এবারের ঈদের লম্বা ছুটিতে পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার পর্যটন কেন্দ্র ‘গজনী অবকাশ’। কর্মজীবনের নানা ব্যস্ততা ও শহরের যান্ত্রিক কোলাহল ভুলে এ পর্যটন কেন্দ্রের নৈসর্গের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে ছুটে এসেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার পর্যটক।

ঈদের দিন থেকেই এ পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে। সকাল থেকে দলে দলে পর্যটকরা ভ্রমণ করেছেন বিনোদনের জনপ্রিয় এই স্থানে। কেউ আসছেন পরিবার নিয়ে, কেউ আসছেন দম্পতি আবার কেউ আসছেন বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে। ২ এপ্রিল বুধবার দিনব্যাপী এমনই চিত্র দেখা গেছে।
জানা যায়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুব সহজেই আকৃষ্ট করে আগত পর্যটকদের। প্রকৃতি এখানে প্রতিনিয়ত হাতছানি দিয়ে ডাকে। পাহাড় টিলা আর সমতল ভূমিতে সবুজের সমারোহ। শাল, গজারি, সেগুন, ছোট-বড় মাঝারি টিলা, লতাপাতার বিন্যাস প্রকৃতি প্রেমিদের নিশ্চিত দোলা দিয়ে যায়। অপরূপ রূপের চাদর মোড়ানো পাহাড় আর সেই পাহাড়ের পাশ ঘেঁষেই রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্য।

অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পাহাড়ের বুক জুড়ে তৈরি সুদীর্ঘ ওয়াকওয়ে। পায়ে হেঁটে পাহাড়ের স্পর্শ নিয়ে লেকের পাড় ধরে হেঁটে যাওয়া যায় এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। পড়ন্ত বিকেলে ছোট ছোট নৌকায় করে ঘোরার জন্য রয়েছে লেক। লেকের বুকে নৌকায় চড়ে পাহাড়ের পাদদেশে কফি আড্ডা আর গান এখানে আগত দর্শণার্থীদের জন্য অন্যরকম অভিজ্ঞতা তৈরি করে।
গারো মা ভিলেজেও ছোঁয়া লেগেছে নতুনত্বের। মাশরুম ছাতার নিচে বসে বা পাখি ব্রেঞ্চে বসে পাহাড়ের ঢালে আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, দিগন্ত জোড়া ধানক্ষেত আর পাহাড়ি জনপদের ভিন্ন জীবনমান উপভোগ করা যাবে খুব সহজেই। আগত শিশু দর্শণার্থীদের জন্য চুকুলুপি চিলড্রেনস পার্কের পাশাপাশি এবার নতুন যুক্ত হচ্ছে শিশু কর্ণার। এ সকল দৃশ্যাবলি দেখতে ঈদের লম্বা ছুটিতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গজনী অবকাশের বিভিন্ন জায়গায় কেউবা তুলছেন সেলফি, কেউবা নিজ ও প্রিয়জনের ছবি ক্যামেরাবন্দী করছেন নিজের মোবাইল ফোনে। চুকুলুপি চিলড্রেনস পার্ক ছিল সকাল থেকেই মুখরিত। শিশুদের ভিড় বেড়ে যাওয়ায় পার্কের ফটকে লম্বা লাইন দেখা যায়। এ সময় শিশুদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে এ শিশু পার্কটি।
বিভিন্ন রাইডে চড়ে ও খোলামেলা পরিবেশ পেয়ে আনন্দে মেতে ওঠে শিশুরা। শিশুদের সঙ্গে অনেক অভিভাবককেও আনন্দে মেতে উঠতে দেখা যায়। গজনী বোট ক্লাবের বোটে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্যেও পর্যটকদের দীর্ঘ লাইন দেখা মিলে।
ময়মনসিংহ শহর থেকে ঘুরতে আসা কয়েকজন পর্যটক জানান, গারো পাহাড় ও কৃত্রিম তৈরি বিভিন্ন রাইড দেখে তারা বিমোহিত হয়েছেন। পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে তারা এসেছেন প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
সাত বছরের মেয়েকে নিয়ে শিশু পার্কে এসেছেন মো. মেজবাউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ঈদ তো শিশুদের। তাই মেয়েকে নিয়ে এলাম। অনেক ভিড়। একেকটা রাইডে উঠতে প্রচুর সময় চলে যাচ্ছে। তারপরও মেয়েটা আনন্দ পাচ্ছে। তাতেই আমি খুশি।’
বকশিগঞ্জ থেকে আগত দর্শনার্থী দম্পতি বিদ্যুৎ ও জেরিন জানান, তারা গাজীপুরে থাকেন। তাই ঈদের ছুটিতে শহরের কোলাহল ছেড়ে গজনী অবকাশে ঘুরতে এসেছেন তারা। আগের চেয়ে পর্যটন কেন্দ্রে তৈরী কৃত্রিম দৃশ্যগুলো তাদের মনে অনেক আনন্দ দিয়েছে। এসব কৃত্রিম দৃশ্য তৈরির জন্য জেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এবার অন্যান্য ঈদের তুলনায় পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। ঈদের দিন থেকে পর্যটক বেড়াতে আসছেন। এতে ভালো বেচা-কেনা হচ্ছে।
পর্যটন কেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আব্দুর রহিম বলেন, ঈদ উপলক্ষে গজনী অবকাশে অনেক পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। ব্যবসায়ীদের বেচাকেনাও ভালো হয়েছে। কাল থেকে পর্যটকের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।
পর্যটন কেন্দ্রের বিভিন্ন রাইডের ইজারাদার মো. ফরিদ মিয়া জানান, ঈদের দিন থেকেই প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ছিল। আশা করছি, টানা ছুটির সব দিনেই দর্শনার্থীর আগমন ঘটবে।
ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আল-আমীন বলেন, ঈদ উপলক্ষে গজনী অবকাশে দর্শনার্থী বেড়েছে। আগত দর্শনার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা করতে পারে তার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম রাসেল জানান, গজনী অবকাশকে আরও আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে নানা উন্নয়নমূলক কাজ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই গজনীর রাস্তাগুলোর মেরামত কাজ চলমান রয়েছে।
