ads

সোমবার , ৩১ মার্চ ২০১৪ | ৫ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

গ্রন্থ আলোচনা : যমুনার দুই মেয়ে ও হাঙর

রফিকুল ইসলাম আধার , সম্পাদক
মার্চ ৩১, ২০১৪ ৭:৪৪ অপরাহ্ণ

তালাত মাহমুদ

emailতুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়/ দুখের দহনে করুণ রোদনে তিলে তিলে তার ক্ষয়………………। যমুনার দুই মেয়ে ও হাঙর উপন্যাসটি পড়ে বাংলাদেশের জনপ্রিয় শিল্পী আব্দুল জব্বারের গাওয়া এই গানটি আমার মনে কেন যেন দোলা দিয়ে যায়। 

Shamol Bangla Ads

প্রিয় পাঠক, এককালের প্রমত্তা যমুনা তার দুই ধারের ফসলের মাঠ, গাছপালা, ঘর-বাড়ি, হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কত বন্দর- নগর আর অফিস-আদালত একের পর এক গ্রাস করে চলেছে! কত স্বচ্ছল পরিবার খরস্রোতা যমুনার ভাঙ্গনের কবলে পড়ে মূহুর্তেই সর্বশান্ত হয়েছে। সুনাম,যশ, খ্যাতি আর প্রভাব-প্রতিপত্তি নিয়ে এককালে যারা যমুনার পাড়ে বসবাস করত তারাই আজ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে গিয়ে অস্বাস্থ্যকর বস্তিতে বসবাস করছে। ঠেলাগাড়ি, রিকশা আর ভ্যানগাড়ি চালিয়ে কিংবা দিনমজুরী করে অতি মানবেতর জীবন যাপন করছে। আর মহিলারা বাসায় বাসায় ঝি-এর কাজ করছে। এদের সন্তানদের লেখাপড়ার কোন ব্যবস্থা নেই।
পাশাপাশি যমুনার বুকে জেগে উঠা চরে অনেক বাস্তুহারা মানুষ জীবন ও জীবিকার তাগিদে বসতি স্থাপন করে চাষাবাদ, দিনমজুরী আর খেয়া পারাপারের মাধ্যমে প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে কোনমতে টিকে আছে। নদী সিকস্তী অঞ্চলের ভাগ্যহত মানুষের সংগ্রামী জীবনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে যমুনার দুই মেয়ে ও হাঙর উপন্যাসে। লেখক ছানোয়ার হোসেন এখানে নানা চরিত্রের ও স্বভাবের মানুষকে তার উপন্যাসে তুলে ধরেছেন। উপন্যাসের শুরু বিশরশিরচর গ্রাম নিয়ে। এ গ্রামের পূর্ব নাম ছিল সুখচর। যমুনার নিকটবর্তী হওয়ায় উর্বর মাটিতে জীবন ছিল প্রকৃতির নিবিড় ভালবাসায় ছন্দময়..। বিশরশি যেতে ইসলামপুর থেকে দুইটি রাস্তা গুঠাইল ঘাট এবং উলিয়া বাজার। গুঠাইল থেকে নদী পথে গিয়ে নামতে হবে শিলদহ খেয়াঘাটে। তারপর পায়ে হেঁটে দুই ঘণ্টার পথ……….।
বিশরশিরচরে অনেকের মাঝে থাকে মতিউর তার কিশোরী ও বোবা মেয়ে শেফালী। রহমান মাঝি, জোব্বার মতব্বর, মিয়া বংশের সন্তান আরিফ, মুন্সি, রমজান, মহিষ পালের মালিক কাদের, করিম, আমজাদ, নিতাই নাপিত এগুলো লেখকের উপন্যাসের নির্বাচিত চরিত্র। এছাড়া চেয়ারম্যান ও তার পরিবার এবং শহরে বসবাসকারী মানিক মিয়ার উলে­খ পাওয়া যায়। চামচা কামরুল। সে দূশ্চরিত্র। বন্যার সময় ত্রাণ শিবিরে শেফালীর উপর কামরুলের লুলোপ দৃষ্টি পড়ে। শেফালী কথা বলতে না পারলেও বুদ্ধি খাটিয়ে নিজেকে রক্ষা করে। ত্রাণ শিবিরে চোর ঢোকেছে বলে কৌশলে বেঁচে যায় লোচ্চা কামরুল।
