স্টাফ রিপোর্টার : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেরপুরের ৩ টি আসনেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা ও গণসংযোগ বেড়ে গেছে। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে শংকা আর অভ্যন্তরিণ কোন্দলে জর্জরিত হওয়ার পরও শেরপুরের ৩ টি আসনে খোদ নির্বাচন আর সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সমঝোতা আদৌ হবে কিনা, সমঝোতা না হলে শেষ পর্যন্ত বিএনপি বা ১৮ দলীয় জোট নির্বাচনে আসবে কিনা, তারা নির্বাচনে না আসলে কি অবস্থা হবে ? এমন আলোচনাও স্থান পাচ্ছে ওই বিশ্লেষণে। এর পরেও সবকিছু ছাপিয়ে সকল দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা পথ চলছেন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েই।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেরপুরের ৩টি আসনেই অর্থ্যাৎ শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) ও শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনে তৎকালীন ৪ দলীয় জোট সমর্থিত বিএনপি প্রার্থী এবং শেরপুর-১ (সদর) আসনে জামায়াত প্রার্থীকে পরাজিত করে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মত বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। এবার সরকারের বিগত পৌণে ৫ বছরের নানা সাফল্যের গাঁথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ চাচ্ছে আসনগুলো নিজেদের দখলেই ধরে রাখতে। আর সরকারের নানা ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে বিএনপি চাচ্ছে আসনগুলো ফিরে পেতে। ফলে অভ্যন্তরিণ কোন্দলে জর্জরিত হওয়ার পরও ১৪ দলীয় জোট প্রধান আওয়ামী লীগ এবং ১৮ দলীয় জোট প্রধান বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা রমজানে ইফতার পার্টির মাধ্যমে এবং ঈদুল ফিতর থেকে নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগে জড়িয়ে পড়েছেন। কোরবানীর ঈদ থেকে তাদের গণসংযোগে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। ঘনঘন এলাকায় অবস্থান করে এলাকার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে। নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে দলীয় মনোনয়ন বহাল বা পরিবর্তন সাপেক্ষে নতুন করে মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেড়ে গেছে অবহেলিত নেতাকর্মীদের কদর। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নির্বাচনী তৎপরতায় মহাজোট ও জোটের দুই প্রধান শরিক জাতীয় পার্টি ও জামায়াত সমান তালে না হাটলেও একেবারে বসে নেই। কোন আসনে, কোন জোটের, কে মনোনয়ন পাচ্ছেন, কে বাদ পড়ছেন, কে নতুন মুখ, টাকা বেশি কার? এসব নিয়ে সচেতন মহল ও ভোটারদের মাঝেও চলছে নানা বিশ্লেষণ- যা রাজনৈতিক অঙ্গণ থেকে শুরু করে শহর-পল্লীর চায়ের দোকান পর্যন্ত বিস্তৃত।
শেরপুর-১ (সদর) : এ আসনে মহাজোটের সম্ভাব্য প্রধান প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, বর্তমান সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিক। ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ এর নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ের হ্যাটট্রিক অর্জন করেন। এছাড়া তিনি ১৯৯০ এর নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। এবারও দল থেকে এখন পর্যন্ত তিনিই একক প্রার্থী। শেরপুরে তিনিই একমাত্র এমপি, যিনি বেশিরভাগ সময় এলাকায় অবস্থান করেন এবং ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে তার প্রাত্যহিক কাজকর্ম। নির্বাচনী এলাকায় দুটি কলেজ একটি হাইস্কুল