ads

বুধবার , ৩০ এপ্রিল ২০২৫ | ১০ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

শেরপুরে চিয়া বীজের বাণিজ্যিক চাষে সফলতা

রফিকুল ইসলাম আধার , সম্পাদক
এপ্রিল ৩০, ২০২৫ ৪:২২ অপরাহ্ণ

স্বল্প ব্যয়ে অধিক লাভ, পুষ্টি ও ঔষধি গুণে সমৃদ্ধ

এবার সুপারফুড হিসেবে পরিচিত চিয়া বীজের বাণিজ্যিক চাষ হয়েছে কৃষি ও খাদ্যসমৃদ্ধ অঞ্চল শেরপুরে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগের সহযোগিতায় জেলায় প্রথমবারের মতো শিমুল মিয়া নামে এক তরুণ কৃষক বাণিজ্যিকভাবে এ চিয়া বীজ আবাদে সফলতা পেয়েছেন। স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় তার দেখাদেখি অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন এ চিয়া বীজ চাষে। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বলছে, পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ চিয়া বীজ চাষ বাড়ানো গেলে লাভবান হবেন কৃষকরা।

Shamol Bangla Ads

জানা যায়, চিয়া বীজ মূলত মরু অঞ্চলের ফসল। দেখতে তিল কিংবা তিশির মতো। একসময় উত্তর ও মধ্য আমেরিকায় চাষাবাদ হলেও পর্যায়ক্রমে সেটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বাংলাদেশেও এর পরীক্ষামূলক চাষাবাদ শুরু হয়। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চিয়া বীজ বপন করতে হয়। ফলন ঘরে তোলা যায় মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। চিয়া বীজ উৎপাদনে তেমন কোন রাসায়নিক সার লাগে না। জৈব সার বেশি ব্যবহার করতে হয়। প্রতি বিঘা জমিতে চিয়া বীজ উৎপাদন করতে খরচ হয় মাত্র ৭-৮ হাজার টাকা। বীজ উৎপাদন হয় ৮০-১০০ কেজি। প্রতি কেজি বীজ বিক্রি হয় ৭০০-৮০০ টাকা দরে।

এদিকে উচ্চমূল্য ও প্রচুর পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এ ফসল চাষ করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের তেঁতুলতলা গ্রামের শিক্ষিত যুবক শিমুল মিয়া। একসময় পড়াশোনার পাশাপাশি একটি দোকানে চাকরি করতেন তিনি। তার স্বপ্ন ছিল কৃষিক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কিছু করার। সেই স্বপ্ন থেকেই ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করে সিদ্ধান্ত নেন বিদেশী ফসল চিয়া বীজ চাষের। পরে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, শেরপুর থেকে বিনামূল্যে বারি চিয়া-১ জাতের বীজ সংগ্রহ করেন এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ৫০ শতক জমিতে চিয়া বীজ বপন করেন। বীজ বপনের সাড়ে তিন থেকে চার মাসের মাথায় চিয়া বীজ কাটা ও মাড়াইয়ের উপযোগী হয়েছে। তার এ চাষে সব মিলে খরচ হয়েছে মাত্র ৬-৭ হাজার টাকার মতো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। মাড়াই শেষে এক লাখ টাকার মতো চিয়া বীজ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী শিমুল।

Shamol Bangla Ads

সরেজমিনে সদর উপজেলার তেঁতুলতলা গ্রামে গেলে কথা হয় কৃষক শিমুল মিয়ার সাথে। তিনি জানান, কৃষির প্রতি আগ্রহ থেকেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে চিয়া বীজ চাষ করার উদ্যোগ নিই। শেরপুর সরেজমিন গবেষণা বিভাগে যোগাযোগ করলে তারা বিনামূল্যে চিয়া বীজ দেন এবং চাষের জন্য নানা পরামর্শ দেন। পরে আমি বাড়ির পাশে কিছু জমি লীজ নিয়ে চিয়া বীজ চাষ করি। এবার ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। খরচ বাদ দিয়ে লাখ টাকার কাছাকাছি লাভ থাকবে বলে আশা করছি। এই চিয়াসীড শরীরের জন্য খুবই উপকারী। বাজারে এই ফসলের মূল্য অনেক বেশি। আগামীতে আরও বেশি জমিতে এই ফসল চাষ করার পরিকল্পনা আছে।

