বিশ্ব কফি দিবস আজ
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ে বদলে যাচ্ছে গ্রামের চেহারা। বনজ ও ফলদ গাছের ছায়ায় দীর্ঘদিন অব্যবহৃত জমিতে এখন গড়ে উঠেছে কফিবাগান। শতাধিক কৃষক প্রায় ৫০ হাজার কফিগাছ লাগিয়েছেন। কফি চাষের মূল উদ্যোক্তা নালিতাবাড়ীর কৃষিবিদ সাজ্জাদ হোসেন, যিনি বান্দরবানে দায়িত্ব পালনকালে অনুপ্রাণিত হয়ে এলাকায় ফিরে স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে এ চাষ শুরু করেন।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পৃথিবীতে নানা প্রজাতির কফি থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে মূলত দুটি জাত—‘এরাবিকা’ ও ‘রোবাস্টা’—চাষ হয়। রোবাস্টা বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকায় চাষের জন্য উপযোগী। কফির চারাগুলো দেবদারু গাছের চারার মতো দেখতে। মার্চ-এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে ফুল আসে, মে-জুনে গুটি বাঁধে, আর আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ফল পরিপক্ব হয়। পরে রোদে শুকিয়ে মেশিনের মাধ্যমে কফি গুঁড়া করা হয়।
আবহাওয়া অনুকূলে গাছপ্রতি ৫-৭ কেজি ফলন হয়। প্রতি একরে ২৫০-৩০০টি গাছ লাগানো সম্ভব। ২০০ গাছ থেকে বছরে প্রায় এক হাজার ৬০০ কেজি কফি পাওয়া যায়, যার ন্যূনতম বাজারমূল্য দাঁড়ায় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

কৃষিবিদ সাজ্জাদ হোসেন তুলিপ বান্দরবানে কাজ করার সময় কফি চাষের সম্ভাবনা দেখেন। ২০২১ সালে তিনি সেখান থেকে ৫ কেজি কফি কিনে চারা উৎপাদন করেন এবং হালুয়াঘাট, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করেন। বর্তমানে সেই গাছগুলো ফল দিতে শুরু করেছে। দেশের কৃষি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আগামী দুই বছরে গারো পাহাড়ে দুই লাখ চারা বিনা মূল্যে বিতরণের পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি।
কৃষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চারা রোপণ ও পরিচর্যার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বাড়ির বাগানে ছায়াযুক্ত স্থানে সাথী ফসল হিসেবে কফি চাষ করে বাড়তি আয় করার সুযোগও রয়েছে।
কৃষক আতিকুর রহমান বলেন, আমাদের এলাকার তুলিপ ভাই দীর্ঘদিন ধরে কফির চাষ করছেন। আমরা তাঁকে দেখে আগ্রহী হয়েই কফি চাষ শুরু করেছি। কফি চাষে বাড়তি কোনো জমি লাগে না, বাড়ির বাগানের ছায়াযুক্ত স্থানেই করা যায়।
উদ্যোক্তা সাজ্জাদ হোসেন তুলিপ বলেন, যে কোনো ছায়াযুক্ত জায়গায় সহজেই কফি চাষ করা যায়। সাথী ফসল হিসেবে চাষে কৃষকেরা বাড়তি আয় করছেন। শতাধিক কৃষক ইতিমধ্যেই চাষ শুরু করেছেন, তাদের উৎপাদিত কফি আমরা প্রক্রিয়াজাত করছি।
কাজুবাদাম ও কফি চাষ উন্নয়ন, গবেষণা ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বাজারে আমদানি করা নানা ব্র্যান্ডের কফি রয়েছে। আমরা খেয়ে দেখেছি, গারো পাহাড়ের পাদদেশে চাষ করা কফি মানসম্মত।

