প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ পৃথিবীকে জলবায়ু বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার জন্য ‘শূন্য বর্জ্য ও শূন্য কার্বন’-এর ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন জীবনধারা গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন, যা একটি নতুন পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে তিনটি শূন্যভিত্তিক তার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন উপস্থাপন করে। আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ-২৯-এর ওয়ার্ল্ড লিডারস ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তৃতাকালে তিনি বলেছেন, ‘বেঁচে থাকার জন্য আমাদের আরেকটি সংস্কৃতি গঠন করতে হবে। একটি ভিন্ন জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে আরেকটি পাল্টা সংস্কৃতি গড়তে হবে। এটি হবে শূন্য বর্জ্যের ওপর ভিত্তি করে। এ সংস্কৃতি নিত্যপণ্যের ব্যবহারকে সীমিত করবে, কোনো বর্জ্য অবশিষ্ট রাখবে না।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই জীবনযাত্রাও হবে শূন্য কার্বনের ওপর ভিত্তি করে যেখানে কোনো জীবাশ্ম জ্বালানি থাকবে না, শুধু পুনঃনবায়নযোগ্য শক্তি থাকবে। এতে এমন একটি অর্থনীতি হবে, যা প্রাথমিকভাবে সামাজিক ব্যবসার মতো ব্যক্তিগত পর্যায়ে শূন্য মুনাফার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হবে।
সামাজিক ব্যবসাকে সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যা সমাধানের জন্য একটি নন-ডিভিডেন্ড ব্যবসা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে তিনি বলেন, সামাজিক ব্যবসার একটি বিশাল অংশ পরিবেশ ও মানবজাতির সুরক্ষায় মনোযোগ দেবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের জীবন কেবল সুরক্ষিতই হবে না, গুণগতভাবে উন্নত হবে। এটি যুবকদের জন্য উদ্যোক্তা হওয়ার পথ সহজতর করবে। উদ্যোক্তা হওয়ার নতুন শিক্ষার মাধ্যমে তরুণরা প্রস্তুত হবে। চাকরিপ্রার্থী তৈরির শিক্ষা উদ্যোক্তাকেন্দ্রিক শিক্ষা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে।’
পরিবেশের সুরক্ষার জন্য একটি নতুন জীবনধারার প্রয়োজন উল্লেখ করে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. ইউনূস বলেন, নতুন জীবনধারা চাপিয়ে দেওয়া হবে না, এটি হবে পছন্দ বেছে নেওয়া। তিনি বলেন, তরুণরা সেই জীবনধারাকে পছন্দ হিসেবে বেছে নেবে। প্রতিটি যুবক তিন শূন্যভিত্তিক ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে উঠবে। এগুলো হচ্ছে শূন্য নেট কার্বন নির্গমন, শুধু সামাজিক ব্যবসা গড়ে তোলার মাধ্যমে শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ ও নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে পরিণত করার মাধ্যমে শূন্য বেকারত্ব। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষ তিন শূন্যভিত্তিক ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে উঠবে এবং সারা জীবন তিন শূন্যভিত্তিক ব্যক্তি হিসেবে থাকবে। এটি নতুন সভ্যতা গড়ে তুলবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা করা যেতে পারে আমাদের যা করতে হবে তা হলো এ গ্রহের নিরাপত্তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি নতুন জীবনধারা গ্রহণ করা, যেখানে সবাই বসবাস করে। আজকের তরুণ প্রজন্ম বাকিটা করবে। তারা তাদের আমাদের গ্রহকে ভালোবাসে।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমি আশা করি আপনারা এই স্বপ্ন দেখায় আমার সঙ্গে যোগ দেবেন। আমরা যদি একসঙ্গে স্বপ্ন দেখি তবে তা সম্ভব হবে।’ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু সংকট তীব্রতর হচ্ছে এবং সে কারণে মানব সভ্যতা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। মানুষ আত্মবিধ্বংসী মূল্যবোধের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আত্মরক্ষাত্মক ও আত্মশক্তিবর্ধক একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপনের জন্য আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক, আর্থিক ও যুবশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। আমরা, এই গ্রহের মানব বাসিন্দারা এই গ্রহের ধ্বংসের কারণ।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে এটি করছে এবং তারা এমন একটি জীবনধারা বেছে নিয়েছে, যা পরিবেশের বিরুদ্ধে কাজ করে। তারা এটিকে একটি অর্থনৈতিক কাঠামো দিয়ে ন্যায্যতা দেয়, যা এই গ্রহ ব্যবস্থার মতো প্রাকৃতিক হিসেবে বিবেচিত হয়।
তিনি আরো বলেন, ‘এই অর্থনৈতিক কাঠামো সীমাহীন খরচের ওপর ভিত্তি করে চলছে। আপনি যত বেশি ব্যবহার করবেন তত বেশি প্রবৃদ্ধি পাবেন। যত বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করবেন, তত বেশি অর্থ উপার্জন করবেন। সর্বাধিক মুনাফা অর্জনকে সিস্টেমের সব কিছুকে আমাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ভূমিকা পালনের শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।’