শ্যামলবাংলা ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্ব এসে আজ দেখে যাক, বাঙালি বীরের জাতি। তারা কারও কাছে মাথানত করে না। বাঙালি আজ নিজের ক্ষমতাতেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যা বলে তা করে। দেশকে উন্নত করতে যা কিছু প্রয়োজন সবই করছে তার সরকার। বিশ্বব্যাংক মিথ্যা অজুহাতে সহায়তা বন্ধ করলেও আজ পর্যন্ত তারা দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেনি। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেত্রী ক্ষমতায় এসে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেশকে পিছিয়ে দিয়েছিলেন। তারা যে নাশকতা করেছেন, তার নির্দেশদাতা, নাশকতাকারী ও পরিকল্পনাকারীসহ সবারই বিচার করা হবে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর মূল কাজের উদ্বোধন শেষে জাজিরার সুধী সমাবেশ ও মাওয়ার জনসমাবেশের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। দেশী-বিদেশী বাধা-বিপত্তি জয় করে পদ্মা সেতুর নির্মাণের মূল কাজের উদ্বোধন করেন তিনি। ১২ ডিসেম্বর শনিবার সকালে শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা সেতুর নদীশাসন এবং বিকালে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে মূল সেতুর কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি। পদ্মা বহুমুখী সেতুর সাত নম্বর পিলারের তিন নম্বর পাইল স্থাপনের মাধ্যমে এ মূল কাজ শুরু হয়। এছাড়া সেতুর শরীয়তপুর অংশে একটি সুধী সমাবেশ এবং মাওয়া অংশে একটি জনসভায় ভাষণ দেন তিনি। ভাষণে তিনি বলেন, আমরা নিজস্ব অর্থায়নেই এ সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে চাই, কারও সাহায্য ছাড়াই পদ্মা বহুমুখী সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম। বাংলাদেশের মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, আমরা তা প্রমাণ করেছি। বিশ্ববাসী দেখুক আমরাও পারি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি ও আদর্শের প্রদর্শিত পথই আমাদের পথ। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা একটি সমৃদ্ধিশালী জাতি হিসেবে পালন করতে চাই। চাই বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে।
শেখ হাসিনা তার প্রতিটি বক্তব্যেই পদ্মা সেতু নির্মাণে দেশী-বিদেশী নানা ষড়যন্ত্র এবং নিজস্ব অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণে তার সরকারের চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন। তিনি সেতু নির্মাণের জন্য দু’পারের মানুষের জমি দেয়াসহ অন্যান্য ত্যাগের জন্যও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানান। চক্রান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের ষড়যন্ত্রে দেশী-বিদেশী চক্র জড়িত। মিথ্যা অজুহাতে বিশ্বব্যাংক আমাদের অর্থ দেয়নি, কিন্তু আমরা বসে থাকিনি।
সেতুর পাইল বসানোর মাধ্যমে কাজের উদ্বোধন করে প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, জাতির পিতা আমাদের মাথা উঁচু করে চলতে শিখিয়েছেন। শত বাধার মুখেও দেখাতে পেরেছি, আমরা পদ্মা সেতুর মতো একটি সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করতে পারি। সেতুর কাজ যেন সময়মতো শেষ হয়, সে জন্য সবার দোয়া চান তিনি। স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণে মানুষের আন্তরিকতা ও সহযোগিতা অতুলনীয় বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেতুর পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়ে যায়। মাইকে ঘোষণা করা হয়, ব্যবস্থাটি এমনভাবে করা ছিল যাতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরই পাইলিং শুরু হয়।
ঘন কুয়াশার কারণে ১ ঘণ্টা বিলম্বে বেলা ১১টায় হেলিকপ্টারে শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা সুধী সমাবেশে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানস্থলে এসেই প্রথমে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা বহুমুখী সেতুর নদীশাসনের কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানস্থলে আসার আগেই প্রমত্তা পদ্মার এ পারে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে সুধী সমাবেশটি রীতিমতো বড় জনসভায় রূপ নেয়।
