মেক্সিকো ও কানাডার ওপর ২৫ শতাংশ এবং চীনের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নজর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দিকে। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, শিগগিরই ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর শুল্ক বসতে যাচ্ছে। ওইসময় তিনি ২৭ দেশের ওই জোটের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সংকট নিয়ে তার অসন্তোষ পুনর্ব্যক্ত করেন।

ট্রাম্প বলেন, অবশ্যই ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করা হবে। কারণ, তারা আমাদের অনেক সুযোগ নিয়েছে। আমি কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা বলতে পারছি না, তবে এটা শিগগিরই হবে। ট্রাম্পের ওই হুমকি এমন এক সময়ে এল, যখন তার ঘনিষ্ঠ মিত্র ও বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক ইউরোপীয় রাজনীতিতে নাক গলাচ্ছেন। গত শনিবার তিনি নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্সে লেখেন, ‘ইউরোপের জনগণ: মেগা (মেক ইউরোপ গ্রেট অ্যাগেইন) আন্দোলনে যোগ দিন।’ ট্রাম্পের নির্বাচনী স্লোগান ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’-এর অনুকরণে এ কথা লিখেছেন তিনি। তবে রবিবার ইইউ জানিয়ে দিয়েছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র অন্যায়ভাবে বা স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে ইউরোপীয় পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে, তাহলে তারা ‘কড়া প্রতিক্রিয়া’ জানাবে।
ইইউর এক মুখপাত্র বলেন, যেকোনো বাণিজ্য অংশীদার যদি অন্যায় বা স্বেচ্ছাচারীভাবে ইইউর পণ্যের ওপর শুল্ক বসায়, তাহলে ইইউর কড়া জবাব দেবে।

ট্রাম্প এর আগেও ইইউর ওপর শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়েছিলেন। গত মাসে চীনের ওপর শুল্ক আরোপের পর তিনি বলেন, ‘চীন আমাদের সঙ্গে অন্যায় করছে, কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের প্রতি খুবই খারাপ আচরণ করে। তাই তাদের ওপর শুল্ক আরোপ করা হবে। এটাই একমাত্র উপায়, যার মাধ্যমে ন্যায্যতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বাণিজ্যযুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধিকে ধীর করে দিতে পারে এবং পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। অবশ্য ট্রাম্পও স্বীকার করেন, তাঁর বাণিজ্য নীতির কারণে মার্কিনদের আর্থিক সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তবে তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষার জন্য এটি প্রয়োজন।
ট্রাম্প নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে বলেন, কিছুটা কষ্ট হবে? হ্যাঁ, হতে পারে (আর না-ও হতে পারে!) কিন্তু আমরা আমেরিকাকে আবার মহান করব এবং এই মূল্য দেওয়া সম্পূর্ণ সার্থক হবে। তিনি আরও বলেন, ‘কেউ যদি যুক্তরাষ্ট্রকে ভালোবাসে এবং এতে বিশ্বাস রাখে, সে অবশ্যই শুল্কের পক্ষে। ১৯১৩ সালে আয়কর ব্যবস্থা চালুর জন্য শুল্ক তুলে দেওয়া হয়েছিল, যা করা উচিত হয়নি। শুল্কের প্রতি মানুষের সমর্থন রয়েছে।’
ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে কানাডা ও মেক্সিকো তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারা পাল্টা শুল্ক আরোপসহ নানা ধরনের শর্ত আরোপের পরিকল্পনা করছে। অন্যদিকে চীন জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের শুল্কের বিরুদ্ধে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থাতে (ডব্লিউটিও) আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করবে।
তবে গতকাল রবিবার ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, শুল্ক আরোপের বিষয়ে তিনি কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে আগামীকাল (সোমবার) সকালে আলোচনায় বসবেন তিনি।
