শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে ২৫ বছর ধরে বিনা চিকিৎসায় শিকলে বন্দী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন মানসিক ভারসাম্যহীন শিফানী খাতুন (৩০)। শিফানী উপজেলার হাতিবান্দা ইউনিয়নের পুরুষউত্তমখিলা গ্রামের মরহুম ছোহরাব আলীর মেয়ে।

জানা যায়, ছোহরাব আলী ছিলেন একজন দিনমজুর। ৩ কন্যা সন্তানসহ ৫ সদস্যের পরিবার ছিলো তার। বাড়ির ৫ শতাংশ জমি ছাড়া সহায়-সস্বল বলতে আর কিছুই নেই। শ্রম বিক্রি করে চলতো তার সংসার। দুই বছর আগে ছোহরাব আলী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এসময় তার স্ত্রী রমেছা খাতুন ঋণ করে ক্যান্সার আক্রান্ত স্বামীর চিকিৎসা করেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছোহরাব আলীর মৃত্যুর পর বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে পরিবারটি। রমেছা বেগম মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েকে নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছেন। না পারছেন পরিশোধ করতে স্বামীর চিকিৎসার জন্য ধার করা ঋণ, না পারছেন মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়ের চিকিৎসা ও ভরনপোষণ যোগাতে।
রমেছা বেগম জানান, ছোট ২ মেয়ের বিয়ে হয়েছে। বড় মেয়ে শিফানী খাতুন (৩০) মানসিক ভারসাম্যহীন। জন্মের পাঁচ বছর পর থেকেই শিফানী খাতুন মানসিক ভারসাম্যহীনহীন হয়ে পড়ে। ছোহরাব আলী বেচে থাকা অবস্থায় মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়ে শিফানী খাতুনের চিকিৎসা করেছেন সাধ্যমত। কিন্তু ছোহরাব আলীর মৃত্যুর পর তার স্ত্রী রমেছা বেগম আর মেয়ের চিকিৎসা করাতে পারছেন না। শিকলে বেঁধে রাখতে হচ্ছে তাকে। সার্বক্ষণিক ছোটাছুটি করছে শিফানী খাতুন। জীবিকা নির্বাহের তাগিদে রমেছা বেগম অন্যের বাড়িতে কৃষি শ্রমিকের কাজ করতে যেতে হয়। এ সময় রমেছা বেগম যে বাড়িতে কাজ করেন সে বাড়িতেই তার মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়ে শিফানী খাতুনকে দড়ি দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রেখে কাজ করেন। অনেক সময় তাও সম্ভব হয়ে উঠে না। রমেছা বেগমর ভাগ্যেও জুটেনি সরকারি কোন সাহায্য সহযোগিতা। বর্তমানে রমেছা বেগম মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েকে নিয়ে মানবতন জীবনযাপন করছেন।

রমেছা বেগম বলেন, স্বামী মৃত্যুর পর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধির কাছে বহুবার গিয়েছেন তিনি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। বরং তার সাথে দুর্ব্যবহার করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাতীবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে তিনি বলেছেন, সামনে কোন সুযোগ-সুবিধা এলে তাকে দেখা হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেলের সাথে কথা হলে তিনি ব্যক্তিগতভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন শেফানি খাতুনের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেন এবং তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বাস দেন।