শিল্পপতি এজাজ আহমেদ ঢাকা থেকে এসেছেন বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে। এর আগেরবার বন্যার সময় তিনি ত্রাণ দিতে এসছিলেন। চেয়ারম্যান তাকে সহযোগিতা করে চলেছেন। ত্রাণ শিবিরে বোবা মেয়ে শেফালীকে দেখে এজাজ আহমেদের ভাল লেগে যায়। তিনি শেফালীকে বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু চেয়ারম্যানের স্ত্রী তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া মেয়ে রতœাকে এজাজ আহমেদের কাছে বিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেন। রতœা তা প্রত্যাখান করে সচেতনভাবে।
এজাজ আহমেদ শেফালীকে বিয়ে করার আগে তার দরিদ্র বাবা মতিউর রহমানকে প্রচুর অর্থ দান করেন। সে অর্থে মতিউর রহমান রাতারাতি ধণাঢ্য ব্যক্তিতে পরিণত হয়। বিয়ের পর শেফালীকে নিয়ে এজাজ আহমেদ ঢাকায় নতুন সংসার শুরু করেন। কিন্তু এজাজ আহমেদের বিশেষ শারীরিক দূর্বলতা থাকার কারণে শেফালী মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। একদিন বৃষ্টিঝরা গভীর রাতে শেফালী বাসার ছাদে গিয়ে ভিজতে থাকে। এসময় বাসার নৈশ প্রহরীর ২৩/২৪ বছরের ছেলে রশিদ বদলী পাহারা দিতে এসে সে ছাদে গিয়ে আবছা আলোয় বাসার মালিকের স্ত্রী শেফালীকে বিশেষ ভঙ্গিমায় ভিজতে দেখে। রশিদ শেফালীর কাছাকাছি হয় এবং কোনরূপ কথা না বলে তারা একেঅপরকে আদর করতে থাকে এবং পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এতে শেফালী গর্ভবতী হয়। এজাজ আহমেদ নীরবে সব সহ্য করেন এবং রশিদকে বিদেশে পাঠিয়ে দেন। এতে শেফালী হাফছেড়ে বাঁচে।
বর্ষার শেষ। নদীতে প্রচন্ড স্রোত। বাজার সংলগ্ন স্কুল, মাদ্রাসা, স্থানীয় হাসপাতাল এবং ২৪০ বছরের পুরনো শিমুলতলী বাজার ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। ইউপি ভবন অর্ধেক নদীগর্ভে বিলীণ হয়ে গেছে। লোকজন স্কুল, মাদ্রাসা ও দোকান পাটের মালামাল সরাচ্ছে। অতীতের অনেক স্মৃতি অনেক ঐতিহ্য সর্বনাশা যমুনা গ্রাস করে চলেছে। রুখবার সাধ্য নেই কারো।
রহমান মাঝির মেয়ে ফুলেছা ঢাকায় বড় লোকের বাসায় কাজ করতো। কয়েক বছর কাজ করার পর সাবালিকা হওয়ায় বাসার মালিক তাকে রহমান মাঝির কাছে দিয়ে গেছে। বিয়ের সময় খরচ পাতিও দিবে বলে বাসার মালিক প্রতিশ্র“তি দিয়ে গেছে। এদিকে জোব্বার মাতাব্বরের চোখ পড়েছে রূপবতী ফুলেছার উপর। মিয়া বাড়ির ছেলে আরিফের সাথে ফুলেছার বিয়ে হয়। তারপরও মাতাব্বর ফুলেছার পিছনে লেগে থাকে। ষাটোর্ধ রমজান ফুলেছাকে নিরাপদে রাখার চেষ্টা করে।
মাতব্বর আরিফকে উত্তেজিত করে তুলে এই বলে যে, মানিক মিয়া চরের যেসব জমি ভোগ দখল করে তা নানা কুটকৌশলে তার বাপ-চাচাদের নিকট থেকে হাতিয়ে নেয় । নতুন যে চর জেগে উঠেছে সেটাও মানিক মিয়া শহর থেকে এসে দখল নিতে চায়। মাতব্বর আরিফকে নতুন চর দখলের পরামর্শ দেয়। উভয় পক্ষের কয়েক হাজার লোক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। আরিফ চরের দখল পায়। কিন্তু আরিফের পিতাসহ কয়েক ব্যক্তি সংঘর্ষে মারা যায়। আদালতে মামলা হয়। পুলিশ আসে আসামী ধরতে। চরের মানুষ পুলিশের হাত থেকে আসামী ছিনিয়ে রাখে। আরিফ ও রমজানকে একদিন রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে এবং হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে নৌকায় তুলে। রমজান কৌশলে নৌকার গলুইয়ের নরম কাঠ পা দিয়ে ঘষে তুলে ফেলে। ফলে নৌকায় পানি উঠতে দেখা যায়। দারোগা পুলিশ চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। এক পর্যায়ে সুযোগ বুঝে আরিফ আর রমজান যমুনায় ঝাঁপ দেয়।
