এম লুৎফর রহমান, নরসিংদী : শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের অবহেলিত গ্রাম কামরাব ঋষি পাড়াকে আলোকিত করার মহান উদ্যোগ নিলেন নরসিংদীর জেলা প্রশাসক মোঃ ওবায়দুল আজম।

গত ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় এক আনন্দঘন পরিবেশে কামরাব ঋষিপাড়া গ্রামের অসহায়, দরিদ্র, শিক্ষা বঞ্চিত নারী-পুরুষ-শিশুরা বরণ করে নেয় জেলা প্রশাসক মোঃ ওবায়দুল আজমকে। জেলা প্রশাসক তাদের মাঝে দীর্ঘ সময় কাটান বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে।
জেলা প্রশাসক মোঃ ওবায়দুল আজমকে পেয়ে গ্রামবাসী যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়ে যায়। বিভিন্ন মওসুমে রাজনৈতিক নেতারা এ গ্রামে এসে বিভিন্ন মন ভুলানো মিথ্যা আশ্বাস দিলেও পরক্ষণেই তা বিলুপ্ত হয়ে যায়।
এ উপলক্ষে ঋষিপাড়া মন্দির প্রাঙ্গণে শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা বেগমের সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা ও সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। জেলা প্রশাসক মোঃ ওবায়দুল আজম প্রায় ১২ শত হিন্দু উধ্যুষিত এ গ্রামে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় হতভাগ হয়ে পড়েন। নাই কোন বিদ্যুতের আলো। এভাবেই অশিক্ষা-কুশিক্ষার মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করছে গ্রামের মানুষ। কিছু কিছু সামর্থবান ব্যক্তির ছেলে মেয়েরা অনেক দুরে স্কুলে লেখাপড়া করলেও অধিকাংশ লোকের ছেলে মেয়েরাই লেখাপড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। নাই রাস্তা ঘাট। শবদাহ করার জন্য নেই কোন শ্মশান। হিন্দু লোকজন মারা গেলে যার যার ভাবে কোন রকমে শবদাহ করা হয়। স্থানীয় একটি দালালচক্র গ্রামে বিদ্যুৎ দেয়ার আশ্বাস দিয়ে অসহায় লোকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় প্রায় তিন লাখ টাকা। গ্রামে এসকল সমস্যা সমাধানে জেলা প্রশাসক এগিয়ে যান তাদের মধ্যে। তিনি ইতি মধ্যেই ছায়া বিথী বিদ্যানিকেতন নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। গ্রামের বিদ্যুৎ উন্নয়নের জন্য পল্লী বিদ্যুতের স্থানীয় ডিজিএমকে সাথে নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রামের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌছে দিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং অতি দ্রæত বিদ্যুতের আলো ঘরে ঘরে পৌছবে বলে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম আশ্বাস প্রদান করেন। এছাড়া গ্রামের রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, শবদেহ দাহের জন্য অবিলম্বে শ্মশান নির্মানের পদক্ষেপ নিয়েছেন।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম মৃধা, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জমিদাতা জোৎস্না বেগম, বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ্ব আঃ মোমেন সরকার, সরোজ কুমার সাহা, অধ্যাপক আমির হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যান এমরান হোসেন বাচ্চু, সমাজ সেবিকা অর্চনা ব্যানার্জী, রতন বাবু ,পল্লী বিদ্যুৎ এর জিএম, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রমুখ ।
জেলা প্রশাসক বলেন, সংখ্যালঘু হিসেবে নয়। মানবতার কল্যাণে ছুটে এসেছি। আজ থেকে এ গ্রাম হবে আমার গ্রাম। যেখানেই থাকি চিরদিন এই গ্রামের মানুষের প্রতি অকৃতিম ভালবাসা থাকবে। এর উন্নয়ণে সার্বিক সহযোগিতা করে যাব।
আলোচনা শেষে শিশুদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক মো: ওবায়দুল আজম। বিদ্যালয়টির উন্নয়ন কাজে উপস্থিত প্রধান ও বিশেষ অতিথি বর্গ তাৎক্ষণিকভাবে নগদ প্রায় পাঁচ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করেন।
