ads

মঙ্গলবার , ১৩ আগস্ট ২০১৩ | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

স্মরণীয় বিচার সংগ্রহশালা : সুশোভন মিত্র

শ্যামলবাংলা ডেস্ক
আগস্ট ১৩, ২০১৩ ৫:৫৬ অপরাহ্ণ

      khacha4সুযোগটা এসেছিল হঠাৎই। যেন মেঘ না চাইতেই জল। হঠাৎই খবর পাই একটি বিশেষ সফরে ভারতের কলকাতা হাইকোর্ট এবং সেখানকার বিচারিক ব্যবস্থা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য যেতে হবে।  কলকাতায় এই বঙ্গের হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টানের যাতায়াত হরহামেশাই। কিন্তু আমার যাওয়া হয়নি। গিয়েছিলাম এক উদ্দেশ্যে, কিন্তু অর্জন যেটা হয়েছে তা শুধু ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। অর্জনটা ছিল  হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করার মত। যা হোক, ‘ধান ভানতে শিবের গীত’ না গেয়ে  আসল কথায় যাই। কলকাতা পৌঁছার পরেরদিনটা ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন রোববার। ছুটির দিনে ট্যুরিজমের বাসে চেপে দেখলাম জানা অথচ অদেখা অনেক বিষয়। মাষ্টারদা সূর্য সেনের ম্যুরাল থেকে শুরু করে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ক্রীড়া সাংবাদিকতার সাথে জড়িত ছিলাম বিধায় দেখে এলাম এই অঞ্চলের লর্ডস নামে খ্যাত ইডেন গার্ডেনস, সেই সাথে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে থাকা ‘আকাশবাণী কলকাতা’ ভবন।
DSC05925 পরের দিন সোমবার পূর্ব নিধারিত কর্মসূচী অনুযায়ী কলকাতা হাইকোর্ট, জজ কোর্ট, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি এবং সেখানকার বিচার প্রশিক্ষন ইন্সটিটিউটের কার্যক্রম সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করি। তাদের উষ্ণ আতিথেয়তা এবং নিয়মতান্ত্রিকতায় মুগ্ধ হই।
ওইদিন রাতে একটা গ্র“প চলে যায় দার্জিলিং-এর দিকে। আমি এবং আমার এক সিনিয়র সহকর্মী থেকে যাই কলকাতায়। বিষয়টা ছিল ‘এক ঢিলে দুই পাখি’ মারার মত। কলকাতায় স্বাস্থ্যসেবাটা নাকি ভালো হয়। সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইলামনা। আমাদেরকে মেডিক্যাল চেকআপ করানোর সুযোগ দেয়ার স্বার্থেই আলীপুর জেলা জজ আদালত থেকে অভিজ্ঞতা অর্জনের কর্মসূচী নির্ধারণ করা হয় আমাদের জন্য। মঙ্গলবার দিনটা কাটাই কলকাতার মুকুন্দপুরে অবস্থিত মেডিকা স্পেশালাইজড হাসপাতালে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ডাঃ সঞ্জীব গার্গের তত্ত্বাবধানে যাবতীয় শারীরিক পরীক্ষার ফলাফল ভালো আসতে দেখে পুলকিত হই।
পরদিন অর্থাৎ বুধবার পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচী অনুযায়ী আমি এবং আমার সিনিয়র সেই কর্মকর্তা  সকাল ৯টার আগেই কলকাতা থেকে আলিপুর জেলা জজ আদালতে গিয়ে পৌঁছাই।। বাংলাদেশের অসহনীয় যানজটের কথা মাথায় রেখে অনেক সকালে কলকাতার হোটেল থেকে বেরিয়ে আলিপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিলাম। কিন্তু  সেখানে পৌঁছার পর একজন নাইট গার্ড এবং রাত জাগা কয়েকটি কুকুর ছাড়া অন্য কারোর দর্শন পাইনি। একটি কুকুর আমাদেরকে উটকো উৎপাত ভেবে কিছুক্ষন ঘেঁউ ঘেঁউ করে রণেভঙ্গ দেয়। বেচারার শরীরে তখন সারা রাতের ক্লান্তি।
