জিয়াউর রহমান জিয়া,রাজীবপুর (কুড়িগ্রাম) : মৎস্য খামারের নামে বৃষ্টি ও বর্ষার পানি প্রবাহিত নালার মুখে কৃত্রিম বাঁধ তৈরি করে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় ২ হাজার হেক্টর রোপা আমন ফসল পানির নিচে পচে নষ্ট হচ্ছে। আর এতে কপাল পুড়ছে প্রায় ২ হাজার কৃষকের। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্থ প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষক দিশেহারা হয়ে ধর্ণা দিচ্ছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি অফিসে। কিন্তু প্রশাসন কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজীবপুর উপজেলার নয়াচর মন্ডলপাড়া ও ধুবালিয়াপাড়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ওই জলাবদ্ধতার চিত্র।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের ধুবালিয়া পাড়া, বাউল পাড়া ও গারোহাড়ি এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। মৎস্য খামারের নামে ওই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বৃষ্টি ও বর্ষার পানি প্রবাহিত নালার মুখে বাঁধ তৈরি করেছে। ফলে বিশাল এলাকার কৃষি আবাদি জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এই এলাকায় প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ করা হয়েছে। কৃষকরা জানান, বাউলপাড়া থেকে গাড়োহারি পর্যন্ত রাস্তায় ওই নালা খুলে দিলে পানি বের হয়ে যাবে। এতে দেড় হাজার হেক্টর রোপা আমন রক্ষা পাবে জলাবদ্ধতার হাত থেকে। কিন্তু পানি প্রবাহিতের ওই নালা খুলতে দিচ্ছে না মৎস্য খামারের নামে ওই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এ ব্যাপারে কৃষকরা উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
ধুবালিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক কেরামত আলী বলেন, ‘আমার দুই একর জমিতে রোপা আমন গেড়েছি। যা পানির নিচে পচে নষ্ট হচ্ছে। পানি বের হতে না পারায় ওই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বাউলপাড়া গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, মাত্র ১০ মানুষের মৎস্য খামারের জন্য ২ হাজার কৃষকের পেটে লাথি মারা হচ্ছে।
একই অবস্থা দেখা গেছে উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের নয়াচর মন্ডলপাড়া, সংকুরপাড়া, মাঠের ভিটা ও মুন্সিপাড়া এলাকায়। কৃষকরা জানান, নয়াচর মন্ডলপাড়া থেকে সংকুরপাড়া রাস্তায় বন্যায় ধসে পড়া একটি কালভার্ট মেরামত না করে তা মাটি ফেলে বন্ধ করে দেওয়ায় ওই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ওই জলাবদ্ধতার কারনে ৫শ একর রোপা ধান এখন পানির নিচে। অথচ ওই স্থানে কেটে দিয়ে পানি বের করলেই জলাবদ্ধতা থাকে না। এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বারের কাছে ঘুরলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে রাজীবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জলাবদ্ধতার কারণে রোপা ধান ক্ষতির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর ইউএনও স্যারকে নিয়ে সরেজমিনে দেখেছি। তাতে জলাবদ্ধতার কারনে অনেক ক্ষেতের ফসল হুমকির মুখে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ খান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, ওই মৎস্য খামারীদের দ্রুত পানি বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
