রবিবার , ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

শেরপুরে ২ দিনব্যাপী গারো সম্প্রদায়ের ‘ওয়ানগালা’ উৎসব পালিত

জুবাইদুল ইসলাম
নভেম্বর ২৪, ২০২৪ ৯:১৮ অপরাহ্ণ

শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের গারো সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক ও কৃষ্টির অন্যতম প্রধান উৎসব ‘ওয়ানগালা’। নতুন ফসল ঘরে উঠানোকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর পালন করা হয় এ উৎসব। ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ বছর ২৩ ও ২৪ নভেম্বর দুদিনব্যাপী ঝিনাইগাতী উপজেলার মরিয়মনগর সাধু জর্জের ধর্মপল্লীতে অনুষ্ঠিত হল ওয়ানগালা উৎসব। এতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য খৃষ্টভক্ত এবং গারাগানজিং, কতুচ, রুগা, মমিন, বাবিল, দোয়াল, মাতচি, মিগাম, চিবক, আচদক ও আরেং নামে ১২টি গোত্রের গারো সম্প্রদায়ের শত শত লোক অংশ নেন। গারো সম্প্রদায়ের কয়েকশত মানুষ দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করেন।

Shamol Bangla Ads

জানা যায়, গারোদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ওয়ানগালা। ‘ওয়ানা’ শব্দের অর্থ দেবদেবীর দানের দ্রব্যসামগ্রী আর ‘গালা’ অর্থ উৎসর্গ করা। দেবদেবীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও মনোবাসনার নানা নিবেদন হয় এ উৎসবে। একসময় গারো পাহাড়ি এলাকায় জুম চাষ হতো। তখন ওই জুম বা ধান ঘরে উঠানোর সময় গারোদের শস্য দেবতা ‘মিসি সালজং’কে উৎসর্গ করে এ ওয়ানগালা উৎসবের আয়োজন করা হতো। গারো সম্প্রদায় বিশ্বাস করে যে, তাদের শস্য দেবতা একসময় পাহাড়ি এলাকার গারোদের হাতে কিছু শস্য দিয়ে বলেছিল, ‘তোমরা এটা রোপণ কর তাতে তোমাদের আহারের সংস্থান হবে এবং তোমরা যে শস্য পাবে তা থেকে সামান্য কিছু শস্য আমার নামে উৎসর্গ করবে।’ এরপর থেকেই গারোরা তাদের শস্য দেবতাকে এই ফসল উৎসর্গ করে আসছিল। কিন্তু গারো পাহাড়ের অধিকাংশ গারো ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হওয়ায় এখন ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে একত্রে করে পালন করা হয় এ উৎসব। এখন নতুন ফসল কেটে যিশু খ্রিস্ট বা ঈশ্বরকে উৎসর্গ করে ওয়ানগালা পালন করেন তারা। সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলার গারো পাহাড়ের নৃ-গোষ্ঠীর বা আদিবাসীরা মনে করেন, ঈশ্বরের দয়ায় তারা ফসল উৎপাদন করে থাকে। তাই তারা প্রতি বছর আয়োজন করে থাকে নবান্ন বা গারোদের ভাষায় ওয়ানগালা উৎসব।

ঝিনাইগাতী উপজেলার মরিয়মনগর ধর্মপল্লীতে ১৯৮৫ সাল থেকে ওয়ানগালা উৎসব পালন করা শুরু হয়। প্রতিবছর একদিন এ উৎসব পালিত হলেও এবার দুদিনব্যাপী মরিয়মনগর ধর্মপল্লিতে ধুমধামে আয়োজন করা হয় ওয়ানগালা উৎসব। মরিয়মনগর সাধু জর্জের ধর্মপল্লীর আওতায় জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতবাড়ী উপজেলা এবং পাশ্ববর্তী জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার গারো সমাজের ৪৭টি গ্রাম রয়েছে। ওইসব গ্রামের প্রায় ২২ হাজার খৃষ্টান ধর্মাবলম্বী গারো সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস। এসব এলাকা থেকে অসংখ্য খৃষ্টভক্ত এবং গারাগানজিং, কতুচ, রুগা, মমিন, বাবিল, দোয়াল, মাতচি, মিগাম, চিবক, আচদক ও আরেং নামে ১২টি গোত্রের গারো সম্প্রদায়ের শত শত লোক ওয়ানগালা উৎসবে যুক্ত হন।

Shamol Bangla Ads

মূলত সকাল ৯টায় ক্রুশচত্বরে বাণী পাঠ, খামালকে খুতুব ও থক্কা প্রদানের মাধ্যমে শুরু হয় এ উৎসব। এরপর প্রার্থনা, জনগণকে থক্কা দেওয়া, নতুন ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎসর্গ, পবিত্র খ্রিস্টযাগ, দান সংগ্রহ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাচ গান ও খাওয়া-দাওয়া, খেলাধুলা ও র‌্যাফেল ড্রসহ উৎসবে মেতে ওঠে নৃ-গোষ্ঠীর নারী, পুরুষ ও শিশুরা। এখানে অনেকেই তাদের ফসলের কিছু অংশ প্রভুর নামে উৎসর্গ করেন, আবার কেউ প্রভুর কাছে দয়া চান।

উৎসবে আসা শিক্ষার্থী সুইট চিচিং বলেন, ইশ্বর আমাদের নতুন ফসল দেয়। এ উৎসবে আমরা খুব আনন্দ করি। নতুন ফসল প্রভুর কাছে উৎসর্গ করি। নাচ-গানের মধ্য দিয়ে আনন্দ করি। আমাদেরকে প্রভু আশীর্বাদ করবেন, পরের বছরও আমরা ভালো ফসল পাব। সমিকা ম্রং বলেন, আমরা আসলে নতুন ফসল প্রভুকে উৎসর্গ করার জন্যই এই উৎসব পালন করে থাকি। নতুন ফসল হওয়ার পর আমরা প্রভুকে আগে উৎসর্গ করে থাকি। তারপর আমরা খাই। এইটা নবান্ন উৎসবের মতোই। এ উৎসবের মাধ্যমে খ্রিস্টকে আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই। মরিয়মনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক অঞ্জন আরেং বলেন, ওয়ানগালা উৎসব আয়োজনের মূল লক্ষ্য হলো লুপ্তপ্রায় গারো জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির চর্চায় উৎসাহিত করা এবং ঐতিহ্যবাহী এই সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্ম ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর নিকট তুলে ধরা। যাতে আমাদের নতুন প্রজন্ম এই সংস্কৃতি চর্চা ও সংরক্ষণ করতে পারে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অসীম ম্রং জানান, গারো জনগোষ্ঠীর আধ্যাত্মিক ও মূল্যবোধকে আরও সমৃদ্ধ এবং ঐতিহ্যবাহী গারো কৃষ্টি ও সংস্কৃতি চর্চায় নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করা হয় এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। যাতে বর্তমান প্রজন্ম এখান থেকে বুঝতে ও শিখতে পারে। ওয়ানগালা উৎসবটি গারো সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবও বটে।

ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশের বিসপ পনেন পল কুবি বলেন, আমাদের মান্দি সমাজে আদি পিতামাতা যারা ছিলেন সাংসারিক ধর্ম পালন করতেন। তারা আনন্দে ওয়ানগালা উৎসব পালন করতেন। এ ওয়ানগালা হলো আমাদের উৎসব। যেখানে জমির নতুন ফসল ঈশ্বরকে দেওয়া বা কৃতজ্ঞতা জানানো। এই দিবসে আমরা খ্রিস্ট রাজাকে সম্মান ও বিশ্বাস প্রদর্শন করে থাকি। আমরা যখন এই উৎসব পালন করি তখন চিন্তা করি কীভাবে আমরা আগামী বছর যিশুকে সাথে নিয়ে পথ চলতে পারি। প্রাচীনকাল থেকে গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্ম ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে তুলে ধরাই এর মূল লক্ষ্য।

এদিকে উৎসবকে ঘিরে ধর্মপল্লির পাশে গারোদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও শিশুদের নানা রকমের খেলনা নিয়ে মেলা বসে। ফলে এখানে গারো শিশু ও যুবক-যুবতিরা বিভিন্ন পসরার দোকানে তাদের পছন্দের জিনিস কিনতে ভিড় জমান। ওয়ানগালা উৎসবে জেলা ও জেলার বাইরে থেকে আসা গারো সম্প্রদায়ের লোকজন এবং তাদের আত্মীয়রা একে অপরের সঙ্গে দীর্ঘদিন পর দেখা সাক্ষাত হওয়ায় তারা অনেকটা বড়দিনের উৎসবের মতো আনন্দ উপভোগ করেন। রাতব্যাপী চলে গান-বাজনা, আনন্দ-উৎসব।

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

error: কপি হবে না!