নিজে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও অসুস্থ ও বৃদ্ধা মাকে কোলে নিয়ে রাস্তার পাশে বসে ভিক্ষাবৃত্তিতে এতদিন খেয়ে-পরে ভালোই চলছিল মিন্টু মিয়ার (৪০)। এখন গর্ভধারিনী সেই মাতা অমেছা খাতুন (৭৫) কে হারিয়ে কমে গেছে আয়। সেইসাথে বেড়ে গেছে তার কষ্ট। তারপরও অদম্য মিন্টু চলার মতো আয়-রোজগারের একটি পথ পেলে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে প্রতিবন্ধী স্ত্রীকে নিয়ে বাঁচতে চায়।

মিন্টু শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের যোগিনীবাগ মধ্যপাড়া গ্রামের প্রয়াত আব্দুস সালামের একমাত্র সন্তান। তার পিতা ছিল দিনমজুর। এক খণ্ড বসতভিটা ছাড়া কোন জায়গা-জমি ছিল না তার। তারপরও একমাত্র সন্তান হিসেবে ছিল পিতা-মাতার অতি আদরের। কিন্তু সাড়ে তিন বছর বয়সে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দুটি চোখ তার নষ্ট হয়ে যায়। এর কয়েক বছর পর সংসারের একমাত্র অবলম্বন পিতা ইটের ভাটায় শ্রমিকের কাজে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর এলাকায় গেলেও আর ফিরে আসেননি। সেখানেই দ্বিতীয় বিয়ে করে বসবাস করতে থাকেন। এদিকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সন্তান মিন্টুকে নিয়ে মা অমেছা খাতুন প্রতিবেশীদের বাড়িঘরে ঝিয়ের কাজ করে কোনোরকম জীবনযাপন করছিলেন। এক পর্যায়ে উমেছা খাতুন অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়লে মিন্টু বেছে নেয় ভিক্ষাবৃত্তি। এলাকার রাস্তার ধারে অবস্থান নিয়ে দিনের ভিক্ষাবৃত্তি দিয়ে কোনমতো মাকে নিয়ে সংসার চালিয়ে আসছিল। কয়েক বছর আগে মায়ের কথায় খুকি বেগম নামে এক প্রতিবন্ধী যুবতীকে বিয়ে করলে সংসারের খরচ বেড়ে যায়। অগত্যা মিন্টু মাকে নিয়ে প্রায় ৩ বছর আগে থেকে শেরপুরের ডিসি গেটের রাস্তার পাশে ভ্যানে বা কখনো রাস্তায় পলিথিন বিছিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে আসছিল। ওই অবস্থায় অনেক সময় অসুস্থ বৃদ্ধা মাকে কোলে নিয়ে মিন্টুর ভিক্ষাবৃত্তির দৃশ্য প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলের দৃষ্টিতে পড়লেও তাদের প্রতি দয়া বা মহানুভবতার হাত বাড়ায়নি কেউ। মেলেনি তার ভাগ্যে ভিক্ষুকমুক্ত শেরপুর গড়ার কোন সহায়তাও।
সোমবার সকালে ডিসি গেটের রাস্তার পূর্বপাশে তাকে একা দেখে তার মার কথা জিজ্ঞেস করতেই সে আবেগতাড়িত হয়ে জানায়, ৭ আগস্ট তার মা মারা গেছে। ভিন্ন জেলায় বসবাস করা বাবা আরও আগেই মারা গেছে। মাকে নিয়ে ডিসি গেটের রাস্তার পাশে বসে দৈনিক ৪/৫শ টাকা পেয়ে ৩ জনের সংসার কোনমতো চলছিল। কিন্তু মাকে হারিয়ে একদিকে শোক, অন্যদিকে আয়-রোজগারও কমে গেছে। এখন দিনে ২শ টাকা পাওয়ায় কষ্টকর। মিন্টু আরও জানায়, সে প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও তার স্ত্রী তা পায় না। তবে আয়-রোজগারের জন্য একটি বিকল্প ব্যবস্থা বা নিজ বাড়িতে একটি দোকান করতে পারলে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে সে তা চালাতে পারতো। এজন্য সে সরকারের দায়িত্বশীল ও সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ দানশীল ব্যক্তিদের মানবিক সহায়তা কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, আমাদের ভিক্ষুক পুনর্বাসনের কর্মসূচি চলমান রয়েছে। মিন্টু মিয়ার বিষয়েও খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

