সেই একই প্রতিপক্ষ। একই মঞ্চ। ফলও অভিন্ন। মধুর-মদির জয়। দুই বছর আগের দশরথ রঙ্গশালা বুধবার রাতে বাংলাদেশের তেজস্বিনী তরুণীদের আবারও সঞ্চিত করল শিরোপা-সুধায়। সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি রইল সাবিনাদের কাছেই। কাঠমান্ডু থেকে কাল দেশে ফেরা লাল-সবুজের ফুটবলকন্যাদের বরণ করে নেওয়া হলো দুই হাত সম্প্রসারিত করে। আবারও সেই ছাদখোলা বাসে নীল আকাশের নিচে মনিকা, মারিয়া, ঋতুপর্ণারা বিমানবন্দর থেকে মতিঝিলে এলেন বাফুফে ভবনে। বিমানবন্দরে আবেগরুদ্ধ অধিনায়ক সাবিনা খাতুন এই শিখরস্পর্শী সাফল্য পেতে তাদের সমর্থন জানানোর জন্য ধন্যবাদ জানান দেশবাসীকে। ছাদখোলা বাসে বিজয়িনীদের হাতে ছিল লাল-সবুজ পতাকা। জনদুর্ভোগ এড়াতে সাফজয়ীদের বহন করা বাস এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠে। বিমানবন্দরে মেয়েদের গলায় পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল গাঁদা ফুলের মালা।
বাফুফে ভবনে তাদের বরণ করে নেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাফজয়ী নারী ফুটবল দলকে সংবর্ধনা দেবেন। এ সময় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক কোটি টাকা অর্থ পুরস্কারের ডামি চেক অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের হাতে তুলে দেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মেয়েদের এক কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা নারী দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন শনিবার। আমরা নারী ফুটবলের উন্নয়নের সঙ্গী হিসাবে রয়েছি।’ গত পরশু রাতে সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।
দুপুর আড়াইটায় কাঠমান্ডু থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর সাফজয়ী সাবিনা-সানজিদাদের নিয়ে চলল উৎসব। বিমানবন্দরে তাদের বরণ করে নেওয়ার পর ছাদখোলা বাসে নিয়ে যাওয়া হয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনে। সেখানে তাদের দেওয়া হয় সংবর্ধনা।
বিকাল ৪টার দিকে এভারেস্টজয়ী মেয়েরা ছাদখোলা বাসে করে বিমানবন্দরের টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার পর ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ; চ্যাম্পিয়ন, চ্যাম্পিয়ন’ স্লোগান দিয়ে তাদের স্বাগত জানায় উচ্ছ্বসিত জনতা। বিজয়ী মেয়েদের স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরের সামনের সড়কে জড়ো হয়েছিলেন কয়েক’শ মানুষ। হাত নেড়ে তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। সমর্থকরা লাল আর সবুজ রং ছুড়ে আনন্দ করেন। নিচ থেকে ছুড়ে দেন ফুল। ছাদখোলা বাস থেকে ঋতুপর্ণা, সাবিনা, মনিকারাও পতাকা নেড়ে সাড়া দেন। বিমানবন্দরে তাদের বরণ করে নিতে এসেছিল ‘আল্ট্রাস’ নামের একটি সংগঠন। ফুটবল অন্তঃপ্রাণ কয়েকজন তরুণের সংগঠন এটি। বিমানবন্দরের সামনের সড়কে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন দলটির কর্মী-সমর্থকরা। দুই বছর আগে গোলাম রব্বানী ছোটনের হাত ধরে কাঠমান্ডুর দশরথেই নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথম এই ট্রফির স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ।
পালাবদলের ছোঁয়ায় এবার ছাদখোলা বাসে ছিল শুধুই চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের ছবি। বাসের পোস্টারে চ্যাম্পিয়ন ট্রফির সঙ্গে অফিশিয়াল ফটোসেশনের সবাইকে রাখা হয়। একপাশে এ বছর টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসাবে গোল্ডেন বল জেতা ঋতুপর্ণা চাকমার ট্রফি গ্রহণের ছবি। ঋতুপর্ণা চাকমার ছবির ওপর স্পন্সরদের লোগো। নারী ফুটবলে দীর্ঘদিনের স্পন্সর ঢাকা ব্যাংক। সেই ২০১৬ সাল থেকে নারী ফুটবলের সঙ্গে এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি রয়েছে। উৎসবের এ উপলক্ষ্যে বাফুফে স্মরণ রেখেছে তাদেরও। বিকাল সাড়ে ৪টায় বিমানবন্দর থেকে চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের বাসটি বের হয়ে যায়। এরপর তাদের নিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠে ছাদখোলা বাসটি। এফডিসি মোড়ে নেমে সাতরাস্তার মোড় হয়ে মগবাজার ফ্লাইওভার দিয়ে কাকরাইল হয়ে যায় পল্টনে। এরপর নটর ডেম কলেজের সামনে দিয়ে শাপলা চত্বর পার হয়ে সাবিনা-ঋতুপর্ণারা সন্ধ্যায় পৌঁছান বাফুফে ভবনে।