ফজলে এলাহী মাকাম, জামালপুর : পূর্বের নাম সন্ন্যাসীনগর থেকে সিংহজানীর পর ৭টি উপজেলা নিয়ে জামালপুর জেলা নামকরণ করা হয়। স্বাধীনতার পর থেকে নানা কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন ও উন্নয়ন কর্মকান্ডের দিক দিয়ে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছিল এ জেলা। বর্তমানে নতুন সরকার ও বৈষম্যবিরোধী অগ্রযাত্রায় আধুনিক জামালপুর আর পিছিয়ে পড়া জামালপুরের অবস্থানে নেই। তারই আলোকে জামালপুর জেলা স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশনের দিক থেকে আধুনিক থেকে অত্যাধুনিক জামালপুর গড়তে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১২ টি প্রকল্পে ৩৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের কাজ দৃশ্যমান হওয়ায় অনেকটাই বদলে গিয়েছে জামালপুরের চিত্র। এতে প্রান্তিক পর্যায়ে মানুষের দুর্ভোগ কমে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা অভ্যাসের পাশাপাশি আধুনিকতার ছোঁয়ায় উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে এখন এই জনপদের মানুষ।
জানা যায়, ওইসব প্রকল্প বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি জামালপুর জেলা জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সুলতান মাহমুদ। তিনি করোনা মহামারীর সময় ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর জামালপুর জেলায় জেলা জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী যোগদান করেন। তার যোগদানের পর ২০২০-২১ অর্থ বছর থেকে চলমান অর্থ বছর পর্যন্ত সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পে জামালপুর জেলায় সাবমারসিবল পাম্পযুক্ত গভীর নলকূপ ১৫৬০ টি ও অগভীর নলকূপ ৯৬২ টি এবং কমিউনিটি বেউজড ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম ৩২৯ টিতে ৮৩ কোটি ৪৪ লক্ষ ৭৮ হাজার, মুজিব শতবর্ষে ভূমিহীন, গৃহহীনদের জন্য নির্মিতব্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের পানি সরবরাহ প্রকল্পের কয়েটি উপজেলায় ৬৩৯ টি অগভীর নলকূপে ৩ কোটি ৩৫ লক্ষ ২৪ হাজার ,জিপিএস উন্নয়ন প্রকল্পের ১০৭ টি ওয়াশ ব্লক নির্মাণে ১৭ কোটি ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার ও ১৬১ টি পানির উৎস স্থাপনে ২ কোটি ৯৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, এনএনসিপিএস উন্নয়ন প্রকল্পের ৯২ টি ওয়াশ ব্লক নির্মাণ ১২ কোটি ৬৩ লাখ ৫৪ হাজার ও ১৬১ টি পানির উৎস স্থাপন এ ২ কোটি ৯৭ লক্ষ ৯৫ হাজার, পিইডিপি ৪ উনন্নয়ন প্রকল্পের ৪৮৪ টি ওয়াশ ব্লকে ৮৪ কোটি ৭০ লাখ ও ৮০০ টি পানির উৎস স্থাপনে ১৫ কোটি ৬৮ লক্ষ ,রাজস্ব বাজেটের আওতায় পাম্পযুক্ত অগভীর নলকূপে ৪৭ হাজার, পানির গুনগত মান পরীক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের ১ টি ল্যাবরেটরী ভবন নির্মাণ কাজে ৫৩ লাখ ৭৮ হাজার, মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি শীর্ষক প্রকল্পের ১৬ টি হ্যান্ড ওয়াশিং স্টেশন ও ৩৬ টি স্যানিটেশন হাইজিন ফ্যাসিলিটিস এবং ২৮ টি সাবমারসিবলে ১০ কোটি ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার , ৯৬টি কমিউনিটি বেইজ ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম ১৬ কোটি ৭১ লাখ ৫৯ হাজার , ৩১ টি স্মল পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই স্কিমে ৫ কোটি ৫১ লাখ ,সদর, সরিষাবাড়ী, মাদারগঞ্জ ও মেলান্দহ উপজেলায় ৪টি লার্জ পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই স্কিমে ২৪ কোটি ৮৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ শেষ সফলভাবে শেষ করা হয়।
জামালপুর শহরের পালপাড়া এলাকার কার্তিক সাহা জানান, জেলা জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সুলতান মাহমুদের নির্দেশনায় আমি সাবমার্স পেয়েছি। যা আমার পরিবারের পানির চাহিদা মিটিয়ে এলাকার মানুষদের বিশুদ্ধ পানি সরবরারহ করে থাকি। শুধু কার্তিক সাহা নয়, তার মত মুকন্দবাড়ির শাপলা, ডাকপাড়ার সেকান্দর, শরিফপুরের আলি আহমেদ, নরুন্দির মোঃ রফিকসহ সকলেই বিশুদ্ধ পানির সরবরাহের সুবিধা পেয়েছে। এদিকে রাঘুনাথপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী হায়দার জানান তার বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওয়াশব্লক স্থাপন করার মাধ্যমে বিদ্যালয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও ল্যাটটিন ও টয়লেট ব্যবহারে সচেষ্ট হয়ে উঠেছে শিশু শিক্ষার্থীরা যা জেলা জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও তদারকিতেই হয়েছে বলে জানান তিনি। সেইসাথে তিনি জেলার আরও উন্নয়ন কার্যবলী বাস্তবায়নের লক্ষে কাজ করে যাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এছাড়াও ৩২ টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন প্রকল্পে ২ টি উৎপাদক নলকূপ, ৪টি এক্সপ্লেরেটরী ড্রিলিং পরীক্ষামূলক নলকূপ ,২টি পাম্প হাউজ ও ২ টি সাবমারসিবল পাম্প খননে ৮৫ লাখ, ৩২ কি মি পাইপ লাইন স্থাপন কাজে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৯২ হাজার, ১.৫ কি মি আর সিসি ড্রেইন নির্মাণে ১ কোটি ৪ লাখ ৪৮ হাজার, ১টি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট এবং ট্রান্সমিশন পাইপ লাইন স্থাপন কাজে ৫ কোটি ৯১ লাখ ১৪ হাজার, ১ টি ফিক্যাল স্লাজ এবং সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট নির্মাণ কাজে ৭ কোটি চার লাখ ৮৫ হাজার, ৪টি পাবলিক টয়লেট ও ১২ টি কমিউনিটি টয়লেট এবং ২৫ টি কমিউনিটি বিন স্থাপনে ৬৮ লাখ ৯৩ হাজার টাকা ব্যয়ে উন্নয়ন করা হয়েছে যা এখন দৃশ্যমান হয়েছে।
উন্নয়ন চিত্রের অংশ হিসেবে জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্পে ৪ টি পরীক্ষামূলক নলকূপ স্থাপনে ৩ লাখ ৮৩ হাজার, ২ টি উৎপাদক নলকূপ ও ৪ টি পরীক্ষামূলক নলকূপ এবং ইলেক্ট্রোমেকানিক্যালসহ পাম্প হাউজ নির্মাণে ১ কোটি ৩৪ লাখ, ৩০০০ ঘনমিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ভূ-গর্ভস্থ জলাধার নির্মাণে ৫ কোটি ৬৫ লাখ ৫ হাজার, ৮ টি পরীক্ষামূলক নলকুপ, ৪ টি উৎপাদক নলকূপ, ৪ টি পাম্প হাউজ, ৪ টি বাউন্ডারী ওয়াল, ৪ টি সাবমারসিবল পাম্পসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি কাজে ২ কোটি ৫৫ লাখ ৪৮ হাজার, ২.৪ কিমি ট্রান্সমিশন পাইপ লাইন স্থাপনে ১ কোটি ৩২ লাখ ৫ হাজার, ৬.২ কিমি সারফেস ড্রেন নির্মাণ কাজে ১০ কোটি ৯০ লাখ ১৮ হাজার, ১ টি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ কাজে ২১ কোটি ২৮ লাখ ৫২ হাজার, ৪০০ মি সারফেস ড্রেন ওয়াকওয়ে নির্মাণে ১ কোটি ১১ লাখ টাকার কাজও চলমান রয়েছে। অন্যদিকে ৩০ টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও স্যাবিটেশন প্রকল্পে ইসলামপুরে ড্রেণ ও নলকূপ স্থাপনে ৯ কোটি ৭৫ লাখ ২৮ হাজার, ৩ টি পরীক্ষামূলক নলকুপ, উৎপাদক নলকূপ এবং ৩ টি পাম্প হাউজ নির্মাণে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ৭ হাজার, ইঞ্জিনিয়ার অফিসে ২১ লাখ ৪১ হাজার, ৩ টি পাবলিক টয়লেট, ১ টি ফিক্যাল স্ল্যাজ ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট ২ কোটি ২৭ লাখ ২২ হাজার, ৯৮২ টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণে ৬ কোটি ৯০ লাখ ৩৪ হাজার, ইসলামপুর পৌরসভা প্ল্যান্টে ২ কোটি ১০ লাখ ৩১ হাজার টাকার কাজ ইতোমধ্যেই সমাপ্ত করা হয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশের ১০ টি অগ্রাধিকার ভিত্তিক শহরে সমন্বিত স্যানিটেশন ও হাইজিন প্রকল্পে ৬ টি পানির উৎস ও ১৫০ টি হাউজ হোল্ড কানেকশন এবং ২৪ টি স্ট্রিট হাইড্রেন্ট এ ২৩ লাখ ৭৯ হাজার, ৫ টি কমিউনিটি ল্যাট্রিনের ১ কোটি ৪০ লাখ টাকার কাজ চলমান রয়েছে ৷
এদিকে জামালপুর জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এডমিন মো: জাহাঙ্গীর কবীর জানান, সুলতান স্যারের যোগদানের পর ১২ টি প্রকল্পে ৩৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন অধিকাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৷ কয়েকটি প্যাকেজের কাজ ৫০% হয়ে আছে সেগুলো সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে এ সকল প্রকল্প বাস্তবায়নে জামালপুর জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সুলতান মাহমুদ স্যারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় জামালপুরে সকল উন্নয়নমূলক কাজ যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে জামালপুর জেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সুলতান মাহমুদ জানান, পিছিয়ে পড়া জামালপুরকে এগিয়ে নিতে একজন প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা হিসেবে সকল কাজ নিজে সরেজমিনে গিয়ে তদারকির মাধ্যমে নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছি। উন্নয়ন প্রকল্পের যে কাজগুলো এখনো শেষ হয়নি, সেগুলো বিধি মোতাবেক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ঠিকাদারদের তদারকি ও কাজের বিল প্রদানে সচেষ্ট রয়েছে। মানসম্মতভাবে ঠিকাদারদের কাজ শেষ হওয়ার পর কাজ বুঝে নিয়ে বিল প্রদান করা হবে বলেও জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, জেলার জন্য সামনে আরও কিছু প্রকল্পের কাজ আসবে । সরকারী বিধিমোতাবেক সেই কাজগুলোকে যোগ্যতাসম্পন্ন ঠিকাদারদের প্রদান করে যাতে বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের ও বৈষম্যহীন নতুন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে যাতে স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশনে এগিয়ে থাকে সেই আলোকেই কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।