ads

সোমবার , ১৩ অক্টোবর ২০২৫ | ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

আলোকচিত্রী নীতিশ রায়ের আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি ‘তৃষ্ণা’র ভুয়া দাবীদার কে তুমি?

শ্যামলবাংলা ডেস্ক
অক্টোবর ১৩, ২০২৫ ২:২৭ অপরাহ্ণ

আবুল কালাম আজাদ

Shamol Bangla Ads

ফটোগ্রাফিতে নিবেদিতপ্রাণ আন্তর্জাতিক ‘ইয়াকুল্ট’ পুরস্কারপ্রাপ্ত শেরপুরের আলোকচিত্র শিল্পী ‘নীতিশ রায়। তার সৃষ্টিকর্মগুলো যেন অগ্নিযুগের অগ্নিসাক্ষীরূপে জ্বলজ্বল করতো নিউমার্কেটে স্টুডিও রূপশ্রী’র গ্যালারিতে। তার বিখ্যাত তৃষ্ণা ছবিটিও তার প্রিয় স্টুডিওর শোভাবর্ধন করেছে দীর্ঘদিন। মূল ছবিটি আমারও দেখার সৌভাগ্য হয়েছে সেই স্টুডিওর গ্যালারিতেই। ছবিটি বর্তমানে নীতিশ রায়ের ইচ্ছে অনুসারেই শেরপুর ডায়াবেটিকস সমিতির সভাপতি রাজিয়া সামাদ ডালিয়া আপার কাছে সযতনে সংরক্ষিত আছে।

১৯৮২ সালে জাপানে অনুষ্ঠিত হয় ‘সপ্তম এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় নীতিশ রায়ের এই তৃষ্ণা ছবিটি আন্তর্জাতিক ‘ইয়াকুল্ট’ পুরস্কারে ভূষিত হয়। সেই থেকে নীতিশ রায় এবং তৃষ্ণা আলোকচিত্রটি আমাদের গর্বের বিষয়।

Shamol Bangla Ads

কিছুদিন আগে থেকে শুনছি, সাখাওয়াত তমাল নামের জনৈক ‘বাটপার’ ছবিটি তার নিজের বলে প্রচুর প্রচার করছেন। পেন্সিলগ্রুপসহ নানা জায়গায় তৃষ্ণা ছবিকে নিজের বলে দাবী করেছেন। ‘দৈনিক দেশতথ্য’ নামের এক পত্রিকাতেও দেখলাম ভুলে ভরা, বানোয়াট, মিথ্যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ছবির মডেলদের হাজং বলে ভুল পরিচয় দেওয়া হয়েছে। এইসব হীনকর্মে বিরক্ত লাগায় মনের দু:খে তৃষ্ণা ছবির জীবন্ত মডেল কুমুদিনী কোচের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম সেদিন কয়েকজন মিলে।

আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত নীতিশ রায়ের বিখ্যাত তৃষ্ণা ছবিতে যে মা দুই হাত ভরে পানি পান করছিলেন তিনি একজন কোচ রমনী। নাম তার কুমুদীনি কোচ। ছেলে পুলে, নাতিপুতি নিয়ে বাস করেন ঝিনাইগাতীর পাহাড়িপাড়া গান্ধিগাও। ছবির যে শিশুটি কুমুদিনীর বুক পান করছিলো তার নাম রিতা কোচ। সেদিন কুমুদিনীকন্যার বয়স ছিলো মাত্র দেড় মাস। এখনও মা মেয়ে দুজনই পাশাপাশি প্রায় সমসুখী হয়ে বেচে আছেন ছবির সাক্ষী হয়ে।

কুমুদিনী কোচের সংসারটা একদিন যেন চাঁদের হাট ছিলো। স্বামী ছিলেন পাথরশ্রমিক। বৈদনাথ কোচ। ২০০৩ সালের একদিন পাথর উত্তোলনের কাজে পাহাড়ে যান কুমুদিনীর স্বামী বৈদনাথ কোচ। বাড়িতে খবর আসে মাটি আর পাথর চাপায় কয়েকজন শ্রমিক মারা গেছেন। সেই লাশগুলোর মধ্যে বৈদনাথ কোচকেও পাওয়া যায়। সাথে সাথে পাচ কন্যা আর তিন পুত্র সন্তানকে নিয়ে কুমুদীনি যেন অথই সাগরে পড়ে গেলেন।
এখন ছেলে-পেলেরা বড় হয়েছে যার যার মতো সংসারী হয়েছে কুমুদীনির বাড়ি ভরা নাতি পুতি। তার সরল ভাষ্য, “বুড়া হইছি, এহন খাই আর কুহাই, কুহাই আর ঘুমাই।”

ছবির ব্যাপারে জানতে চাইলে, কুমুদিনী কোচ মুচকি হাসেন আর বলেন, ছবিটি যেইদিন নীতিশ বাবু তুলেন সেইদিন আসলে রিতাকে নিয়ে কুমুদীনি নওকুচি বাপের বাড়ি যাচ্ছিলেন। গান্ধিগাও কালাঘোষা ঝিড়িতে তখন পুল ছিলো না। পিপাসা লাগলে ঝিড়ির পাড়ে বসে পানি খাচ্ছিলেন। কিন্তু তখন যে কেউ ছবি তুলতেছে বুঝতে পারেননি, জানতেনও না। পরে যখন সবাই বলাবলি করতো তখন জেনেছেন এবং এতে নাকি তখন লজ্জাও পেতেন।

তৃষ্ণা ছবির আরেক মডেল দেড় মাসের অবুজ শিশু রিতা কোচ। সে-ই শিশুটিও আজ মা। আঠারো বছর বয়সী এক ছেলেকে নিয়ে থাকেন মায়ের কাছেই এক ছোট্ট পাহাড়ের টিলাতে। ছেলের বয়স যখন ৯ বছর তখন রিতার স্বামী মারা যায়। রিতা কোচও এখন পাহাড়শ্রমিক। মাত্র ২০০ টাকা মজুরিতে সারাদিন বাগানঝাড়ার কাজ করেন। এই আয় দিয়েই নাকি মায়ে পুতে দিন খেদান। দেখে এলাম বিখ্যাত তৃষ্ণা ছবির অখ্যাত মডেলদের এইসব দিনরাত্রি।

এইদিকে খ্যাতিমান আলোকচিত্রী নীতিশ রায় ২০১৭ সব মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন পরপারে। রেখে গেলেন জীবন্ত করে অনেক ইতিহাস, অনেক ঐতিহ্য। তার হাতে তুলা মহান মুক্তিযুদ্ধ এক অনন্য দলিল। তার ছবিগুলো শুধু কেবলি ছবি নয়। তার স্মৃতি, তার সৃষ্টিকর্মের সংরক্ষণ দরকার।

লেখক : শিক্ষক-সংগঠক, শেরপুর।

Need Ads

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

Shamol Bangla Ads
error: কপি হবে না!