনার বহুল আলোচিত মিন্নি কাণ্ডকেও হার মানিয়েছে শেরপুরের আন্নি কাণ্ড। মিন্নি কাণ্ডে নিজের সামনেই প্রকাশ্য দিবালোকে স্বামী রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রেমিক নয়ন বন্ড। আর আন্নি কাণ্ডে কেবল নিজের সামনে নয়, অন্য প্রেমিক রবিউল ইসলাম রবিনকে নিয়ে পরিকল্পনা এবং ঘুমের ঔষধ মেশানো কোক সেবন করিয়ে নিস্তেজের পর দুজনে মিলে প্রথম প্রেমিক কলেজছাত্র সুমন মিয়াকে শ্বাসরোধে হত্যা করে দুজনে ভাগাভাগি করে কোদালে মাটি খুঁড়ে রবিনের উঠানের মাচার নিচে পুঁতে রেখেছে লাশ। এর পর দুজনে ফ্রেশ হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় রবিনের বাসায় রাত্রিযাপন করে পরদিন সকালে ফিরেছে যার যার অবস্থানে। তবে দুজনেরই হয়নি শেষ রক্ষা। শনিবার সরেজমিনে ঘুরে ঘটনা পরস্পরায় মিলেছে এমন তথ্য।

Shamol Bangla Ads

মামলা, ঘাতক রবিনের স্বীকারোক্তি, আদালত ও পুলিশসহ স্থানীয় সূত্রে প্রকাশ, কলেজছাত্র সুমন মিয়া ও সাঈদা মুস্তাকিন ওরফে আন্নি ক্লাসমেট ছিলেন। তারা শেরপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী। সুমন শহরের বারেকপাড়া নিমতলা এলাকার দরিদ্র রাজমিস্ত্রি নজরুল ইসলামের পুত্র এবং আন্নি শ্রীবরদী উপজেলার কাউনেরচর এলাকার অধিবাসী আজিম মাস্টারের কন্যা। আন্নি শহরের বাগরাকসা কাজীবাড়ি পুকুর এলাকায় মেসে বসবাস করে আসছিল। ওই অবস্থায় দীর্ঘদিন যাবত তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। একপর্যায়ে তাদের ওই সম্পর্কের বিষয়ে জেনে যায় উভয়ের পরিবার। কিন্তু সুমনের পরিবারের দৈন্যদশার দিকে তাকিয়ে আন্নি শহরের সজবরখিলা মহল্লার পুলিশ কনস্টেবল ফুরকান আলীর ছেলে ও ময়মনসিংহ নটরডেম কলেজের একাদশ শ্রেণীর ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম রবিনের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং তার সাথে রীতিমত শুরু হয় নানা জায়গায় ঘোরাফেরাসহ প্রেম আড্ডা। ওই অবস্থায় আন্নি সুমনের প্রতি উদাসীন ও অমনোযোগী হয়ে পড়ে। সুমন বারবার আন্নির কাছে ধন্যা দিলেও সে তাকে পাশ কাটিয়ে চলতে থাকে। এ নিয়ে দুজনের সম্পর্কে দূরত্ব সৃষ্টি হলে বিষয়টি সুমন আন্নির পরিবারকে জানালে তারা সুমনের কাছেই তাকে বিয়ে দিতে সম্মত হয়। কিন্তু বাধসাধে আন্নি ও অন্য প্রেমিক রবিন।

আন্নি অগত্যা পরিবারের লোকদের ভুল বুঝিয়ে সুমনকে তার জীবন থেকে সরিয়ে দিতে রবিনের সাথে কথা বলে নতুন পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত ৩ নভেম্বর আন্নি সুমনকে বিয়ের কথা বলে তাকে নিয়ে ঘুরাফেরা ও কেনাকাটা করে। ৪ নভেম্বর আন্নি ফোনে রবিনকে ময়মনসিংহ থেকে শেরপুরে আনে এবং বিকেলে শহরের খরমপুর এলাকার ফাস্টফুডের দোকানে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে। এরপর কিছু লাচ্ছি ও ওরেঞ্জ জুস সে মেসে নিয়ে তাতে এবং রান্না করা খাবারে ঘুমের ঔষধ মেশায়। তারপর আন্নি সুমনকে কাজীবাড়ি পুকুর পাড় থেকে রিক্সা নিয়ে ঘুরাফেরা করে এবং কোক ও রান্না করা খাবার খাওয়ায়। তারপর সে মাতলামি শুরু করলে অন্য প্রেমিক রবিনের বাসায় নিয়ে যায়। ওই সময় রবিন ও আন্নি ধরাধরি করে সুমনকে বাসায় ওঠায়। আর ওই অবস্থায় রবিন ফাস্টফুডের দোকান থেকে বাসায় ফিরে আগেই ঘুমের ঔষধ মেশানো লাচ্ছি খাওয়ালে কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মা ঘুমিয়ে পড়ায় সুমনকে কিছুটা অচেতন অবস্থায় আন্নি ও রবিন তার গলাচিপে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে সুমনের লাশ গুম করতে আন্নি ও রবিন রাত ১১/১২ টার দিকে রবিনের বাড়ির উঠানে মাচার নিচে দুজনে ভাগাভাগি করে ৩ ফুট মাটি খুঁড়ে তার লাশ পুতে রাখে। এর আগে সুমনের পড়নের কাপড়গুলো খুলতে না পেরে ব্লেট দিয়ে কেটে নিয়ে সেগুলো ময়লার স্তুপে ফেলে দেয়। তার পর তারা হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে রুমে চলে যায়। তখনও বাসায় রবিনের মা অচেতন থাকায় তারা একই রুমে শুয়ে রাত্রিযাপন করে। এরপর ভোর ৫টা/৬টার দিকে আন্নি তার বাসায় চলে যায়। আর রবিন ঘটনার পর ৪ দিন বাসায় অবস্থান করে ৭ নভেম্বর ময়মনসিংহে চলে যায়। নিয়মিত ক্লাসে ও প্রাইভেটে অংশ নেয়।

