যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার শপথের পরপরই পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মার্কো রুবিওর নিয়োগের বিষয়টি অনুমোদন দেয় মার্কিন সিনেট। রুবিও দায়িত্ব গ্রহণের পর সবার আগে বৈঠক করেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে। এছাড়া ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে যারা সামনের সারিতে জায়গা পেয়েছিলেন তাদের মধ্যে জয়শঙ্কর একজন। ওইসব বিষয় বিবেচনায় বিশ্লেষকেরা অনুমান করছেন ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের পররাষ্ট্রনীতিতে ভারত অন্য সবগুলো দেশের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে।

জানা যায়, নতুন ট্রাম্প প্রশাসন নয়া দিল্লিকে কতটা গুরুত্ব দেয় সেটি বোঝাতেই যেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালজ জয়শঙ্করের সঙ্গে তাদের প্রথম আন্তর্জাতিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন।
জয়শঙ্কর মার্কিন সরকারের আমন্ত্রণে ওয়াশিংটনে যান ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ও বৃহত্তম গণতন্ত্রের দুই দেশের শীর্ষ দুই কূটনীতিকের এই বৈঠক মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে অনুষ্ঠিত হয়। এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর কোয়াডের প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়।

মার্কো রুবিও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর আগে কোনো নতুন মার্কিন প্রশাসন সাধারণত প্রথম বিদেশি যোগাযোগ হিসেবে প্রতিবেশী কানাডা, মেক্সিকো বা ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে বৈঠক করত।
রুবিও শপথ নেওয়ার মাত্র এক ঘণ্টা পর জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। দুই নেতা ভারত-মার্কিন কৌশলগত অংশীদারত্বের পুরো পরিসর নিয়ে আলোচনা করেন। এক ঘণ্টার এই বৈঠকে ভারতের রাষ্ট্রদূত বিনয় মোহন কোয়াত্রা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর রুবিও ও জয়শঙ্কর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন।
বৈঠক শেষে জয়শঙ্কর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্সে লেখেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিওর সঙ্গে তাঁর দপ্তর গ্রহণের পর প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করে আনন্দিত। আমাদের বিস্তৃত দ্বিপক্ষীয় অংশীদারত্ব পর্যালোচনা করেছি। তিনি বরাবরই এর দৃঢ় সমর্থক। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নানা ইস্যু নিয়ে মতবিনিময় করেছি। আমাদের কৌশলগত সহযোগিতা আরও জোরদার করতে তার সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় আছি। এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে, ২ নেতা অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং এবং জাপানের ইওয়া তেকেশির সঙ্গে কোয়াড বৈঠকে যোগ দেন। এটি নতুন ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম কোয়াড বৈঠক। এই জোট ইন্দো-প্যাসিফিক তথা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং নিয়মভিত্তিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কাজ করে। ৪ দেশের এই শীর্ষ নেতাদের বৈঠক এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে। বৈঠক শেষে তারা সাংবাদিকদের সামনে আনুষ্ঠানিক ছবি তোলেন, কিন্তু কোনো বিবৃতি দেননি। এই বৈঠক শেষে জয়শঙ্কর এক্সে লেখেন, ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি ফলপ্রসূ কোয়াড মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছি। ধন্যবাদ জানাই রুবিও এবং অন্যান্য অংশগ্রহণকারী মন্ত্রীদের। ট্রাম্প প্রশাসনের শপথ গ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই বৈঠক হওয়া সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রনীতিতে এর গুরুত্ব তুলে ধরে। আমাদের আলোচনা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি এবং সহযোগিতা জোরদার করার ওপর কেন্দ্রীভূত ছিল। জয়শঙ্কর আরও লেখেন, ‘আমরা বৃহত্তর চিন্তা, গভীরতর কর্মসূচি এবং সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছি। আজকের বৈঠক স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, অনিশ্চিত বিশ্বে কোয়াড একটি ইতিবাচক শক্তি হিসেবে কাজ করবে।’
এদিকে এ বৈঠকের পর ড. জয়শঙ্কর হোয়াইট হাউসে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালজের সঙ্গে বৈঠক করেন। এটি মাইক ওয়ালজেরও প্রথম আন্তর্জাতিক বৈঠক। এ বিষয়ে জয়শঙ্কর বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালজের সঙ্গে আবার দেখা করার সুযোগ পেয়ে ভালো লাগল। আমরা বন্ধুত্ব জোরদার করে পারস্পরিক স্বার্থ, বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেছি।
