খোরশেদ আলম/এম. সুরুজ্জামান ॥ শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদী উপজেলার গারো পাহাড়ে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। গত ক’দিনের কনকনে শীত ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় জন-জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। হাড় কাঁপানো শীতে দরিদ্র, ছিন্নমূল, আদিবাসী ও বেদেপল্লীর লোকজন বেশি কষ্ট পাচ্ছে। দরিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী এখানকার অধিকাংশ অধিবাসীরা প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে অতিকষ্টে রয়েছেন। বিশেষ করে পাহাড়ের অভ্যন্তরে ও পাদদেশে বসবাসকারী মুসলিম সম্প্রদায়সহ আদিবাসী তথা উপজাতি গরো-কোচ সম্প্রদায়ের মানুষের শীতের কারনে তাদের কষ্ট বাড়ছে।
গত দু’দিন ধরে শেরপুর সীমান্তের নালিতাবাড়ী উপজেলার সমেশ্চুড়া, মধুটিলা, বুরুঙ্গা, খলচান্দা, বারোমারী, কালাপানি, দাওধারা, কাটাবাড়ি, হাতিপাগার, নাকুগাঁও, কালাকুমা, তারানী, পানিহাটা ও মায়াঘাসী। শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুড়ি, রাঙাজান, খ্রিস্টানপাড়া, খাড়ামোড়া, হালুয়াহাটি, পোড়াবাড়ি, মাদরাসাবাড়ি, হাতিবর, জুগগারি, ঝোলগাঁও কোচপাড়া, কান্দাপাড়া, দলভাড়ি, দার্শিকোনা, দীঘলাকোনা, বাবেলাকোনা, হারিয়াকোনা, চান্দাপাড়া, রাজারপাহাড়, ডুমুরতলা, কর্ণঝোড়া ও মেঘাদ। ঝিনাইগাতি উপজেলার তাওয়াকুচা, দুধনই, পানবর, নকশী, সন্ধ্যাকুড়া, হলদিগ্রাম, রাংটিয়া, গান্ধীগাঁও ও বাকাকুড়াসহ প্রত্যন্ত পাহাড়ি পল্লীগুলোতে চলছে প্রচন্ড শীতের মহড়া। উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের হিমালয় পর্বতের হিমবায়ু আর ঘন কুয়াশায় জেঁকে বসেছে প্রচন্ড শীত। এখানকার খেটে খাওয়া ছিন্নমুল মানুষগুলো প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন।
নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো আদিবাসী নেতা মি. প্রদীপ জেংচাম (৪০) জানান, দিন দিন শীত বাড়ছে। প্রচন্ড শীতের কারনে সীমান্ত এলাকার গারো আদিবাসীরা শীতে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। প্রতিবছর এভাবেই শীতের সঙ্গে লড়াই করে তাদের বেঁচে থাকতে হয়। এতে পাহাড়ি এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা হয়ে পড়ে বিপর্যস্ত। এসব অঞ্চলের শীতার্ত মানুষ পাহাড় থেকে লাকড়ি ও খরকুটা সংগ্রহ করে তা জ্বালিয়ে আগুন দিয়ে শরীর ছেঁকে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন।
আন্ধারুপাড়া গ্রামের শিক ছামাদুল হক (৪৫) বলেন, ভিতর এলাকার চেয়ে সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় শীত পড়ে বেশি। সেই হিসেবে গরীব মুসলিমসহ অন্যান্য আদিবাসীরা সরকারিভাবে তেমন কোন শীতবস্র পায় না। খলচান্দা গ্রামের কোচ আদিবাসী পরিমল কোচ (৩৬) বলেন, সমতলের চেয়ে পাহাড়ে শীত পড়েছে বেশি। বেলা ১২টার আগে সুর্যের দেখা পাওয়া যায় না। পর্যাপ্ত শীতবস্রের অভাবে রাত জেগে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছে। কোচরা সবসময়ই সরকারি বরাদ্ধের শীতবস্র ঠিকমতো পায় না। বর্তমানে শীত নিবারনের জন্য মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মানুষ লেপ-তোষকের দোকানে ভীড় করছেন। ছিন্নমুল আর গরীব মানুষগুলো ভীড় করছেন পুরাতন গরম কাপড়ের দোকানে। হত দরিদ্র মানুষেরা সব চেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন। তারা সরকারি ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
তবে এলাকাবাসী জানান, শেরপুর-২ আসনের সাংসদ (নকলা-নালিতাবাড়ী) ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী শীত মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই তার নির্বাচনী এলাকায় স্বল্প পরিমানে শীতবস্র হিসেবে কম্বল বিতরন করেছেন। তবে এগুলো পর্যাপ্ত নয় বলে ভুক্তভোগি শীতার্ত মানুষেরা জানিয়েছেন। ঝিনাইগাতী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, প্রথম দফায় ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ৫শ’ ৭৮টি কম্বল পেয়ে তা বিতরণ করা হয়েছে। এদিকে প্রচন্ড শীত আর ঘন কুয়াশার কারনে কৃষকের বোরা ধানের বীজতলা ও সরিষার েেতর ব্যাপক তি হচ্ছে।