(কবিশ্রেষ্ঠ শামসুর রাহমান স্মরণে)
তোমার জোড়াচোখে লুকিয়ে ছিল
কাব্যিক প্রশ্নের অগ্নিশিখা—
শব্দের নৃত্যমান আলো,
যেখানে বোহেমিয়ান রাতের ধূসরতা
হয়ে উঠেছিল এক নতুন সাহিত্য-চেতনার স্ফুরণ।

তুমি বর্ণমালার শরীরে এঁকেছিলে
প্রতিরোধের অগ্নিসূত্র,
শব্দ দিয়ে গড়েছিলে
স্বাধীনতার অনন্ত প্রবেশপথ,
যেখানে প্রতিটি অক্ষর দাঁড়াতো
প্রতিরোধী সৈনিকের মতো।
বাংলা কবিতার ভেতর তুমি নির্মাণ করেছিলে
উঁচু মাথার আধুনিক মিনার—
নিজের অজান্তেই
তুমি বনে গিয়েছিলে বাকবদলের ইতিহাস,
এক দীর্ঘস্থায়ী সুখপাঠ্যের মহাকাব্য।

তুমি স্বাভাবিক পথে হাঁটনি,
বরং ছুঁয়ে দেখেছ
কাব্যভূবনের অজস্র গোপন প্রান্তর,
যেখানে দ্রোহ, প্রেম ও প্রতিবাদ
একসাথে রক্তাক্ত চিহ্ন এঁকেছে কাগজের গায়ে।
তুমি শহরের কংক্রিট দেয়ালে
খুঁজে নিয়েছ জ্যোৎস্নার অক্ষর,
মানবতার ক্লান্তকণ্ঠেও শুনেছ
প্রেমের শেষ আলাপন,
যেখানে জ্বলে উঠেছিল
জ্বালাময় মায়ার এক অনিঃশেষ শিখা।
তুমি শিখিয়েছ—
প্রেম মানে দায়,
স্বাধীনতা মানে প্রতিরোধ,
আর কবিতা মানে প্রত্যয়ের উচ্চারণ।
কবিতা যদি মানুষের মজ্জায় পৌঁছতে না পারে,
তবে শব্দ কেবল
খেলাই থেকে যায়—
এক অনন্ত অথচ শূন্য প্রতিধ্বনি।
তোমার চলে যাওয়া আসলে এক
তুমিময় অবশিষ্ট গান—
ছায়া ও সুরের মিশ্রণে জন্ম নেওয়া।
তবু তুমি আছো—
কবিতার পাতায়, কিশোরের দ্রোহে,
তরুণীর প্রেমে, বিপ্লবীর রক্তাক্ত স্বপ্নে—
অপরাজেয় রত্ন হয়ে।