অবশেষে আরিফ মাতব্বরের ষড়যন্ত্র বুঝতে পারে। মাতব্বরের চামচা মুন্সী তাকে সব খুলে বলে। আরিফ ফুলেছাকে নিয়ে চর ছেড়ে অজানার দেশে পাড়ি দেয়। তাদের নৌকা চলে ভাটির দিকে…….।
ছানোয়ার হোসেন তার উপন্যাসে প্রয়োজনীয় চরিত্র নির্বাচন করেছেন। আর সে সব চরিত্রের গুণাগুণের স্বরূপ উম্মোচন করেছেন। যেমন ফকীর ও নাপিতের চরিত্র দুটি সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, সভ্যতা ও প্রগতির ছোঁয়া না পাওয়া যমুনার গহীন ভিতর চরের মানুষের জীবন ও জীবিকা এবং জোব্বার মাতব্বরের মত জঘন্য চরিত্রের মানুষের আধিপত্যের মাঝে বসবাস করা সত্যি দুরূহ। লেখক তার উপন্যাসে যে কাহিনীর অবতারণা করেছেন বিশেষ করে মাঝ যমুনার বুকে জেগে উঠা চরে যে সব মানুষ বসবাস করে তা সভ্য জগত থেকে অনেক দূরেÑঅন্ধকারে। তারা বাইরের চলমান আধুনিক জীবনের ধারণা রাখে না। যমুনার বুকে সূর্য উঠে যমুনার বুকেই অস্ত যায়Ñএটাই তারা জানে। অশিক্ষার অভিশাপে জর্জরিত এরা প্রকৃতি থেকে যেটুকু শিক্ষা পেয়েছে সেটুকুই তাদের সম্বল। এই উপন্যাসে সুবিধা বঞ্চিত মানুষের চিত্র যেভাবে অঙ্কিত হয়েছে সত্যি তা প্রশংসনীয় ও বেদনাদায়ক। গ্রন্থটির বহুল প্রচার কামনা করি।
পরিচিতিঃ
যমুনার দুই মেয়ে ও হাঙর উপন্যাসের লেখক ছানোয়ার হোসেন ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জানুয়ারী জামালপুর জেলার সদর উপজেলার রশীদপুর ইউনিয়নের ক্ষেত্রীপাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম-মোঃ আনছার আলী মাষ্টার, মাতা- মোছাঃ ছালিমা খাতুন। তিনি ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিয়ারিং পাস করেন। স্ত্রী-খালেদা আক্তার সীমা একজন গৃহিণী। তিনি এক কন্যা ও এক পুত্রের জনক। তিনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সরকারী কর্মকর্তা। ছানোয়ার হোসেনের প্রকাশিত বইÑ জীবন শিকল (উপন্যাস), আবার তুমি (নাটক), মানিক রতন (নাটক)। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি রচয়িতা সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। কবি গীতিকার উপন্যাসিক ও নাট্যকার ছানোয়ার হোসেনের সাহিত্য চর্চা অব্যাহত থাকুক। সমৃদ্ধ হোক
বাংলা সাহিত্য ভান্ডার। আমোদিত হোক পাঠক সমাজÑএই প্রত্যাশা রইল।

যমুনার দুই মেয়ে ও হাঙর (উপন্যাস ) রচনা: ছানোয়ার হোসেন, পার্ল পাবলিকেশন্স, ৩৮/২ বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০ থেকে হাসান জায়েদী কর্তৃক প্রকাশিত, প্রচ্ছদঃ চারু পিন্টু, গ্রন্থস্বত্ত¡: লেখক, প্রথম প্রকাশ একুশে বইমেলা- ২০১৪, পৃষ্ঠা সংখ্যা-১০৮, মূল্য-১৫০ টাকা।

Shamol Bangla Ads

তালাত মাহমুদ: কবি, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

Shamol Bangla Ads
error: কপি হবে না!