ads

বৃহস্পতিবার , ১৫ আগস্ট ২০১৩ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

দুধ গ্রাম : পাল্টে দিয়েছে দরিদ্র মানুষের জীবন

শ্যামলবাংলা ডেস্ক
আগস্ট ১৫, ২০১৩ ১০:৩৩ অপরাহ্ণ

Milk_Village-Pic_1রফিকুল ইসলাম আধার : ‘দুধ গ্রাম’- স্বল্প আয় থেকে আত্মস্বাবলম্বী হওয়া মানুষের আলোকিত এক পল্লী। গাভী পালন ও দুধ বিক্রির কারণে ‘দুধ গ্রাম’ হিসেবে ওই পরিচিতি পেয়েছে শেরপুরের পাকুড়িয়া ইউনিয়নের পাকুড়িয়া পূর্বপাড়া, ভাটিয়াপাড়া ও তিলকান্দি নামে ৩ টি গ্রাম। গরুর দুধ বিক্রি করেই ওই তিন গ্রামের প্রায় তিন সহস্রাধিক দরিদ্র মানুষ আজ স্বাবলম্বী। পাল্টে গেছে তাদের জীবন চিত্র।
ঐতিহ্যবাহী রৌহা ও গাওয়া বিল ঘিরে রেখেছে ওই তিনটি গ্রামকে। শেরপুর সদর উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত ওই গ্রাম ৩ টির অবস্থান জেলা শহর থেকে মাত্র ৬ কি:মি: পূর্বে। বর্ষা মৌসুমে ওই বিল দু’টি যখন পানিতে টুইটম্বুরে পরিণত হয়, ঠিক তখন দ্বীপের মত ভেসে থাকে গ্রাম ৩ টি। তখন কোন আগন্তুককে বিশ্বাস করানোই যাবেনা যে, সেগুলো কোন দ্বীপ নয়। দেখতে ঠিক ছবির মতই সুন্দর ওই গ্রামগুলো। হাজার দেড়েক বসতির ওই গ্রামগুলোতে রয়েছে প্রায় ৮-৯ হাজার লোকের বসবাস। এখানকার মানুষের প্রধান উপজীবিকা হলো কৃষি কাজ ও গবাদীপশু পালন। গ্রামগুলোর সুন্দর মেঠো পথে পা বাড়ালেই চোখে পড়ে বসতির পর বসতি এবং সারা বসতি জুড়েই গরু আর গরু। দেশী-বিদেশী মোটা মোটা বিভিন্ন প্রজাতির গরু বাছুরে যেন সারা গ্রাম সয়লাব। দেখলে মনে হয় গ্রামগুলো জনপথ নয়, যেন গো-চারন ভূমি।
পাকুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: আনোয়ার হোসেন আনার শ্যামলবাংলাকে জানান, ওই গ্রামগুলোতে প্রায় ৩ হাজার লোক গরু লালন-পালন করেন। আর লালন-পালনকৃত গরুগুলোর মধ্যে অধিকাংশই গাভী। গ্রামগুলোতে প্রায় ৭-৮ হাজার গরু আছে, যার মধ্যে ৬ হাজারের মতই গাভী। আর প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার গাভী থেকে প্রায় ৬শ মন দুধ পাওয়া যায়। দুধ বিক্রি করেই ওই এলাকার দরিদ্র মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে। শেরপুর জেলা শহরের সিংহভাগ মিষ্টির দোকান এবং আশপাশের বিভিন্ন হাট-বাজারে দুধের চাহিদা মিটিয়ে আসছে ওই গ্রামগুলোর উৎপাদিত গরুর দুধ। ফলে ওইসব গ্রাম এখন ‘দুধ গ্রাম’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। গরু পালন করায় এখানকার কৃষকদের কৃত্রিম সার বাবদ ব্যয়ও কম, আর উৎপাদনও ভাল। ওই গ্রামগুলোতে ফসলী জমিতে সারের চাহিদার প্রায় অধিকাংশই পুরণ করে এখানকার গো-বর্জ্য। যে কারণে ফসলী জমিতে কৃত্রিম সার কম ব্যবহার  হওয়ায় এই এলাকার চালের বেশ কদরও রয়েছে।
Milk_Village-Picশুষ্ক মৌসুমে ওই গ্রামগুলোর লোকজন কৃষি কাজে ব্যস্ত থাকলেও বর্ষা মৌসুমে আশপাশের সব জমিতে পানি থাকায় অনেক কৃষক মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত থাকতো। আবার অনেককেই বেকার হয়ে বসে থাকতে হতো। ফলে দীর্ঘ দিন থেকেই ওইসব গ্রামের বেকার  মানুষগুলো গবাদিপশু পালন বিশেষ করে গাভী পালনের দিকে ঝুকে পড়ে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ওইসব গ্রামের যত গরীব পরিবারই থাকুকনা কেন, প্রতি বাড়িতে কমপক্ষে একটি করে গাভী রয়েছে। আর যাদের অবস্থা মোটামুটি ভাল, তাদের ৫টি থেকে ২০ টি করে গাভি রয়েছে। এমন অনেক পরিবার রয়েছে, যারা প্রতিদিন প্রায় ১মন করে দুধ উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করে। গ্রামে প্রায় ৫ হাজার গাভী থেকে প্রতিদিন প্রায় গড়ে ৫ কেজি করে মোট ২৫ হাজার লিটার অর্থাৎ প্রায় ৬শ মন দুধ উৎপাদন  হয়। গ্রামের পুরুষ-মহিলারা বিকেল হলেই ব্যস্ত হয়ে পরে তাদের গাভী নিয়ে। দুধ সংগ্রহ করে শহর এবং আশপাশের বাজারের দিকে তারা ছুটে চলে। তখন ওইসব গ্রামের রাস্তায় চলে অন্য রকম কোলাহল। শত শত মানুষ দলে দলে বালতি, কন্টি, জারসহ বিভিন্ন পাত্রে দুধ নিয়ে ছুটে চলে দুধ বিক্রির জন্য। কেউবা পায়ে হেটে, কেউবা সাইকেলে করে, কেউবা আবার দলে দলে অটোরিক্সায় ছুটে চলে দুধ নিয়েÑ যার যার গন্তব্যে। সকাল হলেই গ্রামের মানুষরা নৌকা নিয়ে বিলের দিকে ছুটে যায় তাদের গাভীর খাদ্য সংগ্রহের জন্য। ওইসব গ্রামের মানুষরা যে পেশার সাথেই জড়িত থাকুক না কেন, বিকেল হলে তাদের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায় গাভীর দুধ সংগ্রহ নিয়ে। এ ব্যস্ততা শুধু মহিলা ও পুরুষদের মাঝেই নয়, শিশুদেরকেও পর্যন্ত স্বতস্ফুর্তভাবে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। দুধে কোন রকম ভেজাল মেশানো হয় না বলে সারা শেরপুর অঞ্চলে এখানকার দুধের একটা খ্যাতি রয়েছে। তাই পাকুড়িয়ার দুধের  চাহিদাও বেশী। তারা প্রতি লিটার দুধ শহরে নিয়ে ৪০-৪৫ টাকা দরে বিক্রি করে। গরুগুলোর প্রধান খাদ্য ঘাস, কচু, খড়, খুদির ভাত, লালি ইত্যাদি প্রকৃতি জাতীয় খাবার। কোন রকম কেমিকেল জাতীয় খাবার পশুদের খাওয়ানো হয় না। অনেকেই আবার পশুপালনের উপর প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।
ভাটিয়াপাড়া গ্রামের শাহাদাত হোসেন সোহরাব গাভী পালন ও উৎপাদিত দুধ বিক্রি করে এখন স্বাবলম্বী। তিনি জানান, গাভী পালনেই তার দরিদ্র সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে এসেছে। ৭ সদস্যের সংসারের বিশাল ব্যয়ভার বহনসহ সাদ্দাম হোসেন নামে এক ছেলেকে এখন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অনার্সেসহ ৫ ছেলেমেয়েকে পড়াশুনা করাচ্ছেন। এর মধ্যে জাহাঙ্গীর হোসেন নামে দ্বিতীয় ছেলে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। তিনি জানান, ভাটিয়াপাড়াসহ প্রতিবেশি গ্রাম পূর্বপাড়া ও তিলকান্দি’র দরিদ্র ও ক্ষুদ্র কৃষকরা প্রায় ৪০-৪৫ বছর যাবত বাপ-দাদার উত্তরাধিকার হিসেবে গাভী এবং অন্যান্য পশু পালন করে আসছে। এর কারণ হিসেবে তিনি জানান, গ্রামগুলোর দুই পাশের বিলে বর্ষা মৌসুমে গাভীর খাদ্য হিসেবে প্রচুর পরিমানে কচুরি পানা পাওয়া যায়। বর্ষার পর বিলের পানি কমে গেলে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে প্রচুর পরিমানে গো-খাদ্য ‘ঘাস’ পাওয়া যায়। এছাড়া ওইসব জমিতে শুষ্ক মওসুমে ধানের উৎপাদনও বেশ ভাল হয়। ফলে গো-খাদ্য খড়েরও অভাব হয়না। মোট কথা ওইসব গ্রামে গো-খাদ্যের তেমন কোন সংকট না থাকায় প্রতি পরিবার গাভী বা গবাদিপশু পালনে উৎসাহ পেয়েছে। আবার অনেকেই এ গাভী পালন করেই সংসার চালাচ্ছে। ফলে ওইসব গ্রামের মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে এই গাভী পালন। তার মতই গাভী পালনে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন ‘দুধ গ্রাম’ খ্যাত ওইসব এলাকার জমশেদ আলী, তাজউদ্দিন, দুলাল মিয়া, ভুট্টো মিয়া, আব্দুর রেজ্জাক, সুলতান মিয়া ও আলী হোসেনসহ  অনেকেই। তারা এখন স্বাবলম্বীতার মডেল। তবে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পাকুড়িয়া ইউনিয়ন থেকে উৎপাদিত দুধ প্যাকেটজাত করার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে খাটি দুধের চাহিদা মেটানো সম্ভব। আর এটা হলে পরিশ্রমী কৃষক পাবে তার উৎপাদিতক দুধের সঠিক মূল্য।

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

Shamol Bangla Ads
error: কপি হবে না!