Shamol Bangla Ads

এদিকে সুমনের হদিস না পেয়ে এবং ব্যবহৃত মোবাইল বন্ধ থাকায় তার বাবা নজরুল ইসলাম ৫ নভেম্বর শেরপুর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। ৫ দিন পরও হদিস না পাওয়ায় তার পরিবার হতাশ হয়ে পড়েন এবং শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলামের শরণাপন্ন হন। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় ১০ নভেম্বর সদর থানায় সুমনের প্রেমিকা আন্নি আক্তার (১৯) কে প্রধান আসামি এবং আরও অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনকে আসামি করে একটি অপহরণের মামলা রুজু হয়। এরপর পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন আন্নি ও তার বাবা আজিজ মাস্টার। আন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনা মোড় নেয় অন্যদিকে। আন্নির দেওয়া তথ্যে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে ১১ নভেম্বর ময়মনসিংহে গিয়ে পুলিশ গ্রেফতার করে আন্নির অন্য নায়ক রবিনকে। পরে থানা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রবিন ঘটনার আদ্যোপান্ত স্বীকার করে এবং তার দেখানোমতে নিজ বাসার মাচার নিচে মাটিতে পুতে রাখা সুমনের উলঙ্গ লাশ উদ্ধা করে পুলিশ। সেইসাথে ১২ নভেম্বর রবিন আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়। অবশ্য জবানবন্দিতে সে আন্নিকে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে চিনে এবং নিজেকে প্রথম প্রেমিক হিসেবে দাবি করে। প্রকাশ করে তার সাথে শারীরিক সম্পর্কের তথ্যও। তবে পুরো ঘটনার সময়কালে বাসায় থাকা তার মা আদৌ ঘুমের ঔষধ মেশানো লাচ্ছি খেয়ে ঘুমন্ত ছিলেন কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

অন্যদিকে আন্নি কাণ্ডের পর কলেজ ছাত্র সুমনের সহপাঠীসহ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক আর সচেতন মহল ঘাতকদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করে তাদের ফাঁসি দাবি তুলেছেন। ইতোমধ্যে শহরে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন হয়েছে। তবে দুই ঘাতকই কারাগারে থাকলেও তাদের দুজনকেই অপ্রাপ্তবয়স্ক দাবির প্রেক্ষাপটে সুমনের পরিবার বা বাদী পক্ষের মাঝে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। জন্ম নিবন্ধন সূত্রে অপ্রাপ্ত বয়স্ক দাবির কারণে ঘাতক মিন্নির পুলিশ রিমান্ডের আবেদন না মঞ্জুর করে তাকে রাখা হয়েছে গাজীপুরের টঙ্গী কিশোর উন্নয়নকেন্দ্রে। অবশ্য সেখানেই তাকে দুদিনের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সুমনের বাবা নজরুল ইসলামের দাবি, তার ছেলের হত্যাকাণ্ডে আন্নি ও রবিনের পরিবারের লোকজনও জড়িত রয়েছে। তিনি তদন্ত সাপেক্ষে তাদেরকেও গ্রেফতার এবং জড়িত সকলের ফাঁসি দাবি করেন।

চাঞ্চল্যকর সুমন হত্যা মামলার আইনজীবী এ্যাডভোকেট সাব্বির হাসান উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ঘটনার পারিপার্র্শ্বিকতাই বলে সুমন হত্যাকাণ্ডে প্রেমিকা আন্নি ও তার অন্য প্রেমিক রবিনের সাথে আরও লোক জড়িত রয়েছে। কারণ দুজন শিক্ষার্থী ও কোদাল চালনায় অনভ্যস্থ ছেলে-মেয়ের দ্বারা ৩ ফুট মাটি খোঁড়া এবং তাতে লাশ পুতে রাখা সম্ভব হয়নি। এছাড়া সেদিন রবিনের বাসায় তার মা ছিল। তিনি আদৌ ঘুমের ঔষধ মেশানো কোক খেয়ে অচেতন ছিলেন কিনা, তা নিয়েই সংশয় রয়েছে। তাই তাদেরকেও দ্রুত শনাক্তকরণ সাপেক্ষে আইনের আওতায় নিয়ে আসাসহ আন্নি ও রবিনের বয়স নির্ধারণী পরীক্ষার জন্য পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তিনি। সেইসাথে তিনি ওই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আলামতও দ্রুত জব্দ করতে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

এ ব্যাপারে শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম জানান, কলেজ ছাত্র সুমন হত্যা মামলায় ইতোমধ্যে আন্নি ও তার অন্য প্রেমিক রবিনসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একজন আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে, অন্যজনকে জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ওই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা এবং গ্রেফতার ২ আসামির বয়স পরীক্ষার প্রয়োজন আছে কিনা তা তদন্তেই গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Need Ads

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

Shamol Bangla Ads
error: কপি হবে না!