পাইকগাছা (খুলনা) সংবাদদাতা : শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে খুলনা বিভাগের শ্রেষ্ঠ জয়িতার পুরষ্কার অর্জন করেছেন খুলনা পাইকগাছার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কন্যা সাবিনা ইয়াসমিন (মালা)। আর্ন্তজাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষ্যে শুক্রবার বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর আয়োজিত “জয়িতা অন্বেষনে বাংলাদেশ” শীর্ষক অনুষ্ঠানে নারী হিসাবে শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় শ্রেষ্ঠ জয়িতার স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ক্রেষ্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। এর আগে তিনি খুলনা জেলা ও পাইকগাছা উপজেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতার পুরস্কার অর্জন করেন। বর্তমানে শ্রেষ্ঠ এ জয়িতা যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। শ্রেষ্ঠ এ জয়িতাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন জন্মস্থান পাইকগাছার বিভিন্ন মহল।
সুত্র মতে, একটা সময় ছিল যখন বাঙালী নারীরা ছিল ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কারের বেড়া জালে আবদ্ধ। ছিল নারী পুরুষের ব্যাপক বৈষম্য। তৎকালিন পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় অবহেলিত ছিল নারী সমাজ। শিক্ষার সুযোগ থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করে ব্যবহার করা হতো পুরুষের ভোগ বিলাস, দাস-দাসী ও গৃহস্থলির কাজে। পুরুষদের একনায়কতান্ত্রিক আধিপত্য ও সামাজিক কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে এসে নারী শিক্ষার প্রসারে ১৯০৯ সালে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গালর্স স্কুল প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে বাঙালী নারী জাগরনে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেন নারী জাগরণের অগ্রদুত বেগম রোকেয়া। বেগম রোকেয়ার ঐতিহ্যবাহি এ উত্তরসরী (নারী সমাজ) বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৬’র ৬ দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭০’র নির্বাচন ও ৭১’র মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে সৃষ্টি করেছেন শত বছরের গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস। স্বাধীনতা পরবর্তী ৪০ বছরে বিভিন্ন সময়ে নারী উন্নয়নে সরকারের নানা উদ্যোগ গ্রহণের ফলে পিছিয়ে পড়া অবহেলিত নারী সমাজ আজ পরিনত হয়েছে মানব সম্পদে। নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে বর্তমান সময়ের নারীরা সামাজিক, রাজনীতি, অর্থনীতি, জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব নারীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে তাদেরকে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচন করার মাধ্যমে সম্মাননা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছেন নারী বান্ধব বর্তমান সরকার। ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং সর্বশেষ গত শুক্রবার শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় শ্রেষ্ঠ জয়িতার পুরষ্কার অর্জন করেছেন পাইকগাছার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কন্যা সাবিনা ইয়াসমিন (মালা)। শ্রেষ্ঠ এ জয়িতার জন্ম খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নে (বর্তমান সরল গ্রাম)। সাবিনা জন্ম থেকেই অনেকটাই হতভাগি কারণ মা সালমা বেগম এর গর্ভে থাকাবস্থায় ১৯৭১ সালের ২৮ জুলাই পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মম ভাবে শহীদ হন পিতা শেখ মাহতাব উদ্দীন মনি মিয়া (সাবেক চেয়ারম্যান)। জন্ম থেকেই এতিম সাবিনা ভেঙ্গে না পড়ে দেশপ্রেমিক পিতার আদর্শকে ধারণ করে এগিয়ে চলেন সামনের দিকে। তিনি ১৯৮৭ সালে পাইকগাছা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেধা তালিকায় এসএসসি, ৮৯’তে পাইকগাছা কলেজ থেকে এইচএসসি, ৯২’তে বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও ৯৩’ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ (ইংরেজি) পাস করে। লেখাপড়া শেষ করে তিনি ৯৮ থেকে ০৩ পর্যন্ত ফসিয়ার রহমান মহিলা মহাবিদ্যালয়ে ইংরেজি প্রভাষক হিসাবে চাকুরী করেন। এখানে কর্মরত থাকাবস্থায় তিনি শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হন। এরপর তিনি ২১তম বিসিএসএ উত্তির্ণ হওয়ার মাধ্যমে ২০০৩ সালে সহকারী কমিশনার (ম্যাজিষ্ট্রেট) হিসাবে সরকারী চাকুরীতে যোগদান করেন। এ পদে তিনি ঢাকা, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর কর্মরত থাকার পর ’০৭ সালে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসাবে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ী, ময়মনসিংহ সদর এবং ’০৯ সালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসাবে গাজীপুরের শেরপুর, গাজীপুর সদর, ময়মনসিংহের গফরগাঁও ও নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁ কর্মরত থাকেন। গত ১৭ সেপ্টেম্বর’১৩ হতে বর্তমানে তিনি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট হিসাবে যশোরে কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে তিনি উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রসাশন বিভাগে পিএইচডি করছেন। তাহার গবেষনার বিষয় পাবলিক হেল্থ সার্ভিস ডেলিভারী সিষ্টেম ইন দি কমিউনিটি হেল্থ অব বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে তিনি এমআইডি ক্যারিয়ার প্রশিক্ষণের আওতায় ভারত সফর করেছেন। শিক্ষক ও প্রশাসকের শ্রেষ্ঠ এ জয়িতার লেখক হিসাবে রয়েছে একটা পরিচিতি। ইতোমধ্যে তাহার রচিত লোভ দেখালেও জুঁই-চন্দন, বলিতে ব্যাকুল, পূর্ণিমার পরদিন ও জলে জ্যোৎস্নায় এই অবেলায় সহ ৪টি কাব্যগ্রস্থ প্রকাশিত হয়েছে। সর্বশেষ চলতি ২০১৪ সালের ২১’শের বই মেলায় তাহার ৫ম কাব্যগ্রন্থ “নিঃস্বরের দান” প্রকাশিত হয়েছে বলে জানা গেছে। শত ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে সাবিনা ব্যক্তিগত জীবনে বিচার বিভাগে কর্মরত স্বামী মোঃ শরীফ হোসেন হায়দার, পুত্র রূবাইয়াৎ ইশম্মাম প্রিয়ন্ত ও কন্যা পুষ্পিতা পরিজাত টিপ কে নিয়ে সুখেই রয়েছেন। নারী উন্নয়নে সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত ও শ্রেষ্ঠ এ জয়িতাকে অভিনন্দন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন, স্থানীয় এমপি এ্যাডঃ শেখ মোঃ নুরুল হক, উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ রশীদুজ্জামান, পৌর মেয়র মোঃ সেলিম জাহাঙ্গীর, নাগরিক কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর, নন্দিনী সাহিত্য পাঠ চক্রের সভানেত্রী ও প্রধান শিক্ষক সুরাইয়া বানু ডলি, বাংলাদেশ অনলাইন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আব্দুল আজিজ, পাইকগাছা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস,এম, আলাউদ্দিন সোহাগ ও সাংবাদিক এন. ইসলাম সাগর।