শীত ও ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে স্লোগান আর বাদ্য-বাজনার তালে তালে হাজার হাজার উৎফুল্ল জনগণ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে সেখানে উপস্থিত হন। মূল প্যান্ডেলে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাইরের চতুর্দিকে থাকা হাজার হাজার মানুষ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য যাতে শুনতে পারেন সেজন্য স্থাপন করা হয় বেশ কয়েকটি বিশাল ডিজিটাল স্ক্রিন। সেখানে দাঁড়িয়ে তারা স্বপ্নপূরণের সেই বিশাল চ্যালেঞ্জের কথা শোনেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ থেকে।
জাজিরার নাওডোবা পয়েন্টে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্থানীয় সংসদ সদস্য বিএম মোজাম্মেল হক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
নদীশাসনের কাজের উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী সেখান থেকে স্পিডবোটে আসেন পদ্মার মাওয়ার পাড় থেকে এক কিলোমিটার ভেতরে নদীর গভীরে পদ্মা সেতুর সাত নম্বর পিলারের স্থান পরিদর্শনে। শেষে মাওয়ায় আসেন। সেখানে সাত নম্বর পিলারের তিন নম্বর পাইল বসানোর কাজের ফলক শুভউদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরা পদ্মা দু’কূলেই যেন অন্যরকম জাগরণের সৃষ্টি হয়েছিল। সর্বত্রই ছিল সাজ সাজ রব। দু’পারের লাখো মানুষের চোখে-মুখে ছিল স্বপ্নপূরণের ঝলক। যে পদ্মা সেতু তাদের কাছে এতদিন ছিল নিছকই স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন এত অল্প দিনের মধ্যেই বাস্তব রূপ নেবে, মূল সেতুর নির্মাণের কর্মযজ্ঞ শুরু হবে তা ছিল তাদের স্বপ্নেরও অতীত। দেশী-বিদেশী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে শনিবার মূল সেতুর নির্মাণ ও নদীশাসনের কাজের উদ্বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার কোটি কোটি জনগণের হাজার বছরের স্বপ্ন পূরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আগামী ৩৬ মাসের মধ্যে মোট ৪২টি পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে যাবে আলোচিত দ্বিতল পদ্মা সেতু। দেশের ৪৫ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্পের নাম এ পদ্মা বহুমুখী সেতু। প্রায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য এ সেতু দিয়ে ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি সড়ক ও রেলপথে যুক্ত হবে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম জনপদের ২১ জেলা। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দ্বিতল এ সেতু বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে সবচেয়ে বড় প্রকল্প।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে শরীয়তপুরের জাজিরা ও মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ঘাট পর্যন্ত দীর্ঘ পদ্মার বিশাল এলাকাজুড়েই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। প্রমত্তা নদী ওপর দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর যাত্রাপথে পাল তোলা নৌকা এবং ইঞ্জিনচালিত অসংখ্য নৌকায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিনন্দন বিশাল বিশাল ছবি টানিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানানো হয়। দুটি প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন শেষে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার উত্তর মেদেনী মণ্ডল খানবাড়িতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় বক্তব্য শেষে গাড়িবহর নিয়ে সড়কপথে ঢাকায় ফিরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পথে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে তিনি গাড়ি থামিয়ে তার বহরের ৫১টি গাড়ির টোল দেয়ার নির্দেশ দেন। তার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব এ টোল হিসাবে প্রায় তিন হাজার টাকা পরিশোধ করেন।
জাজিরার সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সেতুটি নির্মাণে বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। আজ মূল সেতুর নির্মাণের উদ্বোধন করতে এসে আমিও আবেগাপ্লুত। দেশবাসীর জন্য আজ একটি গৌরবের দিন, আনন্দের দিন। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মূল সেতু ও নদীশাসনের কাজের উদ্বোধনের মাধ্যমে পদ্মার মূল সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হল। আমরা আশা করছি ২০১৮ সালের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এ সেতু দিয়ে যানবাহন এবং রেল চলাচল শুরু হবে।
পদ্মা সেতু নির্মাণে দেশী-বিদেশী নানা ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সেতুটি নির্মাণে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সাহায্য দিতে এগিয়ে আসে। কিন্তু হঠাৎ করে ঘুষ গ্রহণের ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিল। আমরা যখন প্রমাণ চেয়ে বললাম যে টাকা- পয়সার কোনো লেনদেনই হল না, তাহলে ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি এলো কিভাবে? তারা বলল, প্রকল্পের সঙ্গে জড়িতরা নাকি ঘুষ গ্রহণের ষড়যন্ত্র করেছিলেন। আমরা প্রমাণ চাইলে বিশ্বব্যাংক দুটো কার্যাদেশের কাগজ দিল। ওই কার্যাদেশটি আমাদের আমলে ছিল না, সেটি ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে পদ্মা সেতুর বাইরে অন্য কাজের। এর বাইরে তারা কোনো প্রমাণই দিতে পারেনি।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইঙ্গিত করে বলেন, আমাদের দেশে বিশ্বখ্যাত একজন ব্যক্তি রয়েছেন, যিনি দীর্ঘদিন অবৈধভাবে একটি ব্যাংকের এমডি পদে ছিলেন। এ কারণে তাকে সরিয়ে দিলে উনি সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। সেখানেও হেরে গিয়ে তাকে ওই ব্যাংকের এমডি পদটি ছাড়তে হয়। পরে উইকিলিকসের তথ্যই বেরিয়ে আসে, ওই ব্যক্তিটি তার মেইল থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশকে অনুরোধ করে বলা হয় বাংলাদেশকে যেন সাহায্য না করা হয়। এরপরে তৎকালীন বিশ্বব্যাংকের চেয়ারম্যান বোর্ডের কোনো অনুমতি না নিয়েই অন্যায় ভাবে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়।
তিনি বলেন, এ ঘুষসংক্রান্ত অভিযোগটি ছিল একটা গভীর ষড়যন্ত্র। দেশী-বিদেশী চক্র এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল। অনেকেই মনে করেছিলেন, বিশ্বব্যাংক যেহেতু সরে গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার আর পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবে না। মিথ্যা অজুহাতে বিশ্বব্যাংক আমাদের অর্থ দেয়নি। তাই বলে আমরা বসে থাকিনি। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। তখনও অনেকে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। কিন্তু সবকিছু উপেক্ষা করে আমরা দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে গেছি। আর তার ফলেই আজ সেতু নির্মাণের কাজ অনেক দূর এগিয়ে নিতে পেরেছি। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করে আমরা বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে চাই, কারোর সাহায্য ছাড়াই পদ্মা বহুমুখী সেতুর মতো যে কোনো বৃহৎ প্রকল্প বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সক্ষম।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করার পর আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নেই। এ সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে আমাদের দুর্নীতিবাজ বানানো ও হেয় করার নানা চেষ্টা চলে। কিন্তু তারা তাতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা দৃঢ়কণ্ঠে জানিয়ে দেই, আমরা বিশ্বব্যাংক থেকে অর্থ নেব না, নিজের অর্থ দিয়েই পদ্মা সেতু নির্মাণ করে আমরা দেখিয়ে দেব আমরা পারি। তিনি বলেন, আমরা বাঙালি জাতি, বীরের জাতি। কারও কাছে মাথানত করে আমরা চলি না। বাঙালি জাতি অসাধ্য সাধন করতে পারে, সেটি আমরা দেখিয়ে দিয়েছি। তাই এ পদ্মা সেতু দেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলকে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যরা সবাই অবহেলার চোখে দেখেছে। আমরা দক্ষিণাঞ্চলে নতুন পোর্ট করেছি, যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছি। রেলওয়ের যোগাযোগও উন্নত হবে। তিনি বলেন, এ সেতু নির্মাণের ফলে অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠবে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। আমরা মাওয়া ও জাজিরাকে ঘিরে আধুনিক স্যাটেলাইট শহর গড়ে তুলব। আন্তর্জাতিক মানের হোটেল-রিসোর্ট গড়ে তোলা হবে। পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী এ বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে জমি দিয়ে সহযোগিতার জন্য মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এ এলাকার জনগণকে আমি আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারা জমি দিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ সেতু নির্মাণে সহযোগিতা করেছেন। সরকার আপনাদের পাশে আছে এবং থাকবে। আপনাদের যাতে কোনো রকম কষ্ট না হয় সে ব্যবস্থা আমরা করে দেব ইনশাআল্লাহ। আপনারা অচিরেই দেখতে পাবেন এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক চেহারা পাল্টে গেছে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। জাপান সফরে গিয়ে সে দেশের সরকারের কাছে রূপসা ও পদ্মা সেতু নির্মাণে সহযোগিতার অনুরোধ করি। জাপান সরকার তাতে রাজি হয়। মাওয়া পয়েন্ট দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য জাপানের উদ্যোগে প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজও শেষ হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। এমনকি তারা মাওয়া থেকে সরিয়ে পাটুরিয়াতে পদ্মা সেতু সরিয়ে নেয়ারও চক্রান্ত করে। শেষ পর্যন্ত কোনো কিছু না করে তারা পুরো প্রকল্পটিই পরিত্যক্ত করে। আসলে বিএনপি-জামায়াত জোট সন্ত্রাস-দুর্নীতি, জঙ্গিবাদের উন্নয়ন ছাড়া দেশের উন্নয়নে কোনো কাজ করেনি। তারা সবদিক থেকে দেশকে অকার্যকর করে দেয়ার চেষ্টা করে গেছে। এ শক্তি দেশের স্বাধীনতা চায়নি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ কারণে তারা চায় না দেশের উন্নয়ন হোক, বিশ্বসভায় বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াক।
মাওয়ার জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব বলে অঙ্গীকার করেছিলাম, তা করছি। বিচার হচ্ছে, রায় কার্যকরও হচ্ছে, যত বাধাই আসুক এ বিচার কেউ বন্ধ করতে পারবে না। একই ভাবে তিনি পদ্মা সেতু করার অঙ্গীকার তুলে ধরে তাও বাস্তবায়নের পথে বলে উল্লেখ করেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সরকার প্রধান আরও বলেন, যারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে, যারা হুকুম দিয়েছে, এর পেছনে যারা অর্থ দিয়েছে, যারা পরিকল্পনা করেছে তাদের সবার বিচার বাংলার মাটিতে হবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বিএনপি নেতাদের তাদের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দেয়া হচ্ছে অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, যারা মানুষ পুড়িয়ে মারার মতো জঘন্য ও নৃশংস কাজ করে তাদের মামলা দেবে না তো ফুলের মালা দেবে। বিএনপি-জামায়াত যে কোনো মূল্যে দেশকে অকার্যকর করতে চায় অভিযোগ করে তিনি বলেন, এ দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সংবিধান লংঘন করে, সব ধরনের সেনা আইন ভঙ্গ করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। তার প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপিও অবৈধ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, এ দল যখন নির্বাচন নিয়ে জ্ঞান দেয় সেটা প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়। কেননা ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্র“য়ারি অবৈধভাবে নির্বাচন করে সরকার গঠন করেও জনগণের আন্দোলনের ফলে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়।
এ সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের মুন্সীগঞ্জ জেলা সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। বক্তব্য রাখেন দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রমুখ।
নাওডোবার সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, দলের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মে. জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিক, তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সাবেক ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী, আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান সিরাজ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, এনামুল হক শামিম, পংকজ দেবনাথ, নাহিম রাজ্জাক, পনিরুজ্জামান তরুণ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।
মাওয়ায় সুধী সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, ক্রিকেটার গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, সাগুফতা ইয়াসমীন এমিলি, সুকুমার রঞ্জন ঘোষ, ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা প্রমুখ। উভয় অনুষ্ঠানেই সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার বেলা ১১টা ১০ মিনিটে নাওডোবায় পৌঁছেই নদীশাসনের কাজ উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। ওই পারে আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুপুর ১টায় মাওয়ায় সেতুর মূল কাজের উদ্বোধন করেন দৃঢ়চেতা এ রাজনীতিবিদ।