আলিপুর জেলা জজ আদালতের বিশাল কম্পাউন্ডের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ একটি সাইন বোর্ড চোখে পড়ে “স্বরণীয় বিচার সংগ্রহশালা” । এত সকালে হাঁটতে হাঁটতে কিছুটা বিরক্ত হচ্ছিলাম। বিরক্তি নিয়ে আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করি, এটা আবার কি? স্যার জবাব দেন, বড় এবং আলোচিত মামলার নথি হয়তো সংরক্ষিত আছে। একজন দুইজন করে মানুষ আসতে থাকে। সাড়ে ৯ টার দিকে তাদের কাছে প্রশ্ন করে জানতে পারি এখানে আদালতের অফিস শুরু হয় বেলা ১০ টায়। কিছুক্ষন পর কাঁটায় কাঁটায় বেলা ১০ টা বাজতেই বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দের গাড়ী এক এক করে আদালত কম্পাউন্ডে পৌছতে থাকে। বাংলাদেশের মত একটা মাইক্রোতে করে জুনিয়র থেকে শুরু করে অতিরিক্ত জেলা জজ পর্যায়ের বিজ্ঞ বিচারকরা আসেননা। তাদের সর্বকনিষ্ঠ বিচারক থেকে শুরু করে অতিরিক্ত জেলা জজ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে প্রতি তিনজনে একটি করে অ্যাম্বাসেডর গাড়ী। এক  পর্যায়ে বিজ্ঞ জেলা জজ মহোদয়ের গাড়ীটি প্রবেশ করে । পিয়ন- চাপরাশির মাধ্যমে আমাদের সাক্ষাতের ইচ্ছা পৌছে যায় জেলা জজের কাছে। অনুমতি আসতে দেরি হয়নি। বিচারিক পদ্ধতির আলোচনার চেয়ে কথা হয় এপার বাংলা –  ওপার বাংলার সম্পর্ক নিয়ে বেশি। এরই মাঝে তৎকালীন ওই জেলার অতিরিক্ত জেলা জজ আসেন । জানতে পারি প্রথা অনুযায়ী আলিপুরের জেলা জজ বিচারপতি হিসাবে শপথ নেবেন। সময় গড়িয়ে যায়। জেলা জজ মহোদয়ের আদালতের আসন গ্রহনের সময় হয়ে আসে। আমাদের উঠতে হয়। বিজ্ঞ জেলা জজ মহোদয় বলেন, আলিপুর থেকে যাবার আগে আপনারা দয়া করে বিচার সংগ্রহশালাটি দেখে যাবেন। তিনি তার গানম্যান এবং অর্ডারলিকে আমাদের সাথে বিচার সংগ্রহশালায় পাঠান।
DSC05931প্রবেশের আগেই আমার চোখ কপালে উঠে যায়। একি? এখানে যে ভারতের বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মহান বিপ্লবীদের বিচার কার্যক্রম সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। আমার উর্ধ্বতন  কর্মকর্তা প্রশ্ন করেন, ‘কি হে তোমার ডিজিটাল ক্যামেরা কোথায়?’ কোন কথা না বলে সকলের সামনে কান ধরে উঠা বসা করি কয়েক বার। ডিজিটাল ক্যামেরাটি  আমার হোটেলে রেখে আসা হয়েছে। ভেবেছিলাম আলীপুরে গিয়ে কি আর দেখব। সেই সাথে বিদেশ বিভুঁইয়ে চারদিন কেটে গেছে। স্ত্রী -পুত্র-কন্যার চিন্তা হচ্ছে বারবার। যে কারণে শুধুমাত্র দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশে ফেরার চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ক্যামেরা নামে বস্তুটা যে সাথে আছে, সেটাই ভুলে গেছি।
বিচার সংগ্রহশালায় প্রবেশের পর দেখি সেখানে সযতেœ রাখা আছে বিপ্লবীদের বিচারের এজলাস। ক্ষুদিরামের ফাঁসির আদেশটি যে টাইপ রাইটারে টাইপ করা হয়েছিল কাঁচ দিয়ে ঢাকা আছে সেটি। এজলাসের সামনে বিশাল আকৃতির লোহার খাঁচা। এই খাঁচার মধ্যে সারি সারি বেঞ্চি। বেঞ্চের উপর  সাজিয়ে রাখা আছে বিপ্লবীদের ছবি। প্রশ্ন করে জানতে  পারি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মহান বিপ্লবীদের বিচারের সময় এই লোহার খাঁচায় রাখা হতো।  যিনি যে জায়গাতে বসে বিচার শুনতেন তার ছবিটি ঠিক সে জায়গাতে রাখা আছে। দেখলাম কাঁচের বক্সের মধ্যে রক্ষিত আছে ক্ষুদিরাম বসুর বিরুদ্ধে মেদিনিপুর জেলা জজ আদালতের ১৯০৬ সালে দায়েরকৃত ফৌজদারী মামলার নথি। বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকীর মৃতদেহের সম্মুখ এবং পার্শ্ব ভাগ বিপ্লবী বিনয় বসু এবং সুধীর গুপ্তের ছবি। তাদের হাতে নিহত জেনারেল সিম্পসন এর সুরতহাল রিপোর্ট, নেতাজী সুভাস বসুর মামলার সাক্ষীর সময় সহকারী পুলিশ কমিশনারের কাছে লেখা নেতাজীর চিঠি। আন্দামান সেলুলার জেল ও জেল ওয়ারেন্ট। ঢাকার এসপির কাছে লেখা একটি চিঠির কপি, অমৃত হাজরার বিরুদ্ধে আনীত মামলায় বোমার খোল। খোলটি মামলা প্রমাণের জন্য প্রদর্শনী আকারে চিহ্নিত হয়েছিল।
সেই সময়ের বৃটিশ সিংহ যে ভারতীয় বিপ্লবীদের বিশেষ করে বাংলার বিপ্লবীদের কতটা ভয় পেতেন তার আশ্চর্য এক নিদর্শন দেখলাম ওই কক্ষে। বিচারকরা বিপ্লবীদেরকে শুধুমাত্র এজলাশের লোহার খাঁচায় বসিয়ে নিরাপদ বোধ করতেন না। বিচার কক্ষ থেকে নিজের বাসায় যেতেন সুড়ঙ্গপথে। সেই পথটি এখন সাপ-খোপের বাসায় পরিণত হওয়ার কারণে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এ সব দেখার পরে মনে হয় ছবি না তুলে যাই কি করে। এ দুর্লভ সুযোগ জীবনে আর নাও আসতে পারে।  কলকাতায় ফিরে আসি ফিরে এসে ক্যামেরা নিয়ে আবারও যাই  আলিপুরে। ভারতীয় মুদ্রায় ৩০০ রূপীর মত অতিরিক্ত খরচ হয়ে যায়। কিন্তু ৩০০ রূপীতে ২০০ বছরের পরাধীনতার এইসব নির্মম নিদর্শন দেখা কি সম্ভব ছিল। আলীপুরের জেলা জজ মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাই, এই কারণে যে, তিনি তার গানম্যান এবং অর্ডারলিকে আমার সঙ্গে দিয়ে বলেছিলেন, ‘এখানে ছবি তোলার অনুমতি নেই, তবে বাংলাদেশ থেকে আসা এই বন্ধু কিছু করতে চাইলে তাকে অসম্মান করোনা।’ পিতৃতুল্য সেই মানুষটির এমন সরলতার কারণে আজ শ্যামলবাংলার পাঠকদেরকে দিতে পারা গেল দুর্লভ কিছু ছবি।
alipur-1বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অবস্থায় একটি ছোট বই পড়েছিলাম–অগ্নিপুত্র। এই বইয়ে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিঃশেষে প্রাণ দেয়ার ইতিহাস পড়েছিলাম। বইটি পড়তে পড়তে বহুবার রোমাঞ্চিত হয়েছি। এক বন্ধুর কাছ থেকে ধার করা বইটি মেরে দেয়ারও লোভ হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আর সাহসে কুলোয়নি। সেই বন্ধু (ভাস্কর সেনগুপ্ত, বাকৃবি কলেেেজর বাংলার অধ্যাপক) বইটি রক্ষা করতে পারেনি। চুরি হয়ে যায়  কেউ মেরে দেয়)। বইটি এখন নাকি ঢাকায় পাওয়া যাচ্ছে। যোগাড় করার বহু চেষ্টা করেও আমি আর পারিনি।
আলীপুরে গিয়ে বইয়ে পড়া সেইসব ইতিহাসের সাথে চাক্ষুস পরিচয় ঘটে। আমি শিহরিত হই। আমাদের সেই সফরের বন্ধুদের যারা দার্জিলিং গিয়েছিলেন তারা হয়তো প্রকৃতির সাথে একাত্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু উদয়ের পথে যারা নিঃশেষে প্রাণ দিয়ে গেছে তাদের স্মৃতি স্পর্শ করার অমূল্য সুযোগ পেয়েছিলাম আমি।
পুনশ্চ:- ভারত ভ্রমনে গিয়ে ইতিহাসের সাক্ষী হতে চাইলে দেখে আসতে ভুলবেন না আলিপুরের স্বরণীয় বিচার সংগ্রহশালা। সেই সাথে পড়া চাই বৃটিশবিরোধী সংগ্রামের মহান বিপ্লবীদের নিয়ে লেখা বই ‘অগ্নিপুত্র’।
khudiramer bibrity

Shamol Bangla Ads

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

Shamol Bangla Ads
error: কপি হবে না!