কাজী আবু হুরাইরা শিলন, নওগাঁ : কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় নওগাঁ শহরের বিভিন্ন ফুটপাথ সহ জেলার গ্রাম-গঞ্জের হাট-বাজারে মসুরের ডালের নামে অবাধে বিক্রি হচ্ছে টিসিবির আমদানি করা পশুখাদ্য ভেজ। দেখতে অবিকল মসুরের ডালের মতো হওয়ায় এবং দাম কম হওয়ায় মসুরের ডাল ভেবে ক্রেতারাও তা কিনে প্রতারিত হচ্ছে। চার বছর আগে হঠাৎ করে নওগাঁর বিভিন্ন ফুটপাতে প্রতিকেজি ৬০ টাকা দামে বিক্রি শুরু হয় ভেজ নামের এই পশুখাদ্য। তখন বাজারে প্রতি কেজি মসুরের ডাল ১২০ টাকা হওয়ায় সাধারণ আয়ের মানুষেরা মসুরের ডাল ভেবে এই পশুখাদ্য কিনতে হুমরি খেয়ে পড়ে। বাজরের মুদি দোকানে যেখানে প্রতি কেজি মসুরের ডাল ১২০ টাকা সেখানে কিভাবে ফুটপাতে প্রতিকেজি ডাল মাত্র ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে গিয়ে বেরিয়ে আসে চমকপ্রদ তথ্য। নওগাঁ বাজারের মুদি দোকানী বাদল দাস জানান, ফুটপাতের ওই সকল মসুরের ডাল প্রকৃত অর্থে মিসর থেকে আমদানী করা এক প্রকার পশুখাদ্য। তবে এই পশুখাদ্য কে কি ভাবে নওগাঁয় বাজার জাত করছে তা যানা যাচ্ছে না। প্রতিদিন খুব ভোরে এক শ্রেণীর ফরিয়া ব্যবসায়ী নওগাঁ বাজারের বেশ কটি স্থানে প্রচুর পরিমানে ডাল নিয়ে এসে খুচড়া ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে চলে যায়। এ সকল খুচড়া ব্যবসায়ীরা ফুটপাতে বসে ওই ভেজকে মসুরের ডাল হিসাবে বিক্রি করে থাকে। বাদল দাস দাবী করে বলেন, শিক্ষিত ও জ্ঞানী ক্রেতারা দামের ফারাকে বিভ্রান্ত না হয়ে দোকান থেকে প্রকৃত মসুর ডাল কিনলেও অশিক্ষিত ক্রেতারা দামে শস্তা হওয়ার কারণে ওই ভেজ কেনাতে হুমরি খেয়ে পড়ে। তিনি আরো দাবী করেন হোটেল ব্যবসায়ীরাও এই ভেজ কিনে হোটেলে ডাল বলে চালানো সহ পেয়াজু ও ডাল বড়া বানানোর কাজে ব্যবহার করে থাকেন। ফুটপাতে ভেজ বিক্রয়কারি মকবুল হোসেন জানান, তিনি গত চার বছর থেকে এই ডাল বিক্রি করছেন। প্রতিদিন ভোরে এসে নওগাঁ শহরের গোস্তহাটির মোড় থেকে একজন ‘সাপ্লাইয়ারের’ নিকট থেকে তিনি এই ডাল কিনে থাকেন। প্রতিদিন গড়ে তিনি প্রায় ৮০ কেজি ডাল বিক্রি করে থাকেন। প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান এ ডাল কোন আড়তদার নওগাঁ মওজুদ করেছেন তা তিনি জানেন না। তবে তিনি শুনেছেন নাটোরের এক ব্যবসায়ী ব্যবসা বদলের কারণে খুব কম দামে তার মওজুদ ছেড়ে দেওয়ায় এই ডাল কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। নওগাঁ বাজারের পাইকারি বিক্রেতা বদরুজ্জামান ও সৌমেন বসাক জানান, সরকার ডাল আমদানীর সিদ্ধান্ত নিলে টিসিবির কিছু অসাধু কর্মকর্তা ভারত থেকে মসুরের ডাল সাদৃশ্য পশুখাদ্য ভেজ আমদানী করে। তাদের দাবী অনুসারে ভারতে এই ভেজ বিভিন্ন পশুখাদ্যে মিশ্রণ হিসাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে কে কিভাবে এই পশুখাদ্য বাজারে ছাড়ছে সে বিষয়ে তাদের কোন ধারণা নাই। এই ডাল রুপি ভেজ ব্যবহারকারী শহরের চকদেব মহলার গৃহবধূ দেলোয়ারা বেগম জানান, তিনি বেশ কিছু দিন ধরে এই ডাল ব্যহার করছেন। তার মতে দোকানের ডালের তুলনায় এ ডাল সেদ্ধ কম হয় এবং স্বাধ কিছুটা ভিন্ন। তবে এই ডাল খেয়ে কোন প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা তা তিনি খেয়াল করেননি। নওগাঁ শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসক হামিদুর রহমান জানান, ডালের মতো দেখতে হলেও এগুলি ডাল গোত্রের ভিন্ন ফসল। এ সকল পশুখাদ্য মানুষের হজমক্রিয়ায় ব্যঘাত ঘটায় এবং পেট ও কিডনি জনিত সমস্যার সৃষ্টি করে।
