স্টাফ রিপোর্টার : ভুল চিকিৎসায় এক গৃহবধূর স্তন কেটে ফেলার অভিযোগে শেরপুরে দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু হয়েছে। ৪ জানুয়ারি সোমবার রাতে শ্রীবরদী থানায় ওই মামলাটি রেকর্ড হয়। মামলায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে কর্মরত ডা. শরীফুল ইসলাম শরীফ ও ময়মনসিংহের কুন্ডু প্যাথলজির মালিক অধ্যাপক ডা. কে.কে. কুন্ডুকে আসামী করা হয়েছে। ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। তবে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত তারা কেউ গ্রেফতার হননি।
মামলার বিবরণে বলা হয়, স্তনের ফোঁড়াকে টিউমার বলে ভয় দেখিয়ে শ্রীবরদী উপজেলার কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের ভুতনীপাড়া গ্রামের দুই সন্তানের জননী ওই গৃহবধূর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে স্তন কেটে ফেলেন চিকিৎসক ডা. শরীফুল ইসলাম শরীফ। ওই চিকিৎসক শ্রীবরদী উপজেলার লঙ্গরপাড়া গ্রামের মৃত কছর আলীর ছেলে। গত নভেম্বর মাসে শ্রীবরদী শহরের শান কিনিকে চিকিৎসক শরীফকে স্তনের ফোঁড়া দেখাতে যান ওই গৃহবধূ। ওইসময় চিকিৎসক তার স্তনে টিউমার হয়েছে বলে পরীা-নিরীার জন্য তাকে ময়মনসিংহের সেহরা এলাকার কুন্ডু প্যাথলজিতে পাঠান। সেখানে পরীায় ফোঁড়াকে টিউমার চিহ্নিত করে তাতে ক্যান্সার রয়েছে বলে রোগীকে ঢাকায় পাঠানো হয়। চিকিৎসক শরীফ ১১ নভেম্বর রোগীর স্বামী সোলাইমান মিয়ার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে ঢাকার উত্তরার আব্দুল্লাহপুর এলাকার আইচি কিনিকে ভর্তি করান। সেখান থেকে গৃহবধূকে শাহবাগের মডিউল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ১৫ নভেম্বর তার বাম স্তন কেটে ফেলেন। ওইসময় গৃহবধূর স্বামীর কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা নেয়া হয়। পরে বায়োপসি করার জন্য প্রথমে ধানমন্ডির আনোয়ারা মেডিকেল সার্ভিসেস ও পরে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হলে সেখান থেকে জানানো হয়, স্তনে কোনো ক্যান্সার নেই। পরে গৃহবধূর স্বামী চিকিৎসক শরীফের শরণাপন্ন হলে তিনি বলেন, ভুল চিকিৎসা হয়েছে, আমি প্লাস্টিক সার্জারি করে বিকল্প স্তন লাগিয়ে দেবো। এ ব্যাপারে চিকিৎসক শরীফুল ইসলাম শরীফের সাথে বার বার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
ওই ঘটনায় ২৯ ডিসেম্বর শেরপুরের সিআর আমলী আদালতে দুই চিকিৎসককে আসামি করে একটি নালিশী মামলা দায়ের করেন গৃহবধূর স্বামী সোলাইমান মিয়া। আদালত মামলাটি সরাসরি নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহণ করে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শ্রীবরদী থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। মামলার ৫ দিন পর তা রেকর্ড হয়। মামলার বাদী সোলায়মান মিয়া বলেন, আর যেন কাউকে কসাইরূপি এমন চিকিৎসকদের ফাঁদে পড়ে ভুগতে না হয়, তার জন্য তাদের উপযুক্ত সাজা চাই।
দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা গ্রহণের সত্যতা নিশ্চিত করে শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আদালতের নির্দেশে নিয়মিত মামলা রুজু হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।