শেরপুরের নকলা পৌরশহরে ৬ দিনে ৩টি বাসাবাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসব বাসাবাড়ি থেকে প্রায় ১৬ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার, ১৪ ভরি ওজনের রূপার গহনা, নগদ ১ লাখ টাকা এবং বৈদ্যুতিক মটরসহ প্রায় লাখ টাকার আসবাবপত্র ও কাপড়চোপড় চুরিডাকাতি হয়েছে। চুরি হওয়া স্বর্ণালংকার ও রূপার গহনার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার ৮০০ টাকা।
১৫ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে সকাল ১০টার মধ্যে পৌরশহরের গ্রীণ রোডে (সাবেক কামারপট্টি) সাবেক পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান লিটনের বাসার ৪ তলায় কিতাব আলী (৫৫) নামে এক ভাড়াটিয়ার দরজার তালা ভেঙে স্টিলের আলমারি থেকে প্রায় ৮ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার ও ১৪ ভরি ওজনের রূপার গহনা চুরি হয়। ৮ ভরি স্বর্ণালংকারের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১৪ লাখ ৭২ হাজার টাকা এবং ১৪ ভরি রূপার গহনার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৩০ হাজার ৮০০ টাকা। ওইসময় কিতাব আলীর পরিবারের কেউ বাসায় ছিলেননা। কিতাব আলীর গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার কামদেববাড়ি গ্রামে। চাকরির সুবাদে তিনি পরিবারপরিজন নিযে নকলা পৌরশহরে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন।
১৫ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতের কোন একসময় চৌধুরী ছবরুন নেছা মহিলা কলেজ রোড়ে এক বাড়িতে ঘরের দরজার তালা ভেঙে একটি বৈদ্যুতিক মটরসহ প্রায় ১ লাখ টাকার মূল্যবান আসবাবপত্র ও কাপড়চোপড় চুরি হয়। বাড়ির মালিক উপজেলার হুজুরীকান্দা গ্রামের রফিকুল ইসলাম (৫০) ওইদিন রাতে পরিবারপরিজন নিয়ে ঢাকায় ভাড়া বাসায় অবস্থান করছিলেন। চৌধুরী ছবরুননেছা মহিলা কলেজ রোডের রফিকুল ইসলামের শ্যালক নকলা পৌরসভার কুর্শাবাদাগৈড় খইড়াপাড়া মহল্লার আব্দুল হামিদ (৩০) জানান, তারা বিষয়টি নিয়ে থানায় কোন লিখিত অভিযোগ করেননি।
২০ সেপ্টেম্বর শনিবার ভোরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সংলগ্ন নকলা পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর বাদল হোসেন সরকার (৫৩) স্ত্রী-সন্তান বাসায় রেখে বাহির থেকে ঘরের দরজা তালাবদ্ধ করে ফজরের নামাজ আদায় করতে স্থানীয় মসজিদে যান। ওইসময় একদল দুর্বৃত্ত মুখোশ লাগিয়ে ঘরের দরজার তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে স্ত্রী সামছুন্নাহার রূপসীকে নামাজরত অবস্থায় মারধর করে মুখ ও হাত-পা বেঁধে ফেলে। পরে দুর্বৃত্তরা কাঠের আলমিরা ও ওয়ারড্রব থেকে প্রায় ৮ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার ও নগদ এক লাখ টাকা লুট করে পালিয়ে যায়। ৮ ভরি স্বর্ণালংকারের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১৪ লাখ ৭২ হাজার টাকা।
সাবেক পৌর কাউন্সিলর বাদল হোসেন সরকার জানান, খবর পেয়ে মসজিদ থেকে বাসায় এসে জানতে পারি আমার স্ত্রীকে ডাকাতদল মারধর করে মুখ ও হাতপা বেঁধে তার শরীর, কাঠের আলমিরা এবং ওয়ারড্রব থেকে প্রায় ৮ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার ও নগদ এক লাখ টাকা নিযে পালিয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে আইনের দ্বারস্থ হবেন না বলে জানান বাদল হোসেন সরকার। তবে ঘটনাটি আদৌ ডাকাতি না চুরি এবং ঘটনার বিষয়ে থানায় অভিযোগ না করায় জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
পৌরশহরের গ্রীণ রোডের (সাবেক কামারপট্টি) সাবেক পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান লিটনের বাসার ৪তলার ভাড়াটিয়া কিতাব আলীর ছেলে কাউছার আহমেদ জানান, ঘটনার পরক্ষণেই আমরা বিষয়টি নকলা থানা পুলিশকে জানিয়েছি। পুলিশ এসে আমাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে নিয়ে গেছে। আমরা পুলিশের সাথে যোগাযোগ রাখছি। তবে এখন পর্যন্ত পুলিশ ঘটনার বিষয়ে আমাদের কাছে কোন লিখিত অভিযোগ চায়নি।
নকলা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবুল কাশেম জানান, চৌধুরী ছবরুন নেছা মহিলা কলেজ রোডে চুরির ঘটনায় কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি। গ্রীণ রোডে (সাবেক কামারপট্টি) সাবেক পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান লিটনের বাসার ভাড়াটিয়া কিতাব আলীর বাসায় চুরির ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে। শনিবার ভোরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সংলগ্ন নকলা পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর বাদল হোসেন সরকারের বাসায় ডাকাতির ঘটনাটি আমরা পরক্ষণেই সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। তবে এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। তবে আমরা সবকিছু মাথায় রেখে তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
