আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষ মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিন দ্বিতীয় সেশনে সাকিব আউট ৮৭ রানে। তার ৬ বছরের টেস্ট সেঞ্চুরি খরার অবসান হলো না এবারও। কিছু শট দুর্দান্ত, কিছু ঝুঁকিপূর্ণ, কিছু নান্দনিক। একটা পর্যায়ে সেঞ্চুরিকে মনে হলো কেবল সময়ের ব্যাপার। কিন্তু সেই সময়টা আর এলো না। নিজেকে সেই সময়টুকু দিলেন না সাকিব আল হাসান।
অফ স্পিনার অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের বলটি ছিল অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে। কাভারের দিকে ড্রাইভ খেলা যায় সেটি, কাট কিংবা লেট কাট তো করাই যায়। কিংবা ছেড়েও দেওয়া যায় অনায়াসে। সাকিব হয়তো আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন, সুইপ বা প্যাডল সু্ইপ করবেন। সেই চেষ্টাতেই সেঞ্চুরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু। ব্যাটের কানায় লেগে বল কিপারের গ্লাভসে। ২০১৭ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পি সারা ওভালে সেঞ্চুরি করেছিলেন সাকিব। এরপর আর তিন অঙ্কের স্বাত পাননি। ২০১৯ সালে আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় এক বছর তাকে থাকতে হয়েছে মাঠের বাইরে। নিষেধাজ্ঞার আগে-পরে মিলিয়ে এই ইনিংসটি দিয়ে সেঞ্চুরি নেই তার টানা ৩০ ইনিংসে। এই সময়টায় ফিফটি আছে তার ১০টি। এর মধ্যে ৪টি ইনিংসকে নিয়ে গেছেন ৮০ রানের সীমানায়। কিন্তু একটিতেও নিতে পারেননি সেঞ্চুরির ঠিকানায়।
ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রামে ৮৪ রান করে তিনি আউট হন কুলদিপ যাদবের বলে সুইপ খেলার চেষ্টায়। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুরে কেমার রোচের বলে আলগা শটে গালিতে ক্যাচ দেন তিনি ৮০ রান করে।
মিরপুরেই ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮৪ রানে আউটেই কেবল বেশি কৃতিত্ব বোলারের। সেবার ন্যাথান লায়নের তীক্ষ্ণ টার্ন ও বাড়তি বাউন্সে স্লিপে ধরা পড়েন তিনি। ৬৬ টেস্টের ক্যারিয়ারে তার সেঞ্চুরি এখনও পর্যন্ত মোটে ৫টি। অথচ অনায়াসেই তা হতে পারত অন্তত ১০টি। ক্যারিয়ারে ৮০ ছুঁয়েও শতরান পর্যন্ত যেতে পারেননি ১৩ বার! এর মধ্যে দুটি ইনিংসে তিনি অপরাজিত ছিলেন। বাকি ১১ ইনিংসের বেশির ভাগ সময়ই আউট হয়েছেন কখনও খামখেয়ালিপনায়, কখনও অসতর্কতায়।
৯৬ রানে আউট হয়েছেন তিনি দুই দফায়। ২০০৮ সালে মিরপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনি ধাম্মিকা প্রাসাদের বল ড্রাইভ খেলতে গিয়ে টেনে আনেন স্টাম্পে। ২০১০ সালে মিরপুরেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে স্টাম্পড হয়ে যান তিনি জেমস ট্রেডওয়েলের বল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলার চেষ্টায়। তখন অবশ্য তার সঙ্গে উইকেটে ছিলেন শেষ ব্যাটসম্যান। তবু সেঞ্চুরিটা হয়তো করে ফেলতে পারতেন তিনি ওই সময় আরেকটু ‘স্মার্ট’ ব্যাটিং করলেই।
২০১২ সালে মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৮৯ রানে রবি রামপলের বল আলগা শটে কাভার ফিল্ডারের হাতে তুলে দিয়ে সাকিব হতাশা প্রকাশ করেছিলেন তখনই। ২০১০ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যামিল্টনে ক্রিস মার্টিটের বল খেলবেন কী ছাড়বেন, এই দোটানায় আউট হয়ে যান ৮৭ রানে। সেই টেস্টেই অবশ্য দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি, তার টেস্ট ক্যারিয়ারে যা ছিল প্রথম সেঞ্চুরি।
২০১৭ সালে ভারতের বিপক্ষে হায়দরাবাদে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে টার্নের বিপক্ষে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় তার ইনিংস শেষ হয় ৮২ রানে। ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারে টেস্টে ৮১ রানে এল্টন চিগুম্বুরাকে উইকেট উপহার দেন।
বেশির ভাগ সময়ই অবশ্য সাকিব রান করেছেন আগ্রাসী খেলেই। টেস্টেও বরাবরই শট খেলতেই দেখা গেছে তাকে। তবে ৮০ ছোঁয়ার পর আউট হওয়া তার কিছু কিছু শট ম্যাচের পরিস্থিতি আর পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় ছিল দৃষ্টিকটূ।