বিদায় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। স্বাগত ১৪৩২ বাংলা সন। বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জীবন থেকে ঝরে গেল আরও একটি বছর। জরাজীর্ণ পুরোনোকে বিদায় জানিয়ে চিরনতুন, চিরসবুজের আহ্বান জানিয়ে শুরু হলো মহাকালের নিরন্তর পথচলা। এবার অবশ্য বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে গত কয়েক বছর ধরে মহাআড়ম্বরে পালিত মঙ্গল শোভাযাত্রা থাকছে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এর নতুন নামকরণ হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য, বর্ণাঢ্য ও আনন্দ মুখরিত নানা লোকমোটিফ ও মুখোশের সমারোহে আয়োজিত মঙ্গল শোভযাত্রাটি ইতোমধ্যে স্থান পেয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে, যার স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনিসেফ। ঢাবি কর্তৃপক্ষ অবশ্য এক ব্যাখ্যায় বলেছে, এটি নতুন নামকরণ নয়, বরং পুরোনো ঐতিহ্যে ফেরা। উল্লেখ্য, ঢাবির অন্তর্ভুক্ত চারুকলা বিভাগ ১৯৮৯ সাল থেকে পহেলা বৈশাখে শোভাযাত্রার আয়োজন করে আসছে। তখন এর নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। সেই প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে এ বিষয়ে চারুকলার ডিন বলেছেন, এটি পরিবর্তন নয়, বরং পুনরুদ্ধার। ‘নববর্ষের ঐক্যতান ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে এবার আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশ নেবে দেশের ২৮টি জনগোষ্ঠী।
পহেলা বৈশাখকে বরণ করে নেওয়ার জন্য থাকছে ঐতিহ্যবাহী ছায়ানটের অনুষ্ঠান, আনন্দ শোভাযাত্রা, গ্রামীণ মেলা, মিলন উৎসব। প্রায় সবকিছুই চলবে সীমিত পরিসরে ও আয়োজনে প্রধানত নিরাপত্তাজনিত কারণে। তবে এ সংক্রান্ত সব অনুষ্ঠান চলবে ব্যাপকভাবে কেবল টিভি ও গণমাধ্যমে। সবাইকে মনেপ্রাণে বলতেই হবে, এসো হে বৈশাখ এসো এসো…। জীর্ণ পুরাতন ভেসে যায়। আসে নতুন এবং তার আবাহন। ধ্বনিত হয়, ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা।’ চিরায়ত বাঙালির জীবনের এক প্রাণস্পর্শী দিনের শুরু হবে আজ ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে। নতুনের কেতন উড়িয়ে বৈশাখ দেবে নতুনেরে ডাক, খোলো খোলো দ্বার। বাংলার মাটি, বাংলার সবুজ-শ্যামলিমা, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল- সবখানেই চির নতুনের আবাহন জেগে উঠছে ভোরের রাঙা সূর্যালোকে।

পয়লা বৈশাখ বাঙালির প্রিয় দিন। নববর্ষ হোক আনন্দের, উত্থানের। নতুন বর্ষে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল হোক চিরতরে। নাশকতা, সহিংসতা বন্ধ হোক। স্বদেশ হোক কলুষমুক্ত। বৈশাখ মানে গ্রীষ্ম ঋতুর শুরু। উজ্জ্বল রৌদ্রময় দিন। তেমনি আবার কালবৈশাখীর বজ্র-বিদ্যুৎসহ ভয়াল রূপও বটে। জীবন সংগ্রামের দীক্ষা লাভের নানা রূপের সংমিশ্রণ নববর্ষের সূচনালগ্ন। এই সূচনালগ্নে নতুন ভাবনা-চিন্তায় কতটা এগিয়েছি আমরা, এরও মূল্যায়ন করা দরকার। নতুন বছরে পদার্পণের অর্থই হলো নতুনের মুখোমুখি হওয়া। সামনের দিনগুলোকে নবউদ্যমে বিনির্মাণের তাগিদ। আমাদের উদ্যম, আমাদের অধ্যবসায় সব নিয়োজিত হোক জাতীয় ঐক্য ও উন্নয়নের লক্ষ্যে। উৎসবের আনন্দ নতুন সংকল্পে দীক্ষিত জাতির নতুন বাংলাদেশ গড়ার নতুন শক্তির প্রেরণা হোক। দুঃখ-গ্লানি, অতীতের ব্যর্থতা পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার শপথ নেওয়ার দিন পয়লা বৈশাখ। দেশ ও জাতির কল্যাণে সবাই এক কাতারে শামিল হয়ে এগিয়ে যাওয়ার বজ্রশপথ নেওয়ার দিন এটি। পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনেও বৈশাখের চেতনায় উজ্জীবিত হোক সবাই। নতুন ভবিষ্যৎ গড়ার প্রত্যয়ে সবাই হোক উদ্দীপ্ত। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা। স্বাগত ১৪৩২।