এদিকে শিমুল মিয়ার চিয়া বীজ খেত দেখতে আসছেন অনেকেই। তার এমন সফলতা দেখে আগ্রহী হচ্ছেন স্থানীয় অনেক কৃষকই। শিমুলের বাবা মোজাফফর আলী বলেন, আমার ছেলে এই নতুন ফসল চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলে দিয়েছে। অনেকেই তার এই খেত দেখতে আসছেন। পরামর্শ চাচ্ছেন। আগামী বছর আমাদের আরও বড় আকারে চাষ করার ইচ্ছা আছে। সদর উপজেলার তেঁতুলতলা গ্রামের কৃষক ইব্রাহিম খলিল বলেন, এই ফসল আমি আগে কখনও দেখি নাই। এবারই দেখলাম আমাদের এলাকায় চাষ হচ্ছে। দামও অনেক ভালো পাচ্ছে কৃষক শিমুল মিয়া। আগামীতে আমিও আবাদ করার চেষ্টা করব। আরেক কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা সবসময় ধানসহ বিভিন্ন সবজি আবাদ করেছি। কিন্তু চিয়াসীড নামে যে ফসল আছে সেটি জানতাম না। সামনের বছর আমিও কিছু জমিতে চিয়াসীড চাষ করব। একই কথা জানান স্থানীয় আরিফুর রহমান, মকবুল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন কৃষক।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, নানা ঔষধি গুণাগুণে সমৃদ্ধ চিয়াবীজ পুদিনার একটি প্রজাতি। চিয়া বীজে বৈজ্ঞানিক নাম ‘সালভিয়া হিসপানিকা’। বিভিন্ন ভিটামিনের উচ্চ উপস্থিতির জন্য এটিকে সুপারফুড বলা হয়। ক্যালসিয়াম, আয়রন, শর্করা, ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাসসহ একাধিক খনিজ পদার্থ রয়েছে চিয়া বীজে। এ ছাড়া একাধিক ভিটামিন ও প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট ও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। ফলে শরীরে পাচনতন্ত্র ও মেটাবলিজমের জন্য অত্যন্ত উপকারী চিয়া বীজ। চিয়া বীজে ফাইবারের পরিমাণ থাকে অনেক। ফাইবারের প্রাধান্যের কারণে হজম প্রক্রিয়া ভালো থাকে। চিয়া বীজ পাচন প্রক্রিয়া ঠিক রাখায় শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতেও সহায়ক। চিয়া বীজ খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে। রক্তে শর্করার মাত্রা কমানোসহ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চিয়া বীজ। ফল বা দইয়ের মতো বিভিন্ন ধরনের খাবারের সঙ্গে খেতে হয় এই বীজ। পানিতে ভিজিয়ে রেখে কিংবা শরবতের সাথে খাওয়া যায়। এছাড়া লেবুর রসের সঙ্গে বা দুগ্ধজাত পদার্থের সঙ্গে মিশিয়েও খাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্রুত ওজন কমাতে খালি পেটে সকালে ও রাতে ঘুমানোর আগে ১ গ্লাস পানির মধ্যে ২ চা চামচ চিয়া বীজ ও ২ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে শেরপুর সরেজমিন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা একেএম জোনায়েদ উল-নূর বলেন, শেরপুরে চিয়াবীজ চাষের সম্ভাবনা খুবই উজ্জল। এ জেলায় প্রথমবারের মতো এই বীজ চাষ শুরু হয়েছে। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া চিয়া বীজ চাষের অনুকূলে থাকায় আশানুরূপ চিয়া বীজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। আগামীতে আরও বেশি কৃষককে চিয়া বীজ উৎপাদনে সহায়তা করা হবে। তিনি বলেন, চিয়া বীজ হলো সুপারফুড। এ বীজে রয়েছে দুধের চাইতে পাঁচগুণ ক্যালসিয়াম, পালংশাকের চাইতে তিনগুণ বেশি আয়রন, মুরগির ডিমের চাইতে তিনগুণ প্রোটিন, কলার দ্বিগুণ পটাশিয়াম ও সামুদ্রিক স্যামন মাছের চাইতে আটগুণ ওমেগা-থ্রি। কাজেই চিয়া বীজকে খাদ্য হিসেবে বেছে নিলে পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও সাশ্রয় হবে।

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

Shamol Bangla Ads
error: কপি হবে না!