স্টাফ রিপোর্টার : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্বাক্ষর জাল করে একাধিক ডিও লেটার তৈরির নায়ক শেরপুরের বহুল আলোচিত সেই প্রতারক আব্দুল হামিদ সোহাগ (৪২) কে অবশেষে জেলহাজতে যেতে হয়েছে। ২৯ ফেব্রুয়ারি সোমবার দুপুরে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে শ্রীবরদী আমলী আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন জানালে উভয় পক্ষের শুনানী শেষে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আ.ন.ম ইলিয়াস তাকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সে শ্রীবরদী উপজেলার চক্রপুর গ্রামের মৃত হাজী নইম উদ্দিনের ছেলে। ঘটনার পর থেকে সে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৫ মাস লাপাত্তা ছিল। এদিকে প্রতারক সোহাগকে কারাগারে পাঠানোর সংবাদে কোর্ট অঙ্গণসহ তার নিজ এলাকা শ্রীবরদীতে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
জানা যায়, শ্রীবরদী উপজেলার রাণীশিমুল ইউনিয়নের ভায়াডাঙ্গা এএম সিনিয়র (আলিম) মাদ্রাসায় গভর্নিং বডির সভাপতি মনোনয়ন পেতে জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্বাক্ষর জাল করে প্রতারক আব্দুল হামিদ সোহাগ ২০১৫ সালের মার্চ, এপ্রিল ও সর্বশেষ জুন মাসে পরপর ৩টি ডিও লেটার সৃজন করে সেগুলো অনুমোদন পেতে মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে দাখিল করে। পরবর্তীতে ডিও লেটারগুলোর বিষয়ে সন্দেহের উদ্রেক হলে বোর্ড কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক অনুসন্ধানে সেগুলো জাল বলে প্রতীয়মান হয় এবং ওই ঘটনায় সশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়। ওই বিষয়ে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে একটি প্রতিবেদন ছাপা হলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হলে পরদিনই প্রতারক আব্দুল হামিদ সোহাগের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির অভিযোগে শ্রীবরদী থানায় ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু করে পুলিশ। পরবর্তীতে মামলাটি তদন্তের জন্য দুদকের টাঙ্গাইল সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে হস্তান্তর হলেও এতোদিনই আইন-শৃংঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে গাঁ ঢাকা দিয়েছিল সোহাগ।
কে সেই সোহাগ ঃ ‘দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে একজন ছিল সোহাগ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই সোহাগকে আটকের জন্যে পুরস্কার ঘোষণা করে পোস্টার করেছিল। এক সময় নিজেকে ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করে সাধারণ ক্ষমায় মুক্তিও পেয়েছিল সে। পরে ফিরে আসে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার রানীশিমুল ইউনিয়নে সীমান্তবর্তী চক্রপুর গ্রামে তার জন্মস্থানে। নিজের ভাইয়ের স্ত্রীকে বিয়ে করে বসবাস করে শ্বশুরবাড়িতে। গড়ে তোলে সামাজিক অবস্থান।’Ñ এমনি আতঙ্ক আর উৎকন্ঠার গল্প শুনিয়ে সেই সোহাগ দিন দিন গ্রাম থেকে শহরেও বিস্তার ঘটায় নিজের। প্রায় আড়াই বছর আগে আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক মন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে নিজের স্থান করে নেয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সারিতে। এক পর্যায়ে তা পুঁজি করে উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ের কোন কমিটিতে না থাকা সত্বেও অক্ষরজ্ঞানের অধিকারী সোহাগ গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস-চেয়ারম্যান পদে দলের সমর্থন পেলেও ভোট পেয়েছিল একেবারেই কম। অবশেষে উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রক্রিয়া শুরু হলে বেড়ে যায় সোহাগের বিশেষ তৎপরতা। সেই থেকে আনাগোনা গড়ায় আওয়ামী লীগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের অফিস-বাসায়। শ্রীবরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেতে তার প্রকাশ্য লবিং হাস্যরসের সৃষ্টি করলেও কয়েক মাস ধরে উপজেলা থেকে জেলা অবধি তার বিশেষ দৌড়ঝাপ ছিল লক্ষ্যণীয়। এদিকে কাকতালীয়ভাবে স্থানীয় ভায়াডাঙ্গা মাদ্রাসার সভাপতি হিসেবে স্থান পাওয়ায় শুরু হয় নিয়োগ বাণিজ্য। বিপত্তি ঘটে পরবর্তীতে ওই পদ নিয়ে। এলাকার অনেকে প্রার্থী হওয়ায় তার অবস্থান নেমে পড়ে শূন্যের কোঠায়। ফলে সৈয়দ আশরাফের স্বাক্ষর জাল করে আবারও সভাপতি হওয়ায় স্বপ্ন দেখে সে।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, এলাকায় সে ‘সোহাগ পাগলা’ বা ‘পাগলা সোহাগ’ নামেই পরিচিত। ঢাকা থেকে বাড়িতে ফিরে শুরু করেছিল মোটর সাইকেল চুরিসহ নানা অপকর্ম। এক পর্যায়ে মোটর সাইলে চুরির অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে রিমান্ডেও গিয়েছিল সে। অনেকে তাকে ‘অপকর্মের হোতা’হিসেবে চিনলেও কারও কারও মতে, সে কিছু কিছু সামাজিক কাজ করে নিজেকে ‘লাইম লাইটে’ আনার চেষ্টাও করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি স্থানীয় একটি ফুটবল প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় নিজেই বাদী হয়ে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করে এলাকায় নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে সে। সেইসূত্রে সম্প্রতি বাড়তি মওকা কামানোর নেশায় আদালত অঙ্গণে তার অবাধ বিচরণ বেড়ে যায়। ক্ষমতাসীন কোন কোন নেতার বদান্যতায় মামলা-মোকদ্দমায় সে প্রকাশ্য দালালীতে জড়িয়ে পড়ে। মন্ত্রীর ডিও লেটার জালিয়াতির ঘটনা ফাঁস হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নিত্যদিন সে থানা, কোর্ট-কাচারী আর অফিস-আদালতে কেবল ঘোরাফেরাই করেনি, তার কথায় কোন কোন অফিসে বিশেষ কিছু নেতাকেও ফোন করতে শোনা গেছে। তার নির্যাতন-অত্যাচার ও হয়রানীর শিকার কেউ এতোদিন ভয়ে মুখ খুলেনি।
I am service of BD Army. However to him several punishment public Will be nappy
As it is remarks