বুধবার , ১৩ নভেম্বর ২০২৪ | ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  1. ENGLISH
  2. অনিয়ম-দুর্নীতি
  3. আইন-আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আমাদের ব্লগ
  6. ইতিহাস ও ঐতিহ্য
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন-অগ্রগতি
  9. এক্সক্লুসিভ
  10. কৃষি ও কৃষক
  11. ক্রাইম
  12. খেলাধুলা
  13. খেলার খবর
  14. চাকরির খবর
  15. জাতীয় সংবাদ

জন্মদিনে শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ

শ্যামলবাংলা ডেস্ক
নভেম্বর ১৩, ২০২৪ ২:১১ অপরাহ্ণ

গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে নানা আয়োজনে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে তাঁর ৭৬তম জন্মবার্ষিকীতে স্মরণ করেছেন স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা। প্রতিবারের‌ মতো এবারও হুমায়ূন আহমেদের পরিবার, তাঁর ভক্ত, কবি–লেখক ও নাট্যজনেরা ফুল হাতে শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করেন নুহাশপল্লীর লিচুতলায়। নন্দিত লেখকের প্রিয় চরিত্র হলুদ পাঞ্জাবিতে হিমু এবং নীল শাড়িতে‌ রূপা সেজে আসেন ভক্ত ও পাঠকেরা। তাঁরা লেখকের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কথা জানান। ১৩ নভেম্বর বুধবার সকালে লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, দুই পুত্র নিনিত হুমায়ূন ও নিষাদ হুমায়ূন কবর জিয়ারত করেন। এ সময় হুমায়ূন আহমেদের শুভানুধ্যায়ী ও ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন। লেখকের আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা করা হয়। সমাধিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের পর কাটা হয় কেক।

Shamol Bangla Ads

এ সময় হুমায়ূন আহমেদের লেখালেখি ও স্বপ্ন নিয়ে কথা বলেন তাঁর স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। তিনি বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের সবকিছু সযত্নে রয়েছে। আমরা এখনো জাদুঘরটা শুরু করতে পারিনি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে আর্থিক সমস্যা। নুহাশ পল্লী থেকে যে আয় হয়, সেই আয় দিয়ে নুহাশ পল্লী পরিচালনা করা হয়, পাশাপাশি তাঁর স্কুলের কাজেও ব্যবহৃত হয়। আমরা আশা করছি, আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যেই জাদুঘরের কাজ শুরু করব এবং শেষ করব।’ হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে বিশেষ কোনো দিনে আলাদা কোনো ভাবনা হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বিশেষ দিন ছাড়া সাধারণ দিনগুলোতেই তাঁকে বেশি অনুভব করি।’

এদিকে শোভাযাত্রা, কেক কাটা, দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে নেত্রকোনায় হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উদ্‌যাপিত হয়েছে। ‘হিমু পাঠক আড্ডা’ নামের একটি সংগঠনের আয়োজনে আজ বেলা ১১টার দিকে শহরের সাতপাই নদীর পাড় এলাকা থেকে শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়কগুলো ঘুরে মোক্তারপাড়া মাঠে মুক্তমঞ্চে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলপনা বেগমের পরিচালনায় লেখকের জীবন ও কর্ম নিয়ে বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস, জেলা পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ, পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) সাহেব আলী পাঠান, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মতীন্দ্র সরকার, প্রাবন্ধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী, নেত্রকোনা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কবি সরোজ মোস্তফা, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) জেলা কমিটির সভাপতি ছড়াকার শ্যামলেন্দু পাল, চন্দ্রনাথ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ার হাসান, জেলা প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব ম. কিবরিয়া চৌধুরী, কবি তানভীর জাহান চৌধুরী, কবি মৃণাল কান্তি চক্রবর্তী প্রমুখ।

Shamol Bangla Ads

হুমায়ূন আহমেদের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে তাঁর নানার বাড়িতে। তাঁর পৈতৃক বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে। তাঁর বাবা ফয়েজুর রহমান ও মা আয়েশা ফয়েজ। ২০১২ সালে ১৯ জুলাই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে তিনি নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে মারা যান।

হুমায়ূন আহমেদ নামটি আজ আর শুধু একজন লেখকের পরিচয় নয়, এটি হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি ব্র্যান্ড। তার উপন্যাস, কাহিনী, চরিত্র এবং বিশেষ করে তার অমর সৃষ্টি ‘হিমু’ ও ‘মিসির আলি’—এই দুটি চরিত্র বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছে। হুমায়ূন তার সাহিত্যিক জীবন শুরু করেন ১৯৭০ সালে, প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকের’ মাধ্যমে। তবে তিনি প্রকৃত জনপ্রিয়তা পান ‘মধ্যাহ্ন’ (১৯৭৭) উপন্যাসের মাধ্যমে।

লেখালেখির পাশাপাশি হুমায়ূন আহমেদ নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণেও অনন্য অবদান রেখেছেন। তার পরিচালনায় ‘শুভ সূচনা’ (১৯৮৬) এবং ‘আগুনের পরশমণি’ (১৯৯৪) চলচ্চিত্র দুটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার নাটক যেমন টেলিভিশন দর্শকদের মাঝে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, তেমনি তার চলচ্চিত্রও শিল্পীসমাজে প্রশংসিত হয়েছে।

সত্তর দশকের শেষভাগে থেকে শুরু করে মৃত্যু অবধি তিনি ছিলেন বাংলা গল্প-উপন্যাসের অপ্রতিদ্বন্দ্বী কারিগর। এই কালপর্বে তার গল্প-উপন্যাসের জনপ্রিয়তা ছিল তুলনাহীন। তার সৃষ্ট হিমু ও মিসির আলি চরিত্রগুলো বাংলাদেশের যুবকশ্রেণিকে গভীরভাবে উদ্বেলিত করেছে। হুমায়ূনের অন্যতম উপন্যাস হলো নন্দিত নরকে, মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, শঙ্খনীল কারাগার, মাতাল হাওয়া ইত্যাদি।

হুমায়ূন আহমেদের লেখনীর মধ্যে তার জীবনের অসাধারণ অনুভূতির প্রতিফলন ঘটেছিল। তার মতো সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব যেন ছিল এক নিত্য নতুন আবিষ্কারের খনি। তিনি যে সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন, তাতে যেন জীবনের সমস্ত জটিলতা, সুখ-দুঃখ, মানবিক সম্পর্ক, এবং আদর্শ—সবকিছুই ছিল অমৃতরসের মতো। বিশেষ করে তার গল্পের মধ্যে কমেডি, ট্র্যাজেডি এবং রোমান্স একসাথে মিলেমিশে এমন এক জাদু সৃষ্টি করেছিল, যা পাঠক-দর্শকদের মন ছুঁয়ে যেত।
হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য স্রোত যেমন আজও চলছে, তেমনি তার দর্শন, তার জীবনদর্শন, তার ভাবনা, এবং চিন্তা-চেতনা আজও প্রেরণা হিসেবে আমাদের সামনে আজও যেন নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করছে।

সর্বশেষ - ব্রেকিং নিউজ

error: কপি হবে না!