প্রতিষ্ঠাসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্কুল-কলেজ-মাদরাসা এমপিওভূক্তি, সরকারী-বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো উন্নয়ন, জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন অফিস প্রতিষ্ঠা, ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে তার ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠা স্বীকৃত। অবশ্য একবার উপজেলা চেয়ারম্যান ও ৩ বার এমপি হওয়াসহ দলের জেলা শাখার সভাপতি হওয়ার কারনে তিনি অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়ার পাশাপাশি এখন কিছুটা আত্মঅহমিকাও তাকে পেয়ে বসেছে- এমন গুঞ্জনও রয়েছে এলাকায়। এছাড়া কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর সাথে বর্তমান সরকারের শুরু থেকেই চলে আসা তার ‘স্নায়ুবিক দ্বন্দ্ব’ এবং ওই দ্বন্দ্বের জের ধরে ক্ষমতার মত-মত্ততায় ফুলে-ফেপে উঠা দলের একটি অংশ প্রকাশ্যে না হলেও সময়ে-সুযোগে তার বিরোধিতা করে আসছে। এরপরও নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, সদর আসনে ভোটের রাজনীতিতে তিনি এখনও হিরো। কাজেই আগামী নির্বাচনেও তিনিই দলীয় মনোনয়ন পাবেন- এমন ধারণাই ওই মহলের। এ আসনে সাবেক এমপি মরহুম নিজামউদ্দিন আহম্মদের পুত্র, পৌরসভার সাবেক মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছানোয়ার হোসেন ছানু ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম চেয়ারম্যান গণসংযোগে না থাকলেও শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন চাইতে পারেন। তবে সচেতন মহল মনে করছেন সেটা হবে কেবলই চাওয়ার খাতিরে চাওয়া। গোলাম কিবরিয়া লিটন মূলত সাংসদ আতিকের আস্থাভাজন ব্যক্তি। সেইসূত্রে নমিনেশন বোর্ডে গেলেও তিনি সাংসদ আতিককেই সমর্থন করবেন, এমন ধারণাই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের। অন্যদিকে, একটি ক্ষুদ্র অংশের দাবি, গত উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ছানোয়ার হোসেন ছানু বিশেষ আশির্বাদে দলীয় মনোনয়ন ভাগিয়ে নিতে পারেন। অন্যদিকে মহাজোটগতভাবে নির্বাচনের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী সাংসদ আতিককে বলি দিয়ে জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) নেতা সাবেক এমপি শাহ রফিকুল বারী চৌধুরী অথবা জাকের পার্টির চেয়ারম্যান পীরজাদা মোস্তফা আমির ফয়সলকে জোটগত মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে- এমন হালকা আভাসও রয়েছে। এক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) নেতা ইলিয়াস উদ্দিন নমিনেশন বোর্ডের মুখোমুখি হলেও তার পাওয়ার আশা যেমন ক্ষীণ, ঠিক তেমনি তিনি দীর্ঘ দ্বন্দ্বের কারণে সাংসদ আতিকের পরিবর্তনের পক্ষে অবস্থান নিবেন এবং সাংসদ আতিক ব্যতীত অন্য কেউ মহাজোটের প্রার্থী হলেও তিনি গত জাতীয় নির্বাচনের মত আগামী নির্বাচনেও ১৮ দলীয় জোট প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন এমন অভিযোগও মুখে মুখে। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, বর্তমানে ১৮ দলীয় জোটের সর্বাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী শিল্পপতি হযরত আলী তার আপন ভাগনে হওয়ায় তিনি প্রার্থী হলে আগামী নির্বাচনেও তার ক্ষেত্রে একই অবস্থা হবে- এমন কথাও রয়েছে মাঠ পর্যায়ে। সর্বোপরি সাংসদ আতিককে বলির স্বার্থে মনোনয়ন পাল্টিয়ে অন্যকে দলীয় মনোনয়ন দিলে আওয়ামী লীগকে সম্ভাবনাময় এ আসনটিতেও মাশুল গুণতে হতে পারে। তবে ১৮ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশ না নিলে শেষ অবধি আলহাজ্ব ইলিয়াস উদ্দিনকেই জাপার একক প্রার্থী হিসেবে দেখা যাবে এবং সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সাথে জাপা প্রার্থীর নাটকীয় লড়াই লক্ষ্য করা যেতে পারে।
এ আসনে ১৮ দলীয় জোটের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে বিএনপিতে নবাগত শিল্পপতি আলহাজ্ব মোঃ হযরত আলী প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন। জেলা সদরে রোজবার্গ অটো রাইসমিলের বিশাল ব্যবসার পাশাপাশি ঢাকায় রয়েছে তার গার্মেন্টস শিল্প-কারখানা। দলে তার প্রবেশকে প্রথমত বৃহৎ অংশ মেনে না নিলেও টাকার তোড়ে এখন বৃহৎ অংশই নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি। দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা-মোকদ্দমাসহ নানা ফেতনা-ফেসাদের ক্ষেত্রে আর্থিক যোগানসহ দায়দায়িত্বও গ্রহণ করছেন তিনি। এছাড়া কেন্দ্রেও রয়েছে তার বিশেষ হাত। জোটগত নির্বাচনের প্রশ্নে এ আসনে এবার জামায়াত নেতা কামারুজ্জামান প্রার্থী হতে পারবেন না বিধায় বিএনপিতে নবাগত হযরত আলীরই মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। দলের অপর সম্ভাব্য প্রার্থী আলহাজ্ব এডভোকেট তৌহিদুর রহমান সাবেক জাপা নেতা এবং তিনি জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। চরাঞ্চলের লোক হিসেবে তার পরিচিতি ও তৃণমূল পর্যায়ে বিশেষ অবস্থান থাকলেও জেলায় ও কেন্দ্রে তা অনেকটাই খাটো- এমন মন্তব্য দলের ভেতরেই। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে হঠাৎ গণসংযোগে নেমে পড়েছেন একসময়কার জামায়াত ঘরানার ব্যক্তি এডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। তিনি সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সুপ্রীম কোর্টের সাবেক এসিস্ট্যান্ট এটর্নি জেনারেল। কেন্দ্রে যোগাযোগের মাধ্যম তার জন্য কিছুটা ভাল হলেও এলাকার নেতাকর্মীরা এখনও ভিড়েনি তার পিছনে। তবে এ আসনটি জোটগত নির্বাচনের কারণে বারবার জামায়াতের জন্য নির্ধারিত থাকায় এবং জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান যুদ্ধাপরাধের মামলায় মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত ও নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হারানোর কারণে জোটগত নির্বাচনের প্রশ্নে সিমপ্যাথিকে পুজি করে হঠাৎ করেই মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন কামারুজ্জামানের প্রথম পুত্র ইকবাল হাসান জামান। এক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত ইকবাল হাসান জামান পিতার আসনে মনোনয়ন বাগিয়ে নিলে সেটাও আশ্চর্যের কিছু থাকবে না।
শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) : এ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। ১৯৯৬ ও ২০০৮ এর জাতীয় নির্বাচনে এ আসন থেকে নির্বাচিত হলেও ২০০১ এর নির্বাচনে অভ্যন্তরিন কোন্দলে দলের একটি অংশের বিরোধীতার কারনে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি। তবে দুই দফায় সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী হওয়ার কারণে বেগম মতিয়া চৌধুরীর মাধ্যমে তার নির্বাচনী এলাকায় শহর থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নজরকাড়া উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়িত হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পাশাপাশি যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক প্রসার ঘটেছে এলাকায়। শহর থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সাধারণ মানুষ সবাই সন্তুষ্ট তার ঐকান্তিক উন্নয়ন প্রচেষ্টায়। শেরপুরে তিনিই একমাত্র এমপি, যিনি সরকার ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে থাকার পরও রুটিন মাফিক এলাকায় পৌছে টানা দু’থেকে এক সপ্তাহ অবস্থান করে ভিজিএফ,ভিজিডির সহায়তা, টিআর, কাবিখার ডিও, মেধাবি-দরিদ্র শিক্ষার্থী-প্রতিবন্ধিদের সহায়তা স্বয়ং উপস্থিত থেকে নিজ হাতে বিতরন করেন। এলাকায় ঘুরে ঘুরে মনিটরিং করেন বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড। দায়িত্বশীর মহলের মতে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সকল সরকারের উন্নয়নের সাথে যদি মতিয়া চৌধুরীর দুই মেয়াদের উন্নয়ন কর্মকান্ডের তুলনা করা হয়, তবে তার পাল্লাই ভারী হবে দুই থেকে তিনগুন। তবে এবারও বেকে বসেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান বাদশাসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের একাংশ।
অন্যদিকে, ক্ষমতার টানা ৪ বছর সাথে থাকলেও হঠাৎ করেই ফুসে উঠেছেন নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের স্াধারণ সম্পাদক, সাবেক এমপি মিজানুর রহমানসহ দলের একটি অংশ। দুটি উপজেলাতেই ওই অবস্থা পুজি করে উপজেলা চেয়ারম্যান কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে তৎপরতা শুরু করেছেন। নালিতাবাড়ীতে বিশেষ অবস্থা তৈরির দাবি তুলে ধরে এখন তিনি হানা দিচ্ছেন নকলায়। এরপরও কেন্দ্রীয় অবস্থানের কারনে মতিয়া চৌধুরীই মনোনয়ন পাবেন- এমন ধারণা পর্যবেক্ষক মহলের। তবে এমন নাজুক অবস্থার যতই দ্রুত নিরসন সম্ভব, ততই দল আর নির্বাচনের জন্য মঙ্গল।
এ আসনের প্রভাবশালী জোট প্রার্থী সাবেক হুইপ আলহাজ্ব জাহেদ আলী চৌধুরী মৃত্যুবরণ করায় আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে তৎপরতা শুরু করেছেন তার বিদেশ ফেরত জৈষ্ঠ পুত্র প্রকৌশলী ফাহিম চৌধুরী। রাজনীতিতে নবীন হলেও পিতার বিশাল প্রভাবের কারণে ইতোমধ্যে দলীয় অঙ্গণ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত তার প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া সাবেক সচিব ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিষ্টার এম হায়দার আলী এ আসন থেকে মনোনয়ন পেতে বেশ আগে থেকেই তৎপর রয়েছেন। কেন্দ্রীয় অবস্থান ভাল হলেও মাঠ পর্যায়ে তার অবস্থান নড়বড়ে। এ আসনে জাপা থেকে প্রার্থী হতে হঠাৎ করেই মাঠে নেমেছেন নালিতাবাড়ীর পাহাড়ি এলাকার মেয়ে কেন্দ্রীয় মহিলা পার্টির নেতা রোজী সিদ্দিকী। নালিতাবাড়ী-নকলা এলাকায় তার গণসংযোগে নিস্তেজ নেতা-কর্মীদের মধ্যে কিছুটা প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) : এ আসনে মনোনয়ন না পেয়ে সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি খন্দকার মোঃ খুররম বিদ্রোহী প্রার্থী হলেও মহাজোট প্রার্থী প্রকৌশলী এ.কে.এম ফজলুল হক চান আপন ভাতিজা জোটপ্রার্থী মাহমুদুল হক রুবেলকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। কিন্তু নির্বাচ্েনর পর থেকেই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে তিনি কিছুটা দূরে সরে যান। তার কাছে ভিড়ে একটি সুবিধাভোগি অংশ। ফলে ওই বিশেষ অংশের প্রতি অতি আস্থাশীল হয়ে পড়ায় এবং মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করতে থাকেন। তবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ঈদ পার্বণ থেকে শুরু হয়েছে তার বিশেষ তৎপরতা ও গণসংযোগ। এখন ঘনঘন এলাকায় পৌছে নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে খোজ-খবর নেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। এ আসনে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীতায় পরিবর্তন আসতে পারে-দলের মধ্যে এমন গুঞ্জনে অন্য দুটি আসনের চেয়ে এখানে সর্বাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে নেমেছেন। গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হলেও এবার খন্দকার মোঃ খুররমের প্রতি মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ তৃণমূলের সাধারণ মানুষ আস্থাশীল হয়ে পড়েছেন- এমন গুঞ্জন জোরেসোরেই শোনা যাচ্ছে। গত নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েও শেষ মূহুর্তে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় বহিস্কারের শাস্তি পেতে হয় তাকে। তবে ইতোমধ্যে কেন্দ্র্রীয়ভাবে তার সেই বহিস্কার প্রত্যাহারের চিঠি নিয়ে তিনি এখন এ নির্বাচনী এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চল চষে বেড়াচ্ছেন। তাকে কাছে পেয়ে সাড়া দিচ্ছেন অনেকেই। অন্যদিকে স্বাধীনতার পর থেকে দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির মত আওয়ামী লীগও কেবল শ্রীবরদী উপজেলায় প্রার্থী মনোনয়ন সীমাবদ্ধ রাখায় আঞ্চলিকতার টান তুলে ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাঈম এবার বেশ জোরেসোরেই তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনী এলাকায় তার সর্বাধিক তৎপরতা ও গণসংযোগ লক্ষ্যণীয়। নাঈমের রঙিন শুভেচ্ছা পোষ্টার-ব্যানার শোভা পাচ্ছে উপজেলা সদর থেকে পাড়া মহল্লায় আঞ্চলিকতার টান ও তৃণমূলকে নিয়ে পরিবর্তনের ডাক দেয়া এ নেতা এবার মনোনযন পাওয়ার বিষয়েও প্রবল আশাবাদী। এছাড়া সাবেক প্রয়াত এমপি এম.এ বারীর পুত্র মহসিনুল বারী রুমী ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা কৃষিবিদ ফররুখ আহমেদ ফারুকও গণসংযোগে নেমেছেন এলাকায়। বিলম্বে হলেও ছাত্র ও যুবশ্রেণীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে লোকজনকে নিয়ে রুমী এখন মাঠে বেশ তৎপর রয়েছেন। বিভিন্ন এলাকায় লাগানো ফারুকের পোস্টারও নজর কাড়ছে নতুন প্রজন্মের ভোটারদের।
এ আসনে কনিষ্ঠ হয়েও মাহমুদুল হক রুবেল একবারের পূর্ণাঙ্গ মেয়াদসহ ৩ বারের এমপি ছিলেন। ‘হাওয়া ভবন’ এর আশির্বাদপুষ্ট ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রুবেল আগামী নির্বাচনেও জোরালো প্রার্থী। পিতা সাবেক এমপি ডাঃ সেরাজুল হকের গড়া ইমেজ আর নিজের দলীয় অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে এবারও মনোনয়ন নিয়ে বিজয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল করলে সে স্বপ্ন পূরন হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি- এমন হাওয়াও রয়েছে এলাকায়। এ আসনে ঝিনাইগাতী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বাদশাও আঞ্চলিতার টান তুলে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এলাকায় তৎপরতা ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া এ আসনে বিএনপি থেকে অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী হচ্ছেন মেজর (অব:) মাহমুদুল হাসান। নেতৃত্বের প্রশ্নে দলে অবস্থান না থাকলেও প্রায় ৪ বছর পূর্বে অবসর গ্রহণের পর থেকেই তিনি বিএনপির সাথে মিশে আছেন। এলাকায় ভিন্ন আঙ্গিকে চলছে তার গণসংযোগ। এ আসনে শ্রীবরদী উপজেলা চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম ফর্সা জাতীয় পার্টি (এরশাদ) এর আপাতত একক প্রার্থী হিসেবেই তৎপর রয়েছেন। শেষ নাগাদ ১৮ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশ না নিলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপরীতে তাকেই শেষ লড়াইয়ে থাকতে হতে